Advertisement
১৯ মে ২০২৪

অরূপ স্যারের ক্লাসে প্রমীলা আত্মরক্ষার পাঠ

কখনও প্রতিপক্ষকে জোরালো পাঞ্চ, কখনও বিপক্ষের ঘুষি আটকে পাল্টা আক্রমণ। ঝাড়া তিন ঘণ্টার ক্লাস। প্রশিক্ষণ মেলে নিখরচায়।

জয়ী: পুরস্কার ছিনিয়ে এনেছে এই খুদেরা। —নিজস্ব চিত্র।

জয়ী: পুরস্কার ছিনিয়ে এনেছে এই খুদেরা। —নিজস্ব চিত্র।

প্রকাশ পাল
কোন্নগর শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৭ ১২:২৭
Share: Save:

কেউ সাত বছরের। কেউ অষ্টাদশী। কেউ পড়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে। কেউ বা স্নাতক স্তরের পড়ুয়া।

রবিবার বিকেল হলেই এই মেয়েদের ঠিকানা— হুগলির কোন্নগর অলিম্পিক ইনস্টিটিউশন মাঠ। সেখানে অরূপ স্যারের কোচিংয়ে আত্মরক্ষার পাঠ চলে তাদের। কখনও প্রতিপক্ষকে জোরালো পাঞ্চ, কখনও বিপক্ষের ঘুষি আটকে পাল্টা আক্রমণ। ঝাড়া তিন ঘণ্টার ক্লাস। প্রশিক্ষণ মেলে নিখরচায়। শুধু প্রশিক্ষণই নয়, অনেক আবার নেমে পড়ছে তাইকেন্ডো বা কিক বক্সিং প্রতিযোগিতার আসরে। মিলছে সাফল্যও।

কোন্নগরের বাসিন্দা অরূপ দাস কলকাতা পুলিশের ক্যারাটে ট্রেনার। বছর দু’য়েক ধরে তিনি মেয়েদের নিয়ে ওই শিবির খুলেছেন। বিভিন্ন স্কুলে ঘুরে ঘুরে মেয়েদের জোগাড় করে এনেছেন। কিছু কলেজ পড়ুয়াও এসেছেন। শিক্ষার্থীর সংখ্যা জনা পঞ্চাশ। অধিকাংশই অসচ্ছল পরিবারের। কারও বাবা ফুচকা বিক্রি করেন। কারও বাবা ফল বিক্রেতা। কারও বাবা রিকশা চালান।

অরূপবাবুর বক্তব্য, ঘরে-বাইরে মেয়েদের নানা অত্যাচার সহ্য করতে হয়। যৌন হেনস্থা থেকে ধর্ষণের শিকার হতে হয়। পড়তে যাওয়া হোক বা চাকরি— মেয়ে বাড়ি না ফেরা পর্যন্ত বাবা-মায়ের চিন্তা বাড়তে থাকে। আত্মরক্ষার উপায় জানা থাকলে একটি মেয়ে নিজেই নিজেকে সুরক্ষা বা নিরাপত্তা দিতে পারে। অন্যের আপদে-বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে। সেই কারণেই এমন উদ্যোগ।

অনেক বছর আগে নিজের দিদিকে শ্বশুরবাড়িতে মার খেতে দেখেছিলেন চোখের সামনে। তখন থেকেই মেয়েদের নিরাপত্তার অভাবের বিষয়টি মনে গেঁথে যায়। ঠিক করেন, মেয়েদের আত্মরক্ষার পাঠ দেবেন। তাঁর কথায়, ‘‘গরিব ঘরের মেয়েদের উপর অত্যাচার বেশি হয়। তাই, দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের প্রশিক্ষণে জোর দিয়েছি। পরে নিজেরাও ট্রেনার হিসেবে কাজ করতে পারবে।’’

অরূপবাবু জানান, শিবির চালাতে অলিম্পিক ইনস্টিটিউশন কর্তৃপক্ষ সাহায্য করেন। বৃষ্টি হলে ক্লাবঘরে অনুশীলন হয়। ক্লাব সম্পাদক সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মেয়েরা শারীরিক এবং মানসিক ভাবে শক্তিশালী হলে সমাজের লাভ। সেই জন্যই যতটুকু সম্ভব, চেষ্টা করি।’’

রিশিকা, কশিস, রূপকথারা এখন মাঠ দাপিয়ে বেড়ায়। কয়েক জন শিক্ষার্থী সম্প্রতি তাইকেন্ডোতে রাজ্য প্রতিযোগিতায় পদক জিতছে। অরূপবাবুর তৃতীয় শ্রেণির পড়ুয়া মেয়ে ঈশিকাও রয়েছে এই তালিকায়। রূপকথার বাবা, নবগ্রাম বড় বহেরার বাসিন্দা সম্রাট চক্রবর্তী বলেন, ‘‘রূপকথা দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। আত্মরক্ষার পাঠ নিতেই ওকে ওখানে পাঠিয়েছিলাম। এখন মনে হচ্ছে তাইকোন্ডোতে পারদর্শী হলে ওর ভবিষ্যৎ আরও উজ্জ্বল।’’

অরূপবাবু বলেন, ‘‘দিল্লির নির্ভয়া বা কামদুনির তরুণীর মার্শাল আর্ট শেখা থাকলে ওদের জীবনে হয়তো এভাবে অন্ধকার নেমে আসত না বলেই মনে করি। এখানকার মেয়েরা ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে। বাস্তব জীবনে সমস্যা এলেই ওরা প্রতিরোধ করবে, আমি নিশ্চিত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE