E-Paper

অবাধে কাটা চলছে গঙ্গার চরের বালি ও মাটি, ক্ষোভ

প্রশাসন না জানলেও স্থানীয় বাসিন্দারা জানেন, ‘অপারেশন’ শুরু হয় অন্ধকার নামলে। একের পর এক ভুটভুটি এসে থামে প্রায় ২০০ বিঘার ওই চরে। এক-একটি ভুটভুটিতে থাকে ১০-১২ জন।

বিশ্বজিৎ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২৪ ১০:০৭
বলাগড়ের সবুজ দ্বীপের গা ঘেঁষা এই চরে মাটি ও বালি কাটা চলছে।

বলাগড়ের সবুজ দ্বীপের গা ঘেঁষা এই চরে মাটি ও বালি কাটা চলছে। নিজস্ব চিত্র।

গঙ্গা থেকে বেআইনি ভাবে বালি এবং মাটি কাটা এবং তাতে রাজনৈতিক নেতাদের মদতের অভিযোগ হুগলির বলাগড় ব্লকে নতুন নয়। সবুজদ্বীপের গা ঘেঁষা একটি চর থেকে এ ভাবেই রাতের অন্ধকারে অবাধে বালি এবং মাটি কেটে ভুটভুটিতে পাচারের অভিযোগ উঠেছে। ওই চরে স্থানীয় সোমরা ২ পঞ্চায়েতের সুখড়িয়া এলাকার মানুষজন চাষবাস করেন। তাঁদের আশঙ্কা, যে হারে ওই চরের উপরে অত্যাচার চলছে তাতে ভবিষ্যতে সেটি থাকবে কি না, সন্দেহ।

পঞ্চায়েত প্রধান ময়না মুর্মু বলেন, ‘‘এক জন চাষি লিখিত ভাবে জানিয়েছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রশাসন যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেবে।’’ প্রশাসন অবশ্য জানিয়েছে, বিষয়টি তাদের গোচরে নেই। বিডিও (বলাগড়) সুপর্ণা বিশ্বাসের প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তিনি ফোন ধরেননি। যুগ্ম বিডিও সুরঞ্জন বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমাদের কাছে কোনও অভিযোগ আসেনি। খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।’’

প্রশাসন না জানলেও স্থানীয় বাসিন্দারা জানেন, ‘অপারেশন’ শুরু হয় অন্ধকার নামলে। একের পর এক ভুটভুটি এসে থামে প্রায় ২০০ বিঘার ওই চরে। এক-একটি ভুটভুটিতে থাকে ১০-১২ জন। তারা মাটি কেটে ভুটভুটিতে তোলে। ভোরের আলো ফোটার পরে তাদের চিহ্ন থাকে না। একাধিক ব্যক্তি জানান, চোখের সামনে এই অন্যায় দেখেও প্রতিবাদের সাহস হয় না। স্থানীয় প্রশাসনকে মৌখিক ভাবে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি।

এক গ্রামবাসী বলেন, ‘‘চরে চাষাবাদ করে অনেকে সংসার চালান। ধান-সহ নানা আনাজ চাষ হয়। কিন্তু, দীর্ঘদিন ধরে যে ভাবে অবাধে মাটি কাটা হচ্ছে, তাতে ওই চর থাকবে কি না সন্দেহ।’’ এক মৎস্যজীবীর কথায়, ‘‘রাতে আমরা গঙ্গায় মাছ ধরি। কিন্তু ভুটভুটির ঢেউ ও শব্দে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না।’’ সকলেরই অভিযোগ, এই চুরির পিছনে ‘বড় মাথা’ আছে। দক্ষিণবঙ্গ মৎস্যজীবী ফোরামের হুগলি জেলার আহ্বায়ক বিবর্তন ভট্টাচার্য জানান, ভুটভুটি চলাকালীন তার জ্বালানি তেল গঙ্গায় পড়ে ছড়িয়ে যায়। তার ফলে জল বিষাক্ত হচ্ছে। এতে মাছ মরে যায়। বিষয়টি নিয়ে মৎস্যজীবীদের সঙ্গে কথা বলা হবে।

বিরোধীদের অভিযোগ, তৃণমূলের মদতেই এই অবৈধ কাজ চলে। পুলিশের সঙ্গে মাটি কারবারিদের যোগাযোগ আছে। বিজেপি নেতা স্বপন পাল বলেন, ‘‘রাজ্য জুড়েই তৃণমূলের লোকেরা এ ভাবে লুটেপুটে খাচ্ছে।’’ সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য অতনু ঘোষ বলেন, ‘‘এ আর নতুন কিছু নয়। তৃণমূলের সঙ্গে মাটি মাফিয়া, বালি মাফিয়াদের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে। এলাকার সাধারণ মানুষকে নিয়ে আমরা প্রতিবাদে নামব।’’

মাটি কারবারিদের সঙ্গে যোগাযোগের কথা পুলিশ মানেনি। তৃণমূলও দায় নিতে চায়নি। আইএনটিটিইউসি-র হুগলি জেলা সাধারণ সম্পাদক দেবায়ন রায় বলেন, ‘‘বিরোধীদের কাজই মিথ্যা অভিযোগ আনা। তৃণমূল এর সঙ্গে জড়িত নয়। বেআইনি ভাবে বালি বা মাটি কাটা হলে প্রশাসন দেখবে। এটা দেখার কাজ আমাদের নয়।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Balagarh

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy