Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Death

দু’দিনে তিন বার ফেরাল জেলা সদর হাসপাতাল, মৃত্যু প্রৌঢ়ার

হাসপাতালে চিকিৎসার গাফিলতি যাতে না হয়, গত সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে কড়া ভাবে সতর্ক করে দেন।

হাসপাতালে মৃতার পরিজনদের জটলা। নিজস্ব চিত্র।

হাসপাতালে মৃতার পরিজনদের জটলা। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২২ ০৯:৩২
Share: Save:

দু’দিনে তিন বার ভর্তি না নিয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয় এক প্রৌঢ়াকে। বুধবার দুপুরে চতুর্থ বার ভর্তি নেওয়ার সিদ্ধান্ত যখন নেওয়া হল, রোগীর দেহে প্রাণ নেই। চিকিৎসায় গাফিলতির এমনই গুরুতর অভিযোগ উঠেছে হুগলির ইমামবাড়া জেলা সদর হাসপাতালের বিরুদ্ধে।

মৃতার নাম গীতা পাসোয়ান (৫০)। বাড়ি হুগলি স্টেশন রোডের কোদালিয়া শান্তি পল্লীতে। বাড়ির লোকেরা জানান, তাঁর জ্বর হয়েছিল। শ্বাসকষ্টও ছিল। চিকিৎসায় গাফিলতি নিয়ে পরিবারের তরফে পুলিশ এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছে। রাত পর্যন্ত হাসপাতাল থেকে তাঁরা দেহ নেননি। গোটা বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য দফতর তথা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অস্বস্তি স্পষ্ট।

হাসপাতালে চিকিৎসার গাফিলতি যাতে না হয়, গত সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে কড়া ভাবে সতর্ক করে দেন। তার পরে এই ধরনের অভিযোগ ওঠায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অস্বস্তি আরও স্পষ্ট। হাসপাতালের সুপারিন্টেন্ডেন্ট অমিতাভ মণ্ডল বলেন, ‘‘অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। তিন বার এসেও রোগীকে ফেরানো হল, এটা একেবারেই কাম্য নয়। মৃতার পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করা হবে।’’ হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির সদস্য তথা স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদারের প্রতিক্রিয়া, ‘‘পরিবারটির সঙ্গে কথা বলব। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও কথা বলব। তদন্ত করে কারও গাফিলতি থাকলে, ব্যবস্থা নিতে বলব।’’

মৃতার পুত্রবধূ উষা পাসোয়ানের অভিযোগ, ‘‘মায়ের দু’-তিন দিন জ্বর হয়। মঙ্গলবার ইমামবাড়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু ভর্তি করা হয়নি। ওষুধ দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। ওষুধ খেয়েও মা সারারাত কষ্ট পেয়েছেন। বুধবার সকাল ৭টা নাগাদ ফের হাসপাতালে নিয়ে যাই। তখনও ভর্তি না নিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। পাঁচ দিন পরে মাকে নিয়ে যেতে বলেন ডাক্তার এবং নার্স-দিদিরা। মা ফের কাহিল হয়ে পড়েন। ফের হাসপাতালে নিয়ে যাই। তখনও ভর্তি নেওয়া হয়নি।’’

পরিবারের লোকেরা জানান, বেলা বাড়তে গীতার অবস্থা আরও খারাপ হয়। মেয়ে তুলসী তাঁকে নিয়ে দুপুর ২টো নাগাদ ফের হাসপাতালে যান। তুলসী বলেন, ‘‘হাসপাতালের মধ্যেই মায়ের মুখ দিয়ে রক্ত বেরোতে থাকে। খুব শ্বাসকষ্টও হচ্ছিল। এ বার ভর্তি নেওয়া হল। তবে, মা ততক্ষণে মারা গিয়েছেন।’’

ঘটনার জেরে মৃতার আত্মীয়েরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁরা দাবি করেন, ভর্তি না-নিয়ে যে চিকিৎসক ফিরিয়ে দিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে তাঁরা সরাসরি কথা বলবেন। না হলে দেহ নেবেন না। শেষ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে তাঁরা শান্ত হন। লিখিত অভিযোগ করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, দেহের ময়নাতদন্ত করা হবে। রাতে নির্দিষ্ট জায়গায় দেহ রাখা হয়েছে।

এই ঘটনার জেরে বিরোধীরা যথারীতি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দিকে আঙুল তুলছে। তাদের অভিযোগ, এই জেলায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। রোগী ফেরানোর ঘটনা আকছার ঘটে। ওই মহিলার মৃত্যুতে এবং তাঁর বাড়ির লোকজন সরব হওয়ায় এই ঘটনায় হইচই হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Hooghly Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE