Advertisement
১৭ মে ২০২৪
Consumer protection

ভুল রিপোর্টে জীবন ছারখার, ক্ষতিপূরণের নির্দেশ আদালতের

গত ৯ ফেব্রুয়ারি রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের বিচারক সমীক্ষা ভট্টাচার্য রায় দিতে গিয়ে ওই ল্যাবরেটরি এবং সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের ভূমিকার তীব্র নিন্দা করেন।

লক্ষাধিক টাকার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে জানাল কোর্ট।

লক্ষাধিক টাকার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে জানাল কোর্ট। প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৭:২৩
Share: Save:

একশো দিনের কাজের শ্রমিক, হতদরিদ্র বাবার বাড়িতে থেকেই একরত্তি মেয়েকে নিয়ে একা লড়ছেন তরুণী। দক্ষিণ কলকাতার একটি ল্যাবরেটরিতে রক্ত পরীক্ষার ‘ভুল’ রিপোর্টই পাল্টে দিয়েছে তাঁর জীবন। স্ত্রী এইচআইভি পজ়িটিভ শুনেই সাত বছর আগে স্বামী তাড়িয়ে দিয়েছিলেন। ‘খারাপ’ অসুখের সামাজিক কলঙ্কে বাবার বাড়িতেও কোণঠাসা হয়ে পড়েন তিনি। পঞ্চায়েত ও পুলিশের দ্বারস্থ হয়েও সুরাহা না মেলায় বছর সাতেক আগে রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হন উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা ওই তরুণী। শেষমেশ, যে বেসরকারি ল্যাবরেটরি ও চিকিৎসকের ভুলে ওই তরুণী আজ একঘরে, সেই ল্যাবরেটরি ও চিকিৎসককে যৌথ ভাবে ২০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। বিচারক সাফ বলেন, ‘‘বিপন্ন তরুণী কোনও আর্থিক ক্ষতিপূরণ পেতে ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হননি। দিনের পর দিন তাঁর যে সামাজিক মর্যাদা ও সম্মানহানির হয়েছে, তা থেকে মুক্তি পেতেই তিনি আদালতে আসেন।’’

মা হওয়ার অপেক্ষায় দিন গুনতে গুনতেই জীবনে ধাক্কাটা আসে! ক্রেতা সুরক্ষা আদালত সূত্রের খবর, গর্ভাবস্থায় রক্তের একাধিক পরীক্ষার জন্য ২০১৬ সালের এপ্রিলে লেক মার্কেটের একটি বেসরকারি ল্যাবরেটরিতে যান ওই তরুণী। সেখানকার রির্পোটে জানানো হয়, তিনি এইচআইভি পজ়িটিভ। সে কথা শুনেই স্বামী তাড়িয়ে দেন তাঁকে। অসহায় তরুণী এর পরে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষা করান। কিন্তু সেখানকার রিপোর্টে জানানো হয়, তিনি এইচআইভি পজ়িটিভ নন। এ বার উত্তর ২৪ পরগনার গ্রামীণ হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষা করান ওই তরুণী। সেই রিপোর্টও একই কথা জানায়।

ফোনে ওই তরুণীর মা বলেন, ‘‘আর জি কর এবং গ্রামীণ হাসপাতালের রিপোর্ট দেখালেও শ্বশুরবাড়ি ওকে ফেরায়নি। এত বছর ধরে মেয়ে ও নাতনি আমারই ঘরে। আমরা মরে গেলে ওদের কী যে হবে! যাদের ভুলে মেয়ের জীবনটাই ছারখার হয়ে গেল, তাদের শাস্তি কে দেবে? মা হয়ে মেয়ের এই লড়াইয়ে যত দূর যেতে হয় যাব।’’

গত ৯ ফেব্রুয়ারি রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের বিচারক সমীক্ষা ভট্টাচার্য রায় দিতে গিয়ে ওই ল্যাবরেটরি এবং সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের ভূমিকার তীব্র নিন্দা করেন। তিনি বলেন, ‘‘কোনও রোগীকে এইচআইভি পজ়িটিভ বলে ঘোষণা করলে কেবল তিনিই ক্ষতিগ্রস্ত হন না, তাঁর পরিবারেও নেমে আসে বিপর্যয়। রিপোর্ট দেওয়ার আগে ভাল করে যাচাই করা দরকার। ওই ভুল রিপোর্টের জন্য তরুণী ও তাঁর গোটা পরিবার অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন।’’ রায় বেরোনোর দেড় মাসের মধ্যে ২০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ওই ল্যাবরেটরি ও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে। লেক মার্কেটের ওই ল্যাবরেটরির কর্তা মৃত্যুঞ্জয় দেবনাথ বলেন, ‘‘আদালতের রায়ের প্রতিলিপি এখনও হাতে আসেনি। সেটি হাতে পেলে যথাযথ পদক্ষেপ করব।’’

এইচআইভি নিয়ে গ্রামে সচেতনতার হাল কোন তিমিরে, এই ঘটনাই ফের তা প্রমাণ করছে। রাজ্য এডস নিয়ন্ত্রণ সোসাইটির এক কর্তা বলেন, ‘‘গ্রামীণ এলাকায় সচেতনতা গড়ে তুলতে প্রশাসনের পাশাপাশি সব স্তরের মানুষকেও এগিয়েআসতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Consumer protection
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE