বিপজ্জনক: ব্যস্ত দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে হেলেদুলে চলেছে গরু।
এখনও হেলতে-দুলতে গরু চরে।
এখনও ধীর গতির ভ্যানো বাঁশ বোঝাই করে মাঝরাস্তা দিয়ে চলে।
এখনও অব্যাহত ‘লেন’ ভাঙা।
সিঙ্গুরের গোপালনগরের একটি কফি-শপ থেকে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে ফেরার পথে হাওড়ার শলপে পাকুড়িয়া সেতুতে রবিবার দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল একটি ফেরারি গাড়ি। মৃত্যু হয়েছিল ফেরারি-মালিক, কলকাতার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী শিবাজী রায়ের। এর জেরে মুম্বই রোড, দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের মতো জাতীয় সড়কগুলির নিরাপত্তা নিয়ে ফের প্রশ্ন ওঠে। সে দিনই সিঙ্গুরের সানাপাড়ায় লরির সঙ্গে সংঘর্ষে মৃত্যু হয় এক মোটরবাইক আরোহীর। অথচ, সোমবার দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, পদে পদে বিপদ ওৎ পেতে রয়েছে।
কেমন বিপদ?
দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের একপ্রান্তে ডানকুনি টোলপ্লাজা। সোমবার দুপুরে সেখানে দেখা গেল, রাজস্থান থেকে ট্যাঙ্কার নিয়ে এসে টোলপ্লাজার কাছে, রাস্তার ধারে ‘পার্ক’ করেছেন কৈলাস চৌধুরী। যা আইন-বিরুদ্ধ বলছে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষই। আরও অনেক ট্রাক-ট্যাঙ্কার-ট্রেলার এ ভাবেই দাঁড়িয়ে রয়েছে। যে কোনও সময় ওই দীঁড়িয়ে থাকা গাড়ির পিছনে দ্রুত গতিতে আসা অন্য গাড়ির ধাক্কা লাগার আশঙ্কা রয়েছে।
মোটা টাকা ‘টোল’ দিয়ে দ্রুত গতিতে যাওয়ার জন্যই ওই জাতীয় সড়ক। কিন্তু গাড়ি-চালকের সামনে যে কোনও সময় চলে আসতে পারে গরু-ছাগল। কারণ, ওই সড়কের দুই ‘লেন’-এর মাঝ বরাবর জমির ঘাস খাওয়াতে গ্রাম থেকে গরু-ছাগল নিয়ে আসা হয়। এর জেরে আগেও দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবু ছবিটা বদলায়নি।
বাঁশবোঝাই মোটরচালিত ভ্যান এক্সপ্রেসওয়েতে, ডানকুনির কাছে।ছবি: দীপঙ্কর দে
রয়েছে ‘লেন’ ভাঙার উপদ্রবও। নিয়ম মেনে ‘কাট’ দিয়ে গাড়ি ঘোরাতে যেহেতু কয়েক কিলোমিটার ঘুরতে হয়, সে জন্য ‘শর্টকাট’ হিসেবে পুলিশের নজর এড়িয়ে চলে অনেক গাড়ি ‘লেন’ ভেঙে ঢুকে পড়ে। তার জেরে ওই লেনে দ্রুত গতিতে আসা গাড়ি দুর্ঘটনার কবলেও পড়ে। উত্তরপাড়ার বিজন দাস নিয়মিত বালি হয়ে ডানকুনি টোলপ্লাজা দিয়ে ওই সড়ক ধরে দুর্গাপুর যান। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘ডানকুনি টোলপ্লাজার আগে-পরে যে ভাবে ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকে, তাতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। বেআইনি গ্যারাজও রয়েছে। টোল দিয়ে যাই, ন্যূনতম নিরাপত্তা কেন পাব না?’’
বারবার দুর্ঘটনাতেও কেন হুঁশ ফেরে না জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের?
দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প অধিকর্তা অরিন্দম হান্ডিক অবশ্য রাস্তার ধারে ট্রাক-ট্যাঙ্কার দাঁড়িয়ে থাকার কথা অস্বীকার করেননি। তিনি বলেন, ‘‘কলকাতায় নির্দিষ্ট সময়ে ট্রাক ঢোকে, তাই টোলপ্লাজার আগে সন্ধ্যায় গাড়ির চাপ বাড়ে। এই চাপ অনেকটা কমবে যদি টোলপ্লাজা ছাড়িয়ে পুলিশ গাড়িগুলি মাইতিপাড়া পর্যন্ত এগোতে দেয়।’’ তাঁর দাবি, ‘‘অনেক ‘কাট’ বন্ধ করে দেওয়ায় দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে আগের থেকে দুর্ঘটনা কমেছে।’’
দু’বছর আগে ওই সড়কে সিঙ্গুরের কাছে দুর্ঘটনায় পড়েছিল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গাড়ি। গত বছর লোকশিল্পী কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্যও গুড়াপের কাছে ওই সড়কে দুর্ঘটনায় মারা যান। জেলা পুলিশ ও কমিশনারেটের কর্তারা দাবি করেছেন, প্রতিটি থানার একটি করে গাড়ি এক্সপ্রেসওয়েতে নজরদারির জন্য থাকে। মদ্যপ গাড়ি চালকদের বিরুদ্ধে অভিযান চলে। কিন্তু দুর্ঘটনার আশঙ্কা পুরোপুরি এড়ানো যাচ্ছে কি? প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy