ধৃত: শঙ্কর মাখাল। নিজস্ব চিত্র
দু’বছর ধরে চলছে আমতার মুক্তিরচক-গণধর্ষণ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ। অভিযুক্তেরা জামিনও পেয়ে গিয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে ফের ওই গ্রামে ঢুকে দুই নির্যাতিতাকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল মামলায় এক অভিযুক্তের বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার রাতে গ্রামবাসীরা একজোট হয়ে অবশ্য শঙ্কর মাখাল নামে ওই অভিযুক্তকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেন। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। কিন্তু এই ঘটনায় ফের আতঙ্কে ভুগছেন নির্যাতিতারা। এক নির্যাতিতার স্বামী বলেন, ‘‘একে তো মামলার গতি ধীর। তার উপরে আসামিরা যখন-তখন গ্রামে ঢুকে যদি হুমকি দেয়, তা হলে কী করব! খুব আতঙ্কে আছি।’’
২০১৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে মুক্তিরচকের এক গৃহবধূ এবং তাঁর জেঠশাশুড়িকে বাড়িতে ঢুকে গণধর্ষণের অভিযোগ ওঠে ১০ জনের বিরুদ্ধে। কয়েক দিনের মধ্যে মূল অভিযুক্ত তথা স্থানীয় তৃণমূল নেতা বরুণ মাখাল-সহ ১০ জনকে ধরে পুলিশ। দলে ছিল শঙ্করও।
মামলা দায়ের হওয়ার ৯০ দিনের মাথায় পুলিশ চার্জশিটও দেয়। তা সত্ত্বেও ১০ জন আসামিই কলকাতা হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়ে যায়। তবে, হাইকোর্ট শর্ত দেয়, আসামিরা কেউ আমতা থানা এলাকায় থাকতে পারবে না। বছর কয়েক আগেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য নির্যাতিতাদের চাপ দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। হাইকোর্টের নির্দেশমতো নির্যাতিতাদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য তাঁদের বাড়ির সামনে অস্থায়ী পুলিশ ফাঁড়ি বসানো হয়।
দুই নির্যাতিতার অভিযোগ, মঙ্গলবার রাত ১১টা নাগাদ শঙ্কর তাঁদের বাড়ির সামনে হাজির হয়। তাঁদের উদ্দেশে গালিগালাজ করতে থাকে। মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দেয়। শঙ্কর তাঁদের প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেয় বলে অভিযোগ। এক নির্যাতিতার স্বামী চিৎকার করে গ্রামবাসী এবং ফাঁড়ির সিভিক ভলান্টিয়ারদের ডাকেন। সকলে এসে শঙ্করকে ধরে ফেলেন। এক নির্য়াতিতার স্বামী থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘হাইকোর্টের নির্দেশমতো দুই নির্যাতিতার নিরাপত্তার যাবতীয় বন্দোবস্ত করা হয়েছে। তাঁদের ভয় নেই। পুলিশ পাশে আছে।’’
শঙ্কর ধরা পড়ায় বুধবার আমতা আদালতে ওই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ স্থগিত হয়ে যায়। এ দিন এক মহিলা কনস্টেবলের সাক্ষ্য দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নিয়মমতো দশ জন অভিযুক্তই আদালতে হাজির না-থাকায় বিচারক সুপ্রতিম দাশগুপ্ত সাক্ষ্যগ্রহণ স্থগিত করে দেন। পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হয়েছে আগামী ৬ মার্চ। মামলার সরকারি আইনজীবী সিদ্ধার্থ মজুমদার বলেন, ‘‘পরবর্তী শুনানিতে গ্রেফতার হওয়া ওই আসামিকে আদালতে হাজির করানোর জন্য প্রয়োজনীয় আইনানুগ পদক্ষেপ করা হবে।’’
প্রায় দু’বছর ধরে বিভিন্ন পর্যায়ে এই মামলার শুনানি ও সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। প্রায় দেড় মাস পরে মঙ্গলবার থেকে মামলার এই পর্যায়ের সাক্ষ্যগ্রহণ ফের শুরু হয়েছে। ওইদিন শ্যামল বেরা নামে এক চিকিৎসক সাক্ষ্য দেন। তিনিই উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে দুই নির্যাতিতাকে পরীক্ষা করে রিপোর্ট দিয়েছিলেন। মামলায় মোট ৪২ জনের সাক্ষ্য দেওয়ার কথা। মঙ্গলবার পর্যন্ত ৩৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy