মাঝে বছর দুই ভাটা পড়ার পর হুগলি জেলায় ফের ‘জৈব গ্রাম’ পরিকল্পনা রূপায়ণের তোড়জোড় শুরু করল কৃষি দফতর। পুরশুড়ার তকিপুর গ্রামে ৮ লক্ষ টাকার ওই প্রকল্পের কাজ চলছে। গ্রামের ৪০ জন চাষিকে নির্বাচিত করে তাঁদের প্রায় ৭৫ বিঘা জমিতে হাতেকলমে কাজ করে দেখানো হচ্ছে জৈব কৃষিতে যাওয়ার উপকারিতা। জেলার কৃষি আধিকারিক অশোক তরফদার বলেন, “এই প্রকল্পের আওতায় কেঁচো সার এবং জৈব সার তৈরিও শেখানো হবে গ্রামে।’’
জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, চাষিদের রাসায়নিক সার এবং রাসায়নিক কীটনাশক নির্ভরতা কমিয়ে টেকসই ও চিরস্থায়ী কৃষির পরিমণ্ডল তৈরা করাই ‘জৈব গ্রাম’ প্রকল্পের লক্ষ্য। এটা জৈব-উদ্ভিদ-পরভোজী-পরজীবী এবং রাসায়নিকের সুসমন্বিত ব্যবহারে উন্নত গুণমানের ফসল পাওয়ার প্রযুক্তি। জৈব গ্রামের আওতায় থাকা চাষিরা শুধু জমিতে সেচ, মাটি তৈরি, বীজ বপন ইত্যাদি করে দেবেন। কৃষি দফতর নিজেদের খরচে মাটি পরীক্ষা, বীজ শোধনের ব্যবস্থা করবে। জৈব, উদ্ভিদ, পরজীবী, পরভোজী কীটনাশক বা রোগনাশক ব্যবহার করা হবে কৃষি দফতরের খরচে। জৈব সার, জীবাণু সার এবং কেঁচো সারের ব্যবহার শেখানো এবং খরচও বহন করবে কৃষি দফতর।
কিন্তু পুরশুড়াই কেন?
পুরশুড়ার তকিপুর সব্জি চাষের জন্য বিখ্যাত। ‘জৈব গ্রাম’ প্রকল্পের অধীন চাষিরা ইতিমধ্যে সুফলও পাচ্ছেন। দিলীপ মণ্ডল নামে এক চাষি বলেন, ‘‘বেগুন চাষ বাদ দিলে জৈব পদ্ধতিতে পালং শাক, লঙ্কা, টোম্যোটো, শশা ইত্যাদি সব্জি চাষের ক্ষেত্রে ফসলের বর্ণ, গন্ধ, স্বাদ এবং অন্যান্য গুণমান অনেক বেশি। ফলনও প্রায় ২০ শতাংশ বেশি হচ্ছে। কিন্তু এই ফসল বিক্রির আলাদা বাজার না হলে প্রকল্প টিকবে না।’’
প্রকল্পের কার্যকারিতা ও উপকারিতার কথা স্বীকার করেও জৈব ফসলের পৃথক বাজার নিয়ে একই সংশয়ে তাপস রায়, প্রফুল্ল সামন্ত, জয়ন্ত খাঁড়ার মতো চাষিও। তবে চাষিদের আশ্বস্ত করেছেন আরামবাগ মহকুমা কৃষি আধিকারিক সজল ঘোষ। তিনি বলেন, “জৈব গ্রামের উৎপাদিত ফসল নিয়ে বিষমুক্ত ফসলের বাজার তৈরির পরিকাঠামো গড়ে তোলার চিন্তা-ভাবনা হচ্ছে রাজ্যস্তরে।’’