E-Paper

কৃষিজমি থেকে মাটি কাটা চলছেই, চিঠি মুখ্যমন্ত্রীকে

জেলার উপ-ভূমি আধিকারিক ভাস্কর মজুমদারের বক্তব্য, এখন জেলা জুড়ে রাজ্য সরকার এবং জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের তরফে বড় বড় কাজ হচ্ছে। সেই সব কাজে মাটির ব্যবহার হচ্ছে।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়  , দীপঙ্কর দে

শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৩ ০৬:৩১
An image of Tractor

পুকুর থেকে মাটি কাটা চলছে। — নিজস্ব চিত্র।

হুগলির চণ্ডীতলার দু’টি ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকায় কৃষিজমি থেকে বেআইনি ভাবে মাটি কাটার অভিযোগ নতুন নয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিষয়টি নিয়ে পুলিশকে জানিয়েও কাজ হয়নি। পুলিশ-প্রশাসনে ভরসা হারিয়ে গ্রামবাসীদের একাংশ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে লিখিত ভাবে অভিযোগ জানিয়েছেন। শাসক দলের একাংশ এতে জড়িত বলে তাঁদের সন্দেহ।

জেলার উপ-ভূমি আধিকারিক ভাস্কর মজুমদারের বক্তব্য, এখন জেলা জুড়ে রাজ্য সরকার এবং জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের তরফে বড় বড় কাজ হচ্ছে। সেই সব কাজে মাটির ব্যবহার হচ্ছে। সরাসরি জেলা থেকে বিধি অনুযায়ী মাটি কাটার অনুমতি দেওয়া হয়। বিনা অনুমতিতে কেউ মাটি কাটতে পারবে না। গাড়ির সঙ্গে চালান থাকার কথা। সে রকম যে কোনও গাড়ি পুলিশ দেখে ব্যবস্থা নিতে পারে।

ওই ভূমিকর্তা বলেন, ‘‘এর পরেও অভিযোগ যখন উঠছে, আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখব।’’ জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ, তৃণমূলের মনোজ চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘বিষয়টি আমাদের কানে এসেছে। তবে প্রশাসন এখন কঠোর। বেআইনি ভাবে গাড়িতে মাটি বহন করা হচ্ছে দেখলেই পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলা আছে।’’ পুলিশের দাবি, মাটির গাড়ির উপরে নজর রাখা হয়। নিয়ম বহির্ভূত কিছু দেখলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

গ্রামবাসীরা জানান, চণ্ডীতলা জুড়ে দিনভর মাটির ডাম্পার আর ট্রাক্টর চলে। মাটিবোঝাই করে ওই সব গাড়িকে অহল্যাবাই রোডের পাশে ছোট পিচরাস্তায় সার দিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। সন্ধ্যা হলেই অহল্যাবাই রোড ধরে গন্তব্যে যেতে থাকে গাড়িগুলি। গ্রামবাসী টুঁ শব্দ করতে পারেন না।

চণ্ডীতলা-১ এবং ২ ব্লকের কুমিরমোড়া, ভগবতীপুর, আঁইয়া, কৃষ্ণরামপুর বাদেও পাশের জাঙ্গিপাড়ার দিলাকাশ, ফুরফুরা পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বেআইনি মাটির করবার চলছে বলে অভিযোগ। গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, যন্ত্র দিয়ে কৃষিজমির মাটি কাটা হয়। ডাম্পার, ট্রাক্টর বোঝাই করে সেই মাটি চলে যাচ্ছে তারকেশ্বর, ডানকুনি এবং আরামবাগ মহকুমার বিভিন্ন প্রান্তে। এর জেরে কৃষিজমির পরিমাণ দিন দিন কমছে। সরাক্ষণ ভারী গাড়ির চাপে গ্রামের রাস্তাঘাট ভেঙে তছনছ হচ্ছে। ঘটছে দুর্ঘটনাও।

কৃষ্ণরামপুরের এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘মাটি-মাফিয়ারা এতটাই বেপরোয়া, দিন কয়েক আগে অল্পবয়সি এক ইউটিউবারের মোটরবাইক আটকে শাসায়। ব্যক্তিগত কাজে বেরিয়েছেন জানালে তাঁকে সর্তক করে বলা হয়, মাটি কাটার ছবি তুললে, ছাড়া হবে না।’’

গ্রামবাসীদের বক্তব্য, চণ্ডীতলা, জাঙ্গিপাড়া থানার পাশ দিয়েই মাটিবোঝাই ডাম্পার, ট্রাক্টর যায়। এক গ্রামবাসীর কথায়, ‘‘মৌখিক এবং লিখিত ভাবে বহু বার থানায় জানানো হয়েছে। কোনও কাজ হয়নি। তাই, সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে প্রতিকার চেয়েছি আমরা। আমাদের সন্দেহ, মাটি-মাফিয়াদের পিছনে শাসক দলের বড় মাথারা কাজ করছেন। না হলে পুলিশই বা চুপচাপ কেন?’’ প্রায় একই সুরে চণ্ডীতলার প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক ভক্তরাম বলেন, ‘‘পুলিশ-প্রশাসনকে জানিয়ে কোনও কাজ হয় না। কৃষিজমি প্রতিদিন কমছে। কৃষি আর লাভনজক নয়। ফসল ফলিয়ে চাষি দাম না পাওয়ায় মাটি কারবারিদের রমরমা বাড়ছে। শাসক দল, পুলিশ-প্রশাসন সবার সঙ্গেই ওদের ব্যবস্থা আছে। কৃষি লাভজনক হলে হয়তো মাটির এই বেআইনি ব্যবসা এতটা বাড়ত না। প্রতিরোধ হত।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Agricultural Land Mamata Banerjee Tractor chanditala

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy