Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

ইডেনের আলোয় ঘরে ফিরলেন মূক তরুণী

মূল সূত্র ছিল একটিই— ‘কিউ ৫৯৪’!মূক-বধির তরুণীটি শুরুর দিকে শুধু এটুকুই কাগজে লিখে দিতেন। তার পরে ধীরে ধীরে ইঙ্গিতে বোঝাতে থাকেন— গঙ্গার উপর সেতু, ক্রিকেট মাঠ, ফ্লাডলাইট...!

প্রত্যাবর্তন: পরিজনের সঙ্গে আলিমা (বাঁ দিকে)। নিজস্ব চিত্র

প্রত্যাবর্তন: পরিজনের সঙ্গে আলিমা (বাঁ দিকে)। নিজস্ব চিত্র

প্রকাশ পাল
জাঙ্গিপাড়া শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৭ ০১:৪৩
Share: Save:

মূল সূত্র ছিল একটিই— ‘কিউ ৫৯৪’!

মূক-বধির তরুণীটি শুরুর দিকে শুধু এটুকুই কাগজে লিখে দিতেন। তার পরে ধীরে ধীরে ইঙ্গিতে বোঝাতে থাকেন— গঙ্গার উপর সেতু, ক্রিকেট মাঠ, ফ্লাডলাইট...!

শনিবার সন্ধ্যায় ইডেন গার্ডেনের কাছে ফ্লাডলাইট চোখে পড়তেই তরুণীর মুখ খুশিতে উজ্জ্বল! হাসি ফুটল সঙ্গী পুলিশকর্মী এবং হোম কর্তৃপক্ষেরও। তার পরে আকারে-ইঙ্গিতে গলিঘুঁজি খুঁজে একেবারে নিজের বাড়ির দোরগোড়ায় পৌঁছে যাওয়া ওই তরুণীর কাছে ছিল শুধু সময়ের অপেক্ষা!

ন’মাস আগে মেটিয়াবুরুজ থেকে হারিয়ে যাওয়া বছর ছাব্বিশের আলিমা খাতুন এ ভাবেই পৌঁছে গেলেন নিজের বাড়িতে। যে বাড়ির ঠিকানা— কিউ ৫৯৪, গোলাম রব লেন, মেটিয়াবুরুজ, কলকাতা- ২৪।

আলিমারা তিন বোন, পাঁচ ভাই। মেয়েদের মধ্যে আলিমা বড়। মানসিক ভাবে তিনি পুরোপুরি সুস্থ নন। গত বছরের অগস্টে হুগলির একটি বেসরকারি বাসে উঠে পডে়ছিলেন তিনি। কিন্তু কোথায় নামবেন বলতে না-পারায় কন্ডাক্টর তাঁকে শ্রীরামপুর মহিলা থানায় নিয়ে যান। তরুণীর ঠাঁই হয় জাঙ্গিপাড়ার বাগান্ডা জনশিক্ষা প্রচার কেন্দ্রে।

হোম কর্তৃপক্ষ জানান, তরুণী আকার-ইঙ্গিতে বাড়ি ফেরার ইচ্ছা প্রকাশ করতেন। কিন্তু কোথায় বাড়ি জানাতে পারেননি। কেবল ‘কিউ ৫৯৪’ কাগজে লিখে গিয়েছেন। হোমে ওর চিকিৎসা হয়। মাস কয়েক আগে হুগলি জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষ (ডালসা)-র হোম পরিদর্শক কমিটির তরফে সচিব সৌনক মুখোপাধ্যায়, তরুণ মুখোপাধ্যায় এবং সৌরভ চট্টোপাধ্যায় ওই হোমে গেলে তরুণী তাঁদের কাছেও বাড়ি ফেরার আর্জি জানান। সৌনকবাবু বলেন, ‘‘মেয়েটি আকার-ইঙ্গিতে গঙ্গার উপর ব্রিজের কথা বোঝান। তার পরে ক্রিকেট মাঠ, যেখানে রাতে আলো জ্বলে এমনটাও বোঝা যাচ্ছিল।’’

এর পরেই সৌনকবাবুরা সিদ্ধান্ত নেন, হাওড়া ব্রিজের সামনে থেকে কলকাতার দিকে তরুণীকে নিয়ে যাওয়া হবে। ডালসা-র নির্দেশ মতোই শনিবার দুপুরে শ্রীরামপুর মহিলা থানার ওসি মনিরা বসু, হোমের কাউন্সিলর সুদেষ্ণা দাস, সুমিত চক্রবর্তী আলিমাকে নিয়ে বের হন।

আলিমা ফিরেই বাড়ির সবাইকে জড়িয়ে ধরেন। তাঁর বাবা সাহাবুদ্দিন গাজি জানান, পাঁচ সন্তানের মধ্যে ছেলে আলি আকবর বাদে সকলেই মূক-বধির। গত বছরের ১৭ অগস্ট আলিমা বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। এর আগেও কয়েক বার তিনি বাড়ি থেকে চলে গিয়েছিলেন। এ বার আর থানা-পুলিশ করেনি পরিবার। আকবর বলেন, ‘‘বোনকে যে ভাবে ওঁরা ফিরিয়ে দিয়ে গেল, আমরা কৃতজ্ঞ।’’

শনিবার দিনভর কলকাতায় আকাশের মুখ ভার ছিল। রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ আলিমা ঘরে ঢুকতেই ঝেঁপে বৃষ্টি নামে। গুমোট কেটে স্বস্তি ফেরে মেটিয়াবুরুজের ঘুপচি বাড়িটাতেও!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

deaf and dumb Young Lady Missing Eden Gardens
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE