E-Paper

গড় রক্ষার লড়াইয়ে তৃণমূল

২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মানবাজারের তৃনমূল প্রার্থী সন্ধ্যারানি টুডু লোকসভা নির্বাচনের ব্যবধানের থেকে আরও পাঁচ হাজার ভোট বেশি পান।

সমীর দত্ত

শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ০৬:৩০
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

রাজ্যে পালাবদলের পর থেকে শুধু মানবাজারই বরাবর তৃণমূলের মুখ রক্ষা করেছে। শুধু সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখাই নয়, এই বিধানসভা কেন্দ্রে প্রতিপক্ষের সঙ্গে ব্যবধান বাড়ানোই তৃণমূলের পাখির চোখ। তবে স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে মহকুমা শহরের নানা পরিষেবা না পাওয়ার ক্ষোভ, এখানে বিরোধীদের তুরুপের তাস। সব পক্ষই এখানে অঙ্ক কষতে ব্যস্ত।

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে পুরুলিয়া কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মৃগাঙ্ক মাহাতো ২ লক্ষের বেশি ভোটের ব্যবধানে বিজেপির জ্যোতির্ময় সিংমাহাতোর কাছে হারেন। কিন্তু ওই নির্বাচনে মানবাজার বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল বিজেপির থেকে ১০,৫৮৩ ভোটে এগিয়ে থাকে। আবার ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মানবাজারের তৃনমূল প্রার্থী সন্ধ্যারানি টুডু লোকসভা নির্বাচনের ব্যবধানের থেকে আরও পাঁচ হাজার ভোট বেশি পান। বিজেপি প্রার্থী গৌরী সিং সর্দারকে ১৫,৫১৬ ভোটের ব্যবধানে হারান সন্ধ্যারানি।

এই অঙ্ক মাথায় রেখে মানবাজারের বিধায়ক তথা পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের মন্ত্রী সন্ধ্যারানি দাবি করেন, ‘‘শান্তিদার জয় শুধু সময়ের অপেক্ষা। তাঁর জয়ে মানবাজার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেবে।’’ দল সূত্রের খবর, সম্প্রতি মানবাজারের পাথরমহড়ায় কর্মিসভায় মানবাজার বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ৩০ হাজার ‘মার্জিন’ বেঁধে দেন তৃণমূল নেতৃত্ব।

উল্লেখ্য, সরকার বদল হলেও শুরু থেকে একটানা গত কয়েক দশক সিপিএম মানবাজার ও পুঞ্চার জামবাদ পঞ্চায়েতের ক্ষমতা ধরে রেখেছে। সেই অর্থে মানবাজার বিধানসভা কেন্দ্রের জন্য অঙ্ক কষতে বসে সিপিএমকে বাদ দিলে উত্তর না-ও মিলতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা। উদাহরণ হিসাবে তাঁরা জানাচ্ছেন, ২০১৯-র লোকসভা নির্বাচনে বামফ্রন্টের ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী বীর সিং মাহাতো মানবাজার বিধানসভা কেন্দ্রে ভোট পান ১৩,৪৪০টি। ২০২১-র বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএম প্রার্থী যামিনীকান্ত মান্ডি পান ১৬,৮৪৯টি ভোট।

সিপিএম তাই প্রচারে তৃণমূলের বিরুদ্ধে অনুন্নয়নের অস্ত্রে শাণ দিচ্ছে।পুরুলিয়া কেন্দ্রে এ বার ফব লড়াই করলেও সিপিএম কংগ্রেস প্রার্থী নেপাল মাহাতোকে সমর্থন জানিয়েছে।

নির্বাচনে কংগ্রেস ও বাম দলের মানবাজার অঞ্চল আহ্বায়ক সিপিএম নেতা উজ্জ্বল গঙ্গোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, ‘‘তৃণমূলের তাবড় নেতা, মন্ত্রী মানবাজার বিধানসভা এলাকার লোক হয়েও তাঁরা উন্নয়ন নিয়ে মাথা ঘামাননি। মানবাজার গ্রামীণ হাসপাতালের দুর্দশা ঘোচেনি, পানীয় জলের সমস্যা একই রয়েছে, নিকাশিও বেহাল। তৃণমূল মানবাজারের উন্নয়নে ব্যর্থ, প্রচারে সে কথাই আমরা তুলে ধরছি।’’ প্রচারে দুর্নীতির কথাও তোলা হচ্ছে বলে জানান সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য প্রদীপ চৌধুরী।

পুঞ্চার বাসিন্দা, জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘আমাদের সরকারই মানবাজারকে মহকুমার স্বীকৃতি দিয়েছে। লক্ষ্মীর ভান্ডার, কন্যাশ্রী প্রকল্পের মাধ্যমে মহিলারা স্বাবলম্বী হয়েছেন। পথশ্রী প্রকল্পে গ্রামীণ রাস্তার সংযুক্তি ঘটানো হচ্ছে। এগুলো উন্নয়ন নয়?’’

সন্ধ্যারানির স্বামী তথা তৃণমূলের প্রাক্তন জেলা সভাপতি গুরুপদ টুডুর কথায়, ‘‘এলাকায় যথেষ্ট উন্নয়ন হয়েছে। অনুন্নয়ন বিরোধীদের অপপ্রচার মাত্র।’’ তাঁর দাবি, বিজেপি সাংসদকে এলাকায় দেখাই যায় না। তিনি কোন মুখে ভোট চাইবেন?’’ বিজেপির জেলা সম্পাদক তথা পুঞ্চার বাসিন্দা জনপ্রিয় ঘোষ অভিযোগ উড়িয়ে বলেন, ‘‘আগেও বাম ও তৃণমূলের সাংসদ ছিলেন। তাঁরা এলাকায় ক’বার এসেছেন? তাছাড়া সাংসদ তহবিলের টাকা জেলাশাসকের নিয়ন্ত্রণে থাকে। তৃণমূলের চাপে প্রশাসন সাংসদ তহবিলের টাকা খরচ করতে বাধা সৃষ্টি করে। তবু তার মধ্যেই সাংসদ বেশ কিছু এলাকায় সৌরশক্তি চালিত হাইমাস্ট আলো, পানীয় জলের প্রকল্প প্রভৃতি কাজ করেছেন। এ বারেও বিদায়ী সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো বিপুল ভোটে জয়ী হবেন।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Lok Sabha Election 2024 TMC manbazar

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy