Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
coronavirus

WhatsApp School: স্কুলের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পর্ন ভিডিয়ো, কাউন্সেলিং ছাত্রীর

অল্পবয়সি শিক্ষার্থীদের হাতে স্মার্ট ফোন দেওয়ায় ঝুঁকি কতটা, তা জেনেও নিরুপায় হয়েই ছোটদের হাতে তুলে দিতে হচ্ছে স্মার্ট ফোন।

প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

রাজীব চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২১ ০৭:১৯
Share: Save:

স্কুলের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীদের জীবনবিজ্ঞানের ক্লাস নিচ্ছিলেন হাওড়া গ্রামীণ এলাকার সরকার-পোষিত একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। আচমকাই গ্রুপে শেয়ার করা হয় একটি ভিডিয়ো, যা দেখে স্তম্ভিত হয়ে যান শিক্ষিকা। লক্ষ্য করেন, এক ছাত্রীর মোবাইল থেকে পোস্ট করা হয়েছে একটি পর্ন ভিডিয়ো। ক্লাস বন্ধ করে তিনি প্রধান শিক্ষিকাকে ঘটনাটি জানান। প্রধান শিক্ষিকা যোগাযোগ করেন হাওড়া পুলিশের সাইবার ক্রাইম থানার সঙ্গে। এখন ওই ছাত্রীর কাউন্সেলিং চলছে।

পরপর করোনা ঢেউয়ের জেরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ঝুঁকি নিতে পারছে না সরকার। ‘নিও নর্মাল’ জীবনে পড়াশোনা পুরোটাই ইন্টারনেট ও স্মার্ট ফোন নির্ভর। অল্পবয়সি শিক্ষার্থীদের হাতে স্মার্ট ফোন দেওয়ায় ঝুঁকি কতটা, তা জেনেও নিরুপায় হয়েই ছোটদের হাতে তুলে দিতে হচ্ছে স্মার্ট ফোন।

অভিভাবকদের প্রতি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ— অল্পবয়সি পড়ুয়াদের হাতে স্মার্ট ফোন দিয়ে দিলেই হবে না। প্রতিনিয়ত তাদের নজরদারির আওতায় রাখতে হয়। হাওড়ার ওই স্কুলের ঘটনার প্রেক্ষিতে একই পরামর্শ দিচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনও। কমিশনের সদস্যা সুদেষ্ণা বসুর কথায়, ‘‘ইন্টারনেট আজকের দিনে অপরিহার্য। কিন্তু একই সঙ্গে জানতে হবে, ইন্টারনেট ব্যবহার করে কী ভাবে সাইবার ক্রাইম হয়। এ বিষয়ে আমরা প্রতিনিয়ত শিশু-কিশোর-কিশোরীদের কাউন্সেলিং করছি। সচেতনতামূলক একটি গান তৈরি হয়েছে। ভিডিয়োর মাধ্যমে সেটি ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে জেলায় জেলায়। আমাদের লক্ষ্য, কিশোর-কিশোরীরা যেন ইন্টারনেটের অপব্যবহার সম্পর্কে সচেতন হয়। এই কাজটি করতে হবে অভিভাবকদেরই।’’

গত মাসের মাঝামাঝি ওই ঘটনার পর হাওড়ার ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা বলেন, ‘‘আমরা সংশ্লিষ্ট ছাত্রীর বাড়িতে প্রতিনিধি পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু তার মা প্রথমে আমাদের প্রতিনিধিকে ছাত্রীর সঙ্গে দেখা করতে দেননি। আমরা সাইবার ক্রাইম থানায় ঘটনা জানাই। তার পরে ছাত্রীর মা আমাদের জানান, ঘটনার দু’দিন আগে তাঁর ফোন চুরি হয়ে গিয়েছিল। অথচ, তিনি পুলিশের কাছে চুরির বিষয়টি জানাননি। আমাদের মনে হয়েছে, উনি কিছু লুকোতে চাইছেন।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ওই ঘটনার পরে অনেক পড়ুয়ার অভিভাবক আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে উষ্মাপ্রকাশ করেছেন। তাঁরা তাঁদের ছেলেমেয়েদের নিয়ে চিন্তিত। আমরাও বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছি। আর যাতে এই ধরনের কাজ কেউ না করে তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। ওই ছাত্রীকে আপাতত হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে সরানো হয়েছে। তার মাকে বলা হয়েছে, বিকল্প মোবাইল নম্বর স্কুলে জমা দিতে। তার পরে মেয়েটিকে আবার হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে নেওয়া হবে।’’ এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘তদন্ত শুরু হয়েছে। এর বেশি কিছু বলা যাবে না।’’

ওই ছাত্রীর কাউন্সেলিং করেছেন হাওড়া চাইল্ড লাইনের কো-অর্ডিনেটর বৈশাখী চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘ছাত্রীর হাতে যে স্মার্টফোনটি দেওয়া হয়েছিল, সেটি তার মায়ের। ওই ফোনে পর্ন ভিডিয়ো ছিল বলে আমার মনে হয়েছে। সেই ভিডিয়োটিই স্কুলের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে শেয়ার হয়ে গিয়েছিল অসাবধানতাবশত। ঘটনার পরে ফোন এবং সিমকার্ডটি নষ্ট করে দেওয়া হয়। এক পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী কোনও পর্ন সাইট থেকে ভিডিয়ো ডাউনলোড করে ফোনে সেভ করে রাখবে বলে আমার মনে হয় না। এ ক্ষেত্রে বাবা-মাকে অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে।’’

সুদেষ্ণাদেবীর কথায়, ‘‘বর্তমান পরিস্থিতিতে শিশুদের নানা সমস্যার কথা আমাদের কানে আসে। সেই কারণেই কাউন্সেলিং চালু হয়েছে। তবে, শুধু ছেলেমেয়েদের নেট নিরাপত্তা নিয়ে বোঝালেই হবে না, বাবা-মাকেও ওই বিষয়ে শিক্ষিত হতে হবে। ছেলেমেয়েকে ভাল-খারাপের তফাত বোঝানোর আগে অভিভাবকদের তা বুঝতে হবে।’’

শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনের তরফে অভিভাবকদের বার্তা—বাচ্চাদের বোঝাতে হবে, শুধু প্রয়োজনের সময়ে স্মার্ট ফোন ব্যবহার করতে হয়। সারাদিন ধরে তা ব্যবহার করা যাবে না। ছেলেমেয়েদের হাতে স্মার্ট ফোন দেওয়ার পরে তাদের নজরে রাখতে হবে। প্রয়োজনে ফোন ব্যবহারের নির্দিষ্ট সময় করে দিতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

coronavirus COVID19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE