Advertisement
১৬ মে ২০২৪

লোকাল জুড়ে ‘গুপ্তরোগ’, অস্বস্তি

ওই মহিলা একা নন, পূর্ব রেলের হাওড়া মেন‌ এবং কর্ড শাখায় লোকাল ট্রেনের কামরায় বহু মানুষকে এ ভাবে রোজই অস্বস্তিতে পড়তে হয়। বিজ্ঞাপন জুড়ে থাকে মহিলা-পুরুষের যৌনরোগ নিরাময়ের কথা। মূলত আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার নামে ওই বিজ্ঞাপন সাঁটা হয়। তা ছাড়াও রয়েছে বন্ধুত্ব পাতিয়ে ২৫-৫০ হাজার টাকা উপার্জনেরর বিজ্ঞাপনও।

দৃশ্য-দূষণ: অস্বস্তিকর নানা বিজ্ঞাপন ভরা থাকে লোকাল ট্রেনের কামরায়। ছবি: সুশান্ত সরকার।

দৃশ্য-দূষণ: অস্বস্তিকর নানা বিজ্ঞাপন ভরা থাকে লোকাল ট্রেনের কামরায়। ছবি: সুশান্ত সরকার।

প্রকাশ পাল
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৭ ০১:০৯
Share: Save:

দিনকয়েক আগে মা-দাদুর সঙ্গে ট্রেনে চেপে কলকাতায় মামাবাড়ি যাচ্ছিল ব্যান্ডেলের বছর ছয়েকের মেয়েটা।

ব্যান্ডেল লোকা‌ল প্রতিটি প্ল্যাটফর্মে থামছিল। বোর্ডে লেখা স্টেশনের নাম উচ্চারণ করার চেষ্টা করছিল সে।

হঠাৎই মেয়েটির চোখ গেল ট্রেনের কামরার দেওয়ালে সাঁটা কাগজটার উপর। সদ্য যুক্তাক্ষর শেখা মেয়েটা পড়তে শুরু কর‌ল, ‘গুপ্তরোগ...’। পাশেই আর একটি কাগজ সাঁটা। ‘বন্ধুত্ব পাতিয়ে উপার্জন’। তবে মা মেয়েটিকে সেই লেখা পড়তে দেননি। দ্রুত তিনি মেয়েকে অন্য প্রসঙ্গে নিয়ে চলে গে‌লেন। মেয়েটি অবশ্য বুঝতে পারেনি, এত ক্ষণ ধরে মা স্টেশনের নাম উচ্চারণ করে পড়তে বলছিলেন, অথচ, হঠাৎ কেন তাকে থামিয়ে দিলেন!

ওই মহিলা একা নন, পূর্ব রেলের হাওড়া মেন‌ এবং কর্ড শাখায় লোকাল ট্রেনের কামরায় বহু মানুষকে এ ভাবে রোজই অস্বস্তিতে পড়তে হয়। বিজ্ঞাপন জুড়ে থাকে মহিলা-পুরুষের যৌনরোগ নিরাময়ের কথা। মূলত আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার নামে ওই বিজ্ঞাপন সাঁটা হয়। তা ছাড়াও রয়েছে বন্ধুত্ব পাতিয়ে ২৫-৫০ হাজার টাকা উপার্জনেরর বিজ্ঞাপনও। যা যৌনতার ইঙ্গিতবাহী বলে মনে করছেন যাত্রীরা।

নিত্যযাত্রীদের বক্তব্য, এমন বিজ্ঞাপনে বিশেষ করে আত্মীয়-কুটুম সঙ্গে থাকলে প্রবল অস্বস্তিতে পড়তে হয়। অনেকেই মনে করেন, এটা দৃশ্যদূষণ। ট্রেনের কামরাই শুধু নয়, প্ল্যাটফর্মে শৌচাগারে ঢুকলেও এমন বিজ্ঞাপন দেখা যায়। চুঁচুড়ার বাসিন্দা এক স্কুল শিক্ষিকার কথায়, ‘‘মাঝেমধ্যে পুরুষ সহকর্মীদের সঙ্গে ট্রেনে চেপে ফিরতে হয়। কামরায় এমন বিজ্ঞাপন থাকলে কী যে অস্বস্তি হয়, বলে বোঝানোর নয়। রেল কিন্তু চেষ্টা করলেই এটা বন্ধ করতে পারে।’’ শ্রীরামপুরের এক মহিলা বলেন, ‘‘কিছু ছেলেপুলে ওই সব বিজ্ঞাপন দেখে মজা পায়। আলোচনা শুরু করে দেয়। তখন মনে হয়, ট্রেন থেকে নেমে পড়ি। মাথা নিচু করে থাকতে হয়।’’ স্বাগতা ভট্টাচার্য নামে আর এক আর এক মহিলা যাত্রী বলেন, ‘‘শুধু বিজ্ঞাপনই নয়, মহিলা কামরায় খুব খারাপ কথাও লেখা থাকে। এগুলোর বিরুদ্ধে আগে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’’

ওই সব বিজ্ঞাপন সাঁটার জন্য কেন রেলের কামরাকে বেছে নেওয়া হয়?

নিত্যযাত্রীরা মনে করছেন, ট্রেনের কামরায় ওই বিজ্ঞাপন সাঁটলে বহু দিন থাকে। জলে ভেজার ভয় নেই। তা ছাড়া, সহজেই বহু মানুষের চোখে পড়ে। তাই কিছু লোক কামরাকেই বেছে নেন। তারকেশ্বর লাইন প্যাসেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক হরদাস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘রেলকে বহু বার বলেছি, এমন বিজ্ঞাপন সাঁটা বন্ধের ব্যবস্থা করতে। আমাদের সঙ্গেও তো মা-বোন বা অন্য আত্মীয়ারা যাতায়াত করেন। ফলে, অস্বস্তিটা সমান। অনেক সময় এমন বিজ্ঞাপন আমরা ছিঁড়ে দিই।’’

সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র। তিনি বলেন, ‘‘রেল তো আর ওই বিজ্ঞাপন সাঁটে না! কে কখন চোরাগোপ্তা সেঁটে দিয়ে যায়, বোঝা যায় না। ট্রেন কারশেডে গেলে আমরা সেগুলি তুলে পরিষ্কার করে দিই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE