Advertisement
E-Paper

ছয় খুপরির ঘরে যোদ্ধার পোশাক থেকে বাঘের নখ

এ যেন এক মিনি পৃথিবী! এমন দেশ নেই যেখানকার কোনও না কোনও জিনিসের দেখা মিলবে না এখানে!

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৭ ০২:১২
সংগ্রাহক: সুধীর সরকার। ছবি: দীপঙ্কর দে।

সংগ্রাহক: সুধীর সরকার। ছবি: দীপঙ্কর দে।

এ যেন এক মিনি পৃথিবী!

এমন দেশ নেই যেখানকার কোনও না কোনও জিনিসের দেখা মিলবে না এখানে!

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ফাইটার বিমানের পাইলট যোদ্ধার পোশাক থেকে বাঘের নখ। নানা দেশের রং-বাহারি দড়ি থেকে দেশলাই বাক্স। ১৭৫ বছরের পুরনো কোডাক ক্যামেরার সঙ্গে পৃথিবীর প্রাচীনতম মডেলের দূরবিন। তারকেশ্বর, নালন্দা, বুদ্ধগয়া মন্দির তৈরিতে ব্যবহৃত ইট, নানা দেশের ১২ লক্ষ স্ট্যাম্প, কয়েন, বোতাম, পাখির বাসা, পিঁপড়ের বাসা। পুথি থেকে তালপাতার বই— বিচিত্র সব সংগ্রহ! আর প্রতিটি সংগ্রহের নেপথ্যেই রয়েছে নানা মজার গল্প।

সংগ্রাহকের নাম সুধীর সরকার। বয়স ৭৭। তারকেশ্বরের বাজিতপুরের ছাপোষা আটপৌরে মানুষটি কেন্দ্রীয় সরকারের ডাক বিভাগের বিভাগীয় সুপারিন্টেন্ডেন্টের অধীনে কাজ করতেন। সেই সুবাদে সাহেবের সঙ্গে ঘুরেছেন নানা প্রান্তে। ঘোরার ফাঁকেই সংগ্রহ করেছেন নিজের মনের খোরাক। আর সেই সংগ্রহ সাজিয়েছেন তারকেশ্বরে মোট ছয়টা খুপরি ঘরে। দু’হাজারেরও বেশি তাঁর সংগ্রহের ভাণ্ডার। দেখতে গিয়ে চোখ ধাঁধিয়ে যায় বৃদ্ধের মুন্সিয়ানা দেখে!

অবশ্য নানা জিনিস সংগ্রহের নেশা তাঁর ছেলেবেলা থেকেই। যা আজও থামেনি। মেলাই হোক বা অনুষ্ঠান— ডাক পড়লেই এখনও নিজের সংগ্রহ নিয়ে মানুষকে দেখানোর তাড়নায় ছুট দেন সুধীরবাবু। শুধু মাঝেমধ্যে অবসন্ন হয়ে পড়েন একটাই কারণে। ‘‘যখন আমি থাকব না, তখনও আমার সংগ্রহ থাকবে। কিন্তু এ জন্য একটা সংগ্রহশালা চাই। অথচ, কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না’’— কণ্ঠে হতাশা তারকেশ্বর হাইস্কুলের এই প্রাক্তনীর।

সুধীর সরকারের সংগ্রহ।

নিত্য নতুন জিনিস সংগ্রহের জন্য গিয়েছেন বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, নেপাল। রামেশ্বরম থেকে স্পিড বোটে গিয়েছেন শ্রীলঙ্কায়। নানা জায়গায় নিজের সংগ্রহ নিয়ে ঘোরার সুবাদে বহু বিশিষ্ট মানুষের কাছাকাছি এসেছেন সুধীরবাবু। হরিপাল কলেজের উদ্বোধনে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল সেনের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়েছিল। সুধীরবাবু বলেন, ‘‘আমার সংগ্রহ দেখে উচ্ছ্বসিত প্রফুল্লবাবু পরে দেখা করতে বলেছিলেন। ভেবেছিলাম মনের কথা মুখ্যমন্ত্রীকে বলব। কিন্তু পরে নিরাপত্তার কড়াকড়িতে পৌঁছতেই পারিনি।’’

একই ভাবে দেশের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় এবং মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর সঙ্গেও তাঁর দেখা হয়েছে।

তবু এত বছরেও অর্থাভাবে নিজের স্বপ্নকে রূপ দিতে পারেননি বৃদ্ধ। তিনি জানান, বাড়ির কাছেই দু’কাঠা জমি রয়েছে। সেখানে সংগ্রহশালার কাজ শুরু করতে চান। তাঁর কথায়, ‘‘পুর কর্তৃপক্ষের কাছে দরবার করেছি। প্রতিশ্রুতি পেয়েছি। দেখা যাক কী হয়!’’ তারকেশ্বরের পুরপ্রধান স্বপন সামন্ত বলেন, ‘‘বৃদ্ধের আবেদন খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

কিন্তু পুরসভা যদি সাড়া না দেয়? ‘‘কোনও সহৃদয় মানুষ এগিয়ে এলে তাঁকেই সব সঁপে দিয়ে যাব। না হলে ৮ লক্ষ দেশলাই বাক্স, প্রাচীন জামদানি শাড়ি, মসলিনগুলোর কী হবে?’’— এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সুধীরবাবু।

Museum Unique Collection Artefacts
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy