জমি-জট: এই আবাসন ঘিরেই বিতর্ক। নিজস্ব চিত্র
চন্দননগরে ‘সরকারি জমি’তেই তৈরি হয়ে গিয়েছে আবাসন! ওই নির্মাণে পুরসভা কী ভাবে ছাড়পত্র দিল, সে প্রশ্নও এখন ঘুরছে নানা মহলে। উঠেছে তদন্তের দাবি।
রথের সড়ক এবং লিচুতলার মধ্যবর্তী এলাকায় জি টি রোডের ধারে বিশাল ওই আবাসন প্রকল্প এখন শহরের অনেকের চর্চায় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, নির্মাণ শেষ হয়ে গিয়েছে এক বছর আগে। ক্রেতারা এখনও ফ্ল্যাট হাতে পাননি। কবে পাবেন, সে দিশাও নেই। অভিযোগ, প্রকল্পের জমিতে মিশে রয়েছে ১৯ কাঠা খাসজমি। যা নিয়ে একটি জনস্বার্থ মামলায় প্রকল্পের ফ্ল্যাট-বিপণি বিক্রিতে আপাতত নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। কোনও উপায় না-পেয়ে ক্রেতারা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে এবং চন্দননগর আইনি সহায়তা কেন্দ্রের দ্বারস্থ হয়েছেন।
বিরোধীরা তো বটেই, তৃণমূল কাউন্সিলরদের একাংশও মনে করছেন, এই নির্মাণ স্বচ্ছতার সঙ্গে হয়নি। ফ্ল্যাট হস্তান্তর না-হলেও ইতিমধ্যে আবাসনের একাধিক বিপণি এবং ক্যাফেটেরিয়া চালু হয়ে গিয়েছে। যাতে আদালত অবমাননা দেখছেন অনেকে। পুরসভার বিরোধী দলনেতা রমেশ তিওয়ারি বলেন, ‘‘পুরো গোলমেলে ব্যাপার। আমরা নিশ্চিত, পুরসভার সঙ্গে নির্মাণ সংস্থার অবৈধ লেনদেন হয়েছে। প্রকল্পের দোকানগুলিও বেআইনি ভাবে বিক্রি করা হয়েছে।’’ এক তৃণমূল কাউন্সিলরের দাবি, ‘‘কিছু খতিয়ে না-দেখে যে ওই ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে, তা তো স্পষ্ট। ক্রেতারা সমস্যায় পড়লেন।’’
পুরসভা অবশ্য গাফিলতির অভিযোগ মানেনি। তারা দায় চাপিয়েছে ভূমি দফতরের ঘাড়ে। মেয়র রাম চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘ওখানে যে খাসজমি রয়েছে, তা পুরসভার জানার কথা নয়। নির্মাণ সংস্থা ভূমি দফতর থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এনে জমা দিয়েছিল। তা দেখে বোর্ড-মিটিংয়ে সকলের সঙ্গে আলোচনা করেই প্রকল্পের ছাড়পত্র দেওয়া হয়। আশা করছি, শীঘ্রই সমস্যা মিটে যাবে।’’ ব্লক ভূমি আধিকারিকের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। তবে, বিষয়টি দেখার আশ্বাস দিয়েছেন জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা।
প্রকল্পটির একদিকে জি টি রোড। অন্য দিকে গঙ্গা। ২০১২ সালে কলকাতার একটি নির্মাণ সংস্থা যখন নির্মাণকাজ শুরু করে তখন রটে গিয়েছিল, ‘শহরের সবচেয়ে বড় প্রকল্প’! মোট ১৫০ কাঠা জমি। তার মধ্যে ১৩১ কাঠায় ১২ তলা আবাসন। ১৪৬টি ফ্ল্যাট। থাকছে সুইমিং পুল, একাধিক বিপণি, ক্যাফেটেরিয়া, গ্যারাজ, জলাধার। ফ্ল্যাটের দাম ৩০ লক্ষ টাকারও বেশি। নির্মাণের সময়েই ১২০টি ফ্ল্যাট ‘বুক’ হয়ে যায়।
ক্রেতাদের দাবি, তাঁরা দফায় দফায় ৯৫ শতাংশ টাকা জমা দিয়ে দিয়েছেন। কথা ছিল, ২০১৭ সালের ৩০ জুনের মধ্যে ফ্ল্যাট হস্তান্তর করা হবে। কিন্তু তা হয়নি। প্রকল্পের ভবিষ্যৎ ভেবে তাঁরা দিশাহারা। ক্রেতাদের মধ্যে রয়েছেন এ শহরের চিকিৎসক সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘এক বছর পেরিয়ে গিয়েছে। ফ্ল্যাট পেলাম না। নির্মাতারা এখন বলছেন জমি-জট। এটা আগে বলা হল না কেন? এ তো আমাদের সঙ্গে প্রতারণা।’’ আর এক ক্রেতা, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী ইন্দ্রনীল গুপ্তের ক্ষোভ, ‘‘টাকাটা মনে হচ্ছে জলে গেল। কবে যে ফ্ল্যাট পাব!’’
চন্দননগর আইনি সহায়তা কেন্দ্র জানিয়েছে, ২০১৬ সালের শেষ দিকে জনস্বার্থ মামলাটি হয়। কয়েক মাস পরেই আদালত ওই নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তার পরে কিছুদিন নির্মাণ কাজ বন্ধ ছিল। পরে তা শেষ করা হয়। কেন্দ্রের কর্ণধার বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ও মানছেন, সমস্যা জটিল। তিনি বলেন, ‘‘শহরের মধ্যে সরকারি জমি কী ভাবে প্রোমোটারের হাতে চলে গেল, তদন্ত হওয়া উচিত। ফ্ল্যাটের ক্রেতাদের ঠকানো হয়েছে। পুরসভার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।’’
কী বলছেন নির্মাতারা?
নির্মাণ সংস্থার পক্ষে ওই প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত দীপঙ্কর মুখোপাধ্যায় প্রতারণার অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁর দাবি, ‘‘সমস্যা একটা হয়েছে। সমাধানের চেষ্টা হচ্ছে। ওই ১৯ কাঠার দাম আমরা সরকারকে দিয়ে দিতে পারি বা ওই জমি ৯৯ বছরের ‘লিজ’ নিতে পারি। আদালতে দু’টি আবেদনই করেছি। শীঘ্রই আমরা ক্রেতাদের হাতে ফ্ল্যাট তুলে দিতে পারব আশা করছি।’’
দিন গুনছেন ক্রেতারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy