Advertisement
০২ মে ২০২৪
Teacher Recruitment

৬৭-তে নিয়োগপত্র, চাকরিতে যোগ দিতে মরিয়া বৃদ্ধ

জানা গিয়েছে, প্রাথমিক নিয়োগের একটি প্যানেল বাতিল নিয়ে ১৯৮৩ সালে কালীপদ-সহ কিছু চাকরিপ্রার্থী কলকাতা হাই কোর্টে মামলা করেন।

হাসি মুখে নিয়োগপত্র হাতে তিন বৃদ্ধ।

হাসি মুখে নিয়োগপত্র হাতে তিন বৃদ্ধ। —নিজস্ব চিত্র।

সুদীপ দাস
পান্ডুয়া শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২৪ ০৯:০৪
Share: Save:

বয়স ৬৭ বছর। পেশা পুজো করা।

পান্ডুয়ার সেই ‘ঠাকুরমশাই’ কালীধন বন্দ্যোপাধ্যায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পদে নিয়োগের চিঠি পেলেন এই সে দিন। কাজে যোগ দিতে নিয়োগপত্র হাতে বৃহস্পতি এবং শুক্রবার তিনি গিয়েছিলেন ইটাচুনা চক্রের উপ-স্কুল পরিদর্শক আশিস দাসের দফতরে। তবে, তাঁর দেখা মেলেনি।

কালীধন বলেন, ‘‘সহকারী শিক্ষক হিসাবে পান্ডুয়ার ইলছোবা-মণ্ডলাই জুনিয়র বেসিক ট্রেনিং স্কুলে চাকরি পেয়েছি। দ্রুত যোগ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক।’’ আশিস জানান, নির্বাচন সংক্রান্ত কাজে ব্যস্ত থাকায় এই দু’দিন দফতরে যাননি। শুক্রবার কালীধনের সঙ্গে ফোনে তাঁর কথা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘আমি কাগজপত্র দেখিনি। সোমবার অফিসে গিয়ে পুরো বিষয়টি জেনে মন্তব্য করব।’’

কালীপদ-সহ ষাটোর্ধ্ব ৬৬ জনের প্রাথমিক শিক্ষক পদে নিয়োগপত্র পাওয়া নিয়ে শোরগোল পড়েছে হুগলিতে। হুগলি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারপার্সন শিল্পা নন্দী গত ১০ জানুয়ারি তাঁদের নিয়োগপত্রে সই করেছেন। ডাকযোগে তাঁদের বাড়িতে সেই নিয়োগপত্র পৌঁছেছে। এর মধ্যে চার জন মারা গিয়েছেন। বাকিদের মধ্যে অনেকেই এই বয়সেও চাকরিতে যোগ দিতে উৎসাহী বলে জানিয়েছেন।

জানা গিয়েছে, প্রাথমিক নিয়োগের একটি প্যানেল বাতিল নিয়ে ১৯৮৩ সালে কালীপদ-সহ কিছু চাকরিপ্রার্থী কলকাতা হাই কোর্টে মামলা করেন। সেই মামলার প্রেক্ষিতেই গত বছরের ২০ ডিসেম্বর ওই ৬৬ জনকে নিয়োগের নির্দেশ দেয় আদালত। শিল্পা জানান, সেই রায় মেনেই রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ নির্দেশিকা পাঠায়। তারপরেই ওই ৬৬ জনের নিয়োগপত্র নির্দিষ্ট ঠিকানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

বাম আমলের ওই নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন নিয়োগপত্র হাতে পাওয়া ব্যক্তিরা। ঘটনার প্রেক্ষাপট এমন সময়ে, যখন শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগে বিরোধীরা প্রতিনিয়ত দুষছে তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকারকে। ৪০ বছর আগে করা ওই মামলার প্রধান মামলাকারী কালীধনের দাবি, তাঁরা বেসিক ট্রেনিং পাস করেছিলেন। অথচ, সিপিএম নেতাদের মদতে প্রশিক্ষণ না নেওয়া ব্যক্তিরা চাকরি পেয়েছিলেন। তিনি জানান, ১৯৮৩ সালের ২৭ নভেম্বর হুগলি জেলার মোট ৩০৫ জন চাকরিপ্রার্থী এর বিরুদ্ধে হাই কোর্টে মামলা করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে পরে ১০৮ জন চাকরি পান বাম আমলেই। বাকিদের মধ্যে ১৩১ জন মামলা থেকে সরে দাঁড়ান। ৬৬ জন মামলা চালিয়ে যান। অভিযোগ, বাম আমলে ১০ বার এবং তৃণমূলের আমলে ৭ বার তাঁদের পক্ষে রায় বেরোলেও পর্ষদ তা মানেনি।

কালীপদ জানান, প্রতিবারেই ফের আদালতে জানাতে হয়েছে। কালীধনের কথায়, ‘‘এখন তৃণমূলের বিরুদ্ধে নিয়োগে দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসছে। সিপিএমও কিছু কম ছিল না।’’ তাঁকে চাকরিতে যোগ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে গড়িমসি দেখলে ফের আদালতের দ্বারস্থ হবেন, এ কথা জানাতে তিনি ভোলেননি।

বিষয়টি নিয়ে সিপিএমের হুগলি জেলা কমিটির সদস্য তথা পান্ডুয়ার প্রাক্তন বিধায়ক আমজাদ হোসেনের প্রশ্ন, ‘‘তৃণমূল ১৩ বছর ধরে রাজ্যের ক্ষমতায় রয়েছে। বাম আমলে দুর্নীতি হলে, তদন্ত করেনি কেন? ওঁদের চাকরিই বা দেয়নি কেন?’’ পক্ষান্তরে, তৃণমূলের হুগলি-শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অরিন্দম গুঁইয়ের বক্তব্য, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিহিংসার রাজনীতি করেননি। বিজেপি করছে। দোসর হয়েছে সিপিএম। তাই এ সব বলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pandua
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE