Advertisement
১৬ মে ২০২৪
বুথ ফেরত

বাঁশের কঞ্চির ভয়ে বাসের সিট ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম

কোথাও ঘুটঘুটে অন্ধকারে রহস্যময় আওয়াজ। কোথাও নৈশভোজে সম্বল শুধু মুড়ি। কারও জুটেছে বেঞ্চি, কাউকে আবার প্রকৃতির ডাকে ছুটতে হয়েছে মাঠে। ভোট করাতে গিয়ে ভোট-কর্মীদের কার, কী অভিজ্ঞতা, জানান abpbangla@abpmail.com-এ। ‘সাবজেক্ট’ লিখুন: বুথ ফেরত। সঙ্গে পাঠাবেন নিজের পাসপোর্ট সাইজ ছবি।বুথে পৌঁছতে পৌঁছতে সন্ধ্যা গড়িয়ে গিয়েছিল। শৌচাগারের অবস্থা খারাপ। তাই ভোরবেলা দু’জন ভোট কর্মী প্রাতঃকৃত্য করতে মাঠের দিকে গিয়েছিলেন। কিন্তু কয়েক মিনিট পরেই ছুটতে ছুটতে ফিরে এলেন তাঁরা। কারণ কুকুরের তাড়া।

অমিত হালদার (প্রিসাইডিং অফিসার)
শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৬ ০১:৫২
Share: Save:

বুথে পৌঁছতে পৌঁছতে সন্ধ্যা গড়িয়ে গিয়েছিল। শৌচাগারের অবস্থা খারাপ। তাই ভোরবেলা দু’জন ভোট কর্মী প্রাতঃকৃত্য করতে মাঠের দিকে গিয়েছিলেন। কিন্তু কয়েক মিনিট পরেই ছুটতে ছুটতে ফিরে এলেন তাঁরা। কারণ কুকুরের তাড়া।

আমি হুগলির খামারগাছির সিজা এলাকায় থাকি। পেশায় বলাগড় উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক। ভুগোল পড়াই। ভোট করানোর অভিজ্ঞতা বেশি দিনের নয়। এ বারের বিধানসভা নির্বাচনে আরামবাগের বৃন্দাবনপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রিসাইডিং অফিসার ছিলাম। হুগলিতে ভোট হয়েছে ৩০ এপ্রিল। তার আগের দিন সকাল-সকাল বেরিয়ে পড়েছিলাম। খামারগাছি থেকে ট্রেনে শেওড়াফুলি। সেখান থেকে সাড়ে ১০টায় আরামবাগ লোকা‌ল। আরামবাগে পৌঁছতে বেলা প্রায় ১২টা। ডিস্ট্রিবিউশন সেন্টার হয়েছিল গার্লস কলেজে। কিন্তু সেখানে যাওয়ার বাস কম। তাই কেউ কেউ হাঁটা লাগালেন‌। আমি আরও তিন জনের সঙ্গে টোটো ভাড়া করে ডিস্ট্রিবিউশন সেন্টারে পৌঁছলাম।

সেখানে গিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই ভোট করানোর সরঞ্জাম পেয়ে গেলাম। দুপুরে খেলাম সঙ্গে আনা চালভাজা, বিস্কুট। কিন্তু বাস আর ছাড়ে না। প্রচণ্ড গরমে মাঝে মধ্যে গাছের তলায় একটু জিরোচ্ছি তো কখনও বাসে এসে বসছি। বাস ছাড়তে প্রায় সাড়ে পাঁচটা বাজল। সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল। অন্ধকারে বাসের জানলা ভেদ করে বাঁশগাছের কঞ্চি, পাতা ঢুকে পড়ছিল। খোঁচা খাওয়ার ভয়ে একটা সময় সিট ছেড়ে বাসের মাঝখানে রড ধরে দাঁড়িয়ে পড়লাম। সঙ্গীদের অবস্থাও একই। তবে কঞ্চির ‘শাসানি’ বাদ দিলে যাত্রাটা মন্দ লাগেনি। হাওয়া দিচ্ছিল বেশ।

পাশাপাশি দু’টি বুথ। আমার বুথটা ছোট্ট একটা ঘরে। বুথে দু’টো দরজা থাকলে ভাল হয়। যদিও এখানে দরজা একটাই। শৌচাগারের কথা আগেই বলেছি। জলের যোগানও তথৈবচ। ভাবলাম, আশপাশের বাড়ি থেকে একটু সাহায্য চাইব। খোঁজখবর নিয়ে জানলাম, এলাকায় আদিবাসীদের বসতি বেশি। দু’এক জনের থেকে খোঁজ নিয়ে জানলাম, একটা পুকুর রয়েছে। কিন্তু সেখানে জল প্রায় নেই।

রাতে যখন শুলাম তখন প্রায় সাড়ে ১১টা। ভোর সাড়ে ৩টে নাগাদ উঠে পড়লাম। বুথ চত্বরে একটি টাইম কল। একটি টিউবওয়েল। টাইম কলে টিপ টিপ করে জল পড়ছিল। কোনও রকমে স্নান করে তৈরি হয়ে নিলাম।

নির্ধারিত সময়েই ভোট শুরু হল। প্রথম চার ঘণ্টাতেই অর্ধেকের উপর মানুষ ভোট দিয়ে ফেললেন। মোট ৮৪.৪% ভোট পড়েছিল। কী ভাবে ভোট দিতে হবে, অনেককেই সেটা বলে দিতে হল। অধিকাংশই ভোটারই মাঠেঘাটে কাজ করেন। তাঁদের অনেক বাড়িতেই টিভি নেই। তাই বোধহয় নির্বাচন কমিশনের প্রচার চোখে পড়েনি।

ভোট শেষে সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে আমার ব্যাগ গোছানো হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু অন্য একটি বুথের ভোটকর্মীদের দেরি হওয়ায় বাস ছাড়তে কিছুটা দেরি হল। সাড়ে ৮টার মধ্যে ইভিএম জমা দিয়ে স্টেশনে এলাম। আরামবাগ থেকে হাওড়া যাওয়ার শেষ ট্রেন ছাড়ল ৯টা ৪০ মিনিটে। তাতে চেপে শেওড়াফুলি পৌঁছলাম সাড়ে ১১টা নাগাদ। বাড়ির দিকে যাওয়ার কোনও ট্রেন ছিল না। ব্যান্ডেলে আমার শ্বশুরবাড়ি। লোকাল ট্রেন ধরে ব্যান্ডেলে পৌঁছলাম রাত ১২টা নাগাদ। শ্যালক মোটরবাইকে এসে নিয়ে গেল। পরের দিন বাড়ি গেলাম।

তবে আমার মতো সবার আত্মীয় বাড়ি যাওয়ার সুযোগ ছিল না। ওরা রাত কাটালেন ব্যান্ডেল স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে।

অনুলিখন-প্রকাশ পাল

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

amit halder Booth return presiding officer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE