ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি দখল করে কাজের নালিশ। নিজস্ব চিত্র।
প্রায় ৩৪ বছর পরে গোঘাটের গড় মান্দারণ পর্যটনকেন্দ্রে বড় ভাবে সৌন্দর্যায়নের কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু, ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি দখল করে মূল ফটকের স্তম্ভ হচ্ছে, এই অভিযোগে পাঁচ দিনের মাথায় বৃহস্পতিবার থেকে কাজ থমকে গিয়েছে। সংশ্লিষ্ট রাঙামাটি মৌজার জায়গাটি নিজের দাবি করে ধীরেন্দ্রনাথ দোলুই নামে এক চাষি আপত্তি তুলেছেন।
ধীরেন্দ্রনাথের দাবি, “মূল ফটক সংলগ্ন ৪০ শতক জায়গা আমার। চাষের উপর নির্ভর করে থাকা সত্ত্বেও পর্যটনকেন্দ্রের স্বার্থে বাম আমলে ফটক তৈরির সময় ৯ ফুট ছেড়েছি। এখন সেটা ভেঙে ফের নতুন করে যে পিলারের গর্ত হচ্ছে, তাতে আমার আরও অন্তত দু’হাত চওড়া এবং প্রায় ১৫ ফুট লম্বা জায়গা দখল হয়ে যাচ্ছে। তাই আপত্তি করেছি।”
একইসঙ্গে অবশ্য ধীরেন্দ্রনাথ এটাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তিনিও চান পর্যটনকেন্দ্র গড়ে উঠুক। জমির জন্য তাঁর মতো প্রান্তিক চাষিদের উপযুক্ত দাম দিক সরকার, এই আর্জিও জানিয়েছেন।
কাজের শুরুতেই বাধা পাওয়ায় শনিবার জেলা পরিষদের সভাধিপতি, পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ, ইঞ্জিনিয়ার-সহ আধিকারিকরা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। সভাধিপতি মেহবুব রহমান বলেন, “এতদিন গেল, অথচ নিজের জায়গা ঘিরে নেননি চাষি। বিষয়টা খতিয়ে দেখছি আমরা।” জেলা ইঞ্জিনিয়ার মহাজ্যোতি বিশ্বাস বলেন, “ফটক নির্মাণে জমি-জট মিটিয়ে ফেলা হচ্ছে। আমরা ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গা নেব না। কেনারও কোনও পরিকল্পনা নেই। এমনকি, গড়ে ঢুকে থাকা কিছু রায়তি সম্পত্তি থেকে থাকলে, তা-ও বেড়া দিয়ে ঘিরে দেওয়া হবে।”
জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, শ্রীরামকৃষ্ণের জন্মস্থান কামারপুকুর থেকে ৩ কিলোমিটার তফাতেই বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘দুর্গেশনন্দিনী’ উপন্যাসের পটভূমি, প্রায় ২০০ একর এলাকা জুড়ে গড় মান্দারণ। ১৯৮৭ সালে মাত্র একবারই ‘পর্যটন কেন্দ্র’ সাইনবোর্ড টাঙিয়ে কিছু কাজ হয়েছিল। তার মধ্যে কাজলা দিঘি, লক্ষ্মী জলা, লস্কর জলা এবং আমোদর নদ সংস্কার করা হয়। সেখানে নৌকাবিহার এবং মাছ চাষের ব্যবস্থা হয়। এ ছাড়া, ময়ূর উদ্যান, হরিণ প্রমোদ উদ্যানের কাজ হয়। এখন সেই সব কাজের অস্তিত্বই নেই। নৌকা উধাও। হরিণ এবং ময়ূর বন দফতরের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ফের মজে গিয়েছে আমোদর নদ এবং জলাগুলি। ভাঙা প্রাচীর দিয়ে দুষ্কৃতীরা ঢুকে গাছ লুট করে বলে অভিযোগ। মাঝের বছরগুলিতে খালি কিছু জায়গায় রং করা হয়েছিল।
এ বার প্রথম দফার কাজে ১ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা বরাদ্দে পর্যটক ছাউনি এবং কটেজ, লক্ষ্মী জলার উপর কাঠের সেতু, ২ নম্বর গেট থেকে বড় আস্তানা যাওয়ার রাস্তা, বিভিন্ন জায়গায় আলো, গান-বাজনার ব্যবস্থা, ভাঙা প্রাচীর সংস্কার, পর্যটন কেন্দ্রের মূল ফটক সংস্কার, টিকিট কাউন্টার সংস্কার এবং অফিস কাম স্টোরেজ করা হচ্ছে।
জেলা ইঞ্জিনিয়ার জানান, আগামী এক বছরের মধ্যে এই কাজ শেষ করা হবে। পরবর্তী দফার পরিকল্পনাও শুরু হয়েছে। বছর দুয়েকের মধ্যে দফায় দফায় গড় মান্দারণ পর্যটন কেন্দ্রকে সাজিয়ে তোলা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy