Advertisement
১৯ মে ২০২৪

বেহাল রাজাপুর সেচখাল বাঁচাতে বরাদ্দ সাড়ে চার কোটি

আবর্জনা ও কচুরিপানায় মজে যেতে বসা রাজাপুর সেচখালের জলধারণ ক্ষমতা দিন দিন কমছে। সম্প্রতি টানা বৃষ্টি ও ডিভিসির ছাড়া জলে দু’পাড় ভাসিয়েছে এই খাল। জলের তোড়ে ভেঙেছে কয়েকটি বাঁধ।

রাজাপুর খাল এখন যে চেহারায়।

রাজাপুর খাল এখন যে চেহারায়।

অভিষেক চট্টোপাধ্যায়
ডোমজুড় শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৫ ০১:৫৮
Share: Save:

আবর্জনা ও কচুরিপানায় মজে যেতে বসা রাজাপুর সেচখালের জলধারণ ক্ষমতা দিন দিন কমছে। সম্প্রতি টানা বৃষ্টি ও ডিভিসির ছাড়া জলে দু’পাড় ভাসিয়েছে এই খাল। জলের তোড়ে ভেঙেছে কয়েকটি বাঁধ। তবে প্রশাসনের দাবি, পরের বছর থেকে এই ছবি আর দেখা যাবে না। কারণ রাজাপুর সেচখালের একাংশ ও তার সংযোগকারী দু’টি খাল সংস্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেচ দফতর। বরাদ্দ হয়েছে প্রায় সাড়ে চার কোটি। ইতিমধ্যে কাজের টেন্ডারও হয়ে গিয়েছে। সেচ দফতর সূত্রে খবর, পুজোর পরেই কাজ শুরু হবে।

সেচ দফতরের এসডিও (আমতা সাবডিভিশন) স্বপন দত্ত বলেন, ‘‘রাজাপুর সেচখাল ও তার সংযোগকারী রাজাপুর ব্রাঞ্চ চ্যানেল ওয়ান ও কামারনালা—এই তিনটি খালের ১৪.৫০ কিলোমিটার অংশ সংস্কার করা হবে। কয়েক মাস আগেই প্রকল্পটি অনুমোদন হয়। এর ফলে ডোমজুড় ও জগৎবল্লভপুর ব্লকে চাষের জল পেতে সমস্যা হবে না। নিকাশির সমস্যাও মিটবে। উপকৃত হবেন প্রায় ৪২ হাজার মানুষ।’’

সেচ দফতর সূত্রে খবর, রাজাপুর সেচখালটি ১৮৯৪-’৯৫ সালে তৈরি হয়েছিল। হুগলির চন্ডীতলা ১ ব্লকের কানাইডাঙা মৌজা থেকে শুরু হয়ে এই খাল হাওড়ার ডোমজুড়, জগৎবল্লভপুর, পাঁচলা ব্লকের বিভিন্ন গ্রাম হয়ে উলুবেড়িয়ার শিসবেড়িয়ায় হুগলি নদীতে মিশেছে। উলুবেড়িয়া ২ ব্লকের বাসুদেবপুরে রাজাপুর সেচখালের সঙ্গে মিশেছে কানা দামোদর নদী। রাজাপুর ব্রাঞ্চ চ্যানেল ওয়ান খালটি ডোমজুড়ের পার্বতীপুর এলাকা থেকে শুরু হয়েছে। মোল্লারচক, নোনাকুন্ডু, চককদমতলা, উত্তর ঝাঁপড়দহ ও দক্ষিণ ঝাঁপড়দহ-সহ ডোমজুড়ের বিভিন্ন গ্রাম হয়ে এটি জগৎবল্লভপুরে গিয়ে রাজাপুর সেচখালের সঙ্গে মিশেছে। অন্য দিকে কামারনালা খালটিও রাজাপুর সেচখালের সংযোগকারী একটি খাল। এটি ডোমজুড়ের চককদমতলা থেকে শুরু হয়ে স্থানীয় চকমহিষজল এলাকায় মূল সেচখালের সঙ্গে মিশেছে।

সেচ দফতরের এক কর্তা জানান, এই তিনটি খালের দু’ধারের জমিতে ধান, পাট, আলু, তিল, নানা সব্জি-সহ বিভিন্ন ফসল চাষ করা হয়। বহু বছর খালগুলি সংস্কার না হওয়ায় চাষের জমিতে জল সরবরাহ প্রায় বন্ধ হতে বসেছে। আবার ভারী বৃষ্টি হলে খাল উপচে জল উঠে আসছে রাস্তায়। এ সব সমস্যা মেটাতেই খালগুলি সংস্কারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এখনই রাজাপুর সেচখালের পুরোটা সংস্কার করা হবে না। প্রথম পর্যায়ে ডোমজুড়, জগৎবল্লভপুর ও হুগলির চন্ডীতলা মিলিয়ে খালের ৪.১০ কিলোমিটার অংশ সংস্কারের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। ডোমজুড়ের বিডিও তমোঘ্ন কর বলেন, ‘‘সেচ দফতর থেকে আমাদের সংস্কারের বিষয়টি জানানো হয়েছে। খাল সংস্কারে ব্লক প্রশাসন তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করবে।’’

এলাকার মানুষ জানান, কয়েক দশক ধরে রাজাপুর সেচখালের সংস্কার হয়নি। ফলে প্রতি বর্ষায় খাল সংলগ্ন এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। এ বারও খাল উপচে উত্তর ঝাঁপড়দহের উত্তর নোনাকুন্ডু, মহিষগোট-সহ কয়েকটি গ্রামে জল ঢুকেছে। বাঁধ ভেঙেছে। পেশায় চাষি নোনাকুন্ডুর পশুপতি পাল, মহিষনালার মৃত্যুঞ্জয় কাঁড়ার, পার্বতীপুরের জয়দেব মণ্ডলদের ক্ষোভ, বর্ষার আগে খাল সংস্কার করা হলে এই ভোগান্তি তে পড়তে হতো না। উত্তর ঝাঁপড়দহ পঞ্চায়েতের প্রধান সজল ঘোষ বলেন, ‘‘রাজাপুর সেচখাল বুজে গিয়ে এলাকার জল নিকাশি ব্যবস্থাটাই প্রায় বন্ধ। চাষেরও ক্ষতি হচ্ছে। তবে দেরিতে হলেও খাল সংস্কারের সিদ্ধােন্ত আমরা খুশি।’’ তবে বাসিন্দাদের দাবি, পার্বতীপুর পঞ্চায়েতের চকনারনা ও হুগলির চুমুকদহ গ্রামের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া মেটিয়া খালেরও (এটিও রাজাপুর খালের সংযোগকারী খাল) বেহাল দশা। এর সংস্কার না করলে রাজাপুর খাল সাফাইয়ের পরেও এলাকার নিকাশি সমস্যা মিটবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE