পরিকাঠামো: সিজার করার ব্যবস্থাও মজুত। নিজস্ব চিত্র
সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল ২০১২ সালে। ওই বছরেই তৈরি হয়ে যায় পরিকাঠামোও। কিন্তু শুধুমাত্র চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর অভাবে অস্ত্রোপচার করে সন্তান প্রসব ব্যবস্থা (সিজার) চালু হল না শ্যামপুর-২ ব্লকের ঝুমঝুমি গ্রামীণ হাসপাতালে। ফলে এখানে সঙ্কটজনক অবস্থায় কোনও প্রসূতি এলে তাঁকে উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে রেফার করা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই চিকিৎসকদের।
২০১২ সালে ঠিক হয়, জেলার প্রতিটি গ্রামীণ হাসপাতালে সিজার করে সন্তান প্রসবের ব্যবস্থা থাকবে। সেই মতো জেলার বিভিন্ন গ্রামীণ হাসপাতালে ওটি-সহ সিজারিয়ান ব্যবস্থার পরিকাঠামো গড়া হয়। ডোমজুড়, জগৎবল্লভপুর, বাগনান প্রভৃতি জেলার গ্রামীণ হাসপাতালগুলিতে সিজার করে প্রসব করানোও শুরু হয়।
একই উদ্দেশ্য নিয়ে ঝুমঝুমি গ্রামীণ হাসপাতালেও তৈরি করা হয় অপারেশন থিয়েটার এবং ব্লাড ব্যাঙ্ক। এই দুটি ব্যবস্থা সিজারিয়ান ব্যবস্থার জন্য অপরিহার্য। কিন্তু সব ব্যবস্থা করার পরও এই হাসপাতালে সিজার করে প্রসব ব্যবস্থা চালু হয়নি। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, সিজারিয়ান ব্যবস্থায় সন্তান প্রসব করাতে গেলে একজন মহিলা ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং একজন অ্যানেস্থেটিস্ট প্রয়োজন। হাসপাতালে ফাঁকা রয়েছে এই দুই পদই।
শ্যামপুর-২ ব্লকে গড়ে প্রতি বছর তিন হাজার করে প্রসূতির নাম নিবন্ধীকৃত হয়। তার মধ্যে ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে ঝুমঝুমি গ্রামীণ হাসপাতালে প্রসব হয়েছে এক হাজার প্রসূতির। বাকিদের সিজার করানো হয়েছে পাশের পটলডাঙায় বাগনান-২ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা বিভিন্ন বেসরকারি নার্সিংহোমে। অল্প কিছু প্রসূতির বাড়িতে সন্তান প্রসব হয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষে ড়িতে প্রসবের সংখ্যা ছিল ১৩৮টি। ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৪টি।
ব্লক স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, স্বাস্থ্যভবন থেকে প্রতিটি ব্লকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বাড়িতে যেন কোনও প্রসব না হয়। সেই কারণেই হাসপাতালে প্রসব করানোর জন্য লাগাতার প্রচার চালানো হচ্ছে। ব্লক স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের দাবি, ঝুমঝুমি গ্রামীণ হাসপাতালে যদি সিজারিয়ান ব্যবস্থা চালু করা যেত তাহলে বাড়িতে একটি প্রসবও হত না।
এ বিষয়ে ব্লক স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানান, ঝুমঝুমি গ্রামীণ হাসপাতালে যত প্রসূতি আসেন তাঁদের অন্তত ১৫ শতাংশের সিজার করে সন্তান প্রসবের প্রয়োজন হয়। এলাকাবাসীদের বক্তব্য, এখানেই যদি সিজার করানোর ব্যবস্থা থাকত তাহলে দরিদ্র প্রসূতিদের উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে যাওয়ার ঝক্কি অনেকটা কমত। শুধু তাই নয়, উলুবেড়িয়ায় গিয়ে দালালদের হাতে পড়ে অনেক প্রসূতি সিজার করানোর জন্য নার্সিংহোমে ভর্তি হতে বাধ্য হন বলে গ্রামবাসীরা জানান।
শ্যামপুর-২ পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি জুলফিকার মোল্লা বলেন, ‘‘আমরা ঝুমঝুমি গ্রামীণ হাসপাতালে সিজার চালু করার জন্য ব্লক ও জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কাছে বহুবার আবেদন করেছি। কিন্তু কিছুই হয়নি।’’ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক অরূপ মণ্ডলের কথায়, ‘‘মহিলা ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং অ্যানেস্থেটিস্ট না এলে সিজার চালু করা সম্ভব নয়।’’ আর জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভবানী দাসের সাফাই, ‘‘স্বাস্থ্য ভবনে চিকিৎসক ও অ্যানেস্থেটিস্ট চেয়েছি। কবে পাব জানি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy