Advertisement
১৭ জুন ২০২৪
মনোনয়ন পর্বে এক জেলায় অশান্তি জারি, অন্য জেলায় স্বস্তিতে পুলিশ-প্রশাসন

হুগলিতে তৃণমূল বনাম তৃণমূল

হরিপালের সহদেব পঞ্চায়েতের প্রতিটি আসনেই তৃণমূলের একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। তারকেশ্বর, জাঙ্গিপাড়া, চণ্ডীতলাতেও কমবেশি একই অবস্থা।

মারমুখী: সোমবার আরামবাগ বিডিও অফিসে। ছবি: মোহন দাস

মারমুখী: সোমবার আরামবাগ বিডিও অফিসে। ছবি: মোহন দাস

নিজস্ব প্রতিবেদন
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৮ ০২:৩৪
Share: Save:

শুরুতে ছিল শুধু বিরোধীদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ। মনোনয়ন পর্বের শেষের দিকে হুগলিতে দেখা যাচ্ছে, বহু পঞ্চায়েতে তৃণমূলের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে গিয়েছে তৃণমূলই!

যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে লাগাম টানার কথা তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব বারবার বলেছেন, হুগলিতে দলের নেতাদের কাছে সেই সতর্কবার্তা কতটা পৌঁছেছে সে প্রশ্নও উঠে গিয়েছে ভোট-বাজারে। সোমবার দেখা যাচ্ছে শুধু পুরশুড়ার চিলাডাঙ্গি পঞ্চায়েতের ১৩ নম্বর আসনেই তৃণমূলের পাঁচটি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে! আরামবাগের মহকুমাশাসকের দফতরের সামনে তৃণমূলের যুব সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বাঁশ নিয়ে মারামারিতে জড়িয়েছেন দলের মূল সংগঠনের কর্মীরা। বেশ কয়েক বার পুলিশ লাঠিপেটা করে সেই ভিড় ছত্রভঙ্গ করেছে।

পুরশু়ড়া বা আরামাবাগ কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। দলের অনেকেই মানছেন, এক একটি আসনে একাধিক প্রার্থী তৃণমূলের হয়ে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। ওই সব আসনে শেষ পর্যন্ত কে দলীয় প্রতীক পাবেন, তা নিয়ে নেতাদের মধ্যে স্নায়ুর লড়াই এখন তীব্র। সাধারণ তৃণমূল সমর্থকদের অনেকেই মনে করছেন, জেলায় দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে লাগাম পরাতে পুরোপুরি ব্যর্থ। পঞ্চায়েত ভোটে ফল খারাপ হলে তার দায় ওই নেতাদের উপরেই বর্তাবে।

চুঁচুড়া-মগরা পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী সভাপতি দেবব্রত বিশ্বাস যে আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন, সেখানে আরও দু’জন দাঁড়িয়েছেন। দলীয় টিকিটের নিশ্চয়তা না পেয়ে পান্ডুয়ার কিছু তৃণমূল নেতা কংগ্রেস বা বিজেপির টিকিটে দাঁড়িয়ে পড়েছেন। পুরশুড়া পঞ্চায়েত সমিতির ১১ নম্বর আসনেও একাধিক তৃণমূল প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। দলের ব্লক সভাপতি জয়দেব জানা স্তম্ভিত, “আমার আসনেও দেখি দলের আরও একটি মনোনয়ন পত্র জমা পড়েছে। দলের জেলা নেতৃত্ব বিষয়টা দেখবে।” আরমাবাগে জেলা পরিষদের ৩৯ নম্বর আসনে তৃণমূলের তিনটি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে।

হরিপালের সহদেব পঞ্চায়েতের প্রতিটি আসনেই তৃণমূলের একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। তারকেশ্বর, জাঙ্গিপাড়া, চণ্ডীতলাতেও কমবেশি একই অবস্থা। চণ্ডীতলা-১ ব্লক থেকে গত বারের নির্বাচিত জেলা পরিষদ সদস্য তথা মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ আসফার হোসেন এ বার সেখানে দাঁড়ানোর সুযোগ পাননি। তিনি চণ্ডীতলা-১ পঞ্চায়েত সমিতির আসনে মনোনয়ন দাখিল করেছেন। বলাগড় পঞ্চায়েত সমিতির এক তৃণমূল প্রার্থী বলেন, ‘‘যাচ্ছেতাই অবস্থা। কে টিকিট পাবেন আর কে পাবেন না, তা নিয়েই সবাই চিন্তিত। আমার আসনে আরও দু’জন দাঁড়িয়েছেন। বহু আসনেই এই পরিস্থিতি।’’ সোমবার জাঙ্গিপাড়া থেকে জেলা পরিষদ আসনে মনোনয়ন দাখিল করেন গত বারের জয়ী সদস্য সাহিনা সুলতানা। শেষ বেলায় ওই আসনেই মনোনয়ন জমা দেন প্রিয়াঙ্কা নাড়ু নামে এক তরুণী প্রার্থী। তাঁর সঙ্গে এসেছিলেন দলের ব্লক সভাপতি প্রণব দাস। তিনি বললেন, ‘‘দল যাঁকে দাঁড়াতে বলবে, তাই হবে।’’

সিঙ্গুরে জেলা পরিষদের একটি আসনে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে তাপসী মালিকের বাবা মনোরঞ্জন মালিকের দাঁড়িয়ে পড়া নিয়ে প্রকাশ্যে এসেছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। শেষ বিচারে মনোরঞ্জন দলের প্রতীক পাবেন কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। সিঙ্গুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি প্রতিমা দাস মির্জাপুর-বাঁকিপুর থেকে দাঁড়িয়েছেন। ওই আসনে আরও দুই তৃণমূল প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। সিঙ্গুরের বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘দলীয় প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে প্রার্থীপদ প্রত্যাহারের চেষ্টা হচ্ছে।’’

প্রার্থী নিয়ে এই সব জট কাটিয়ে সংগঠনকে পুরোপুরি ভোটমুখী করা কতটা সাবলীল ভাবে হয়, সে প্রশ্ন থাকছেই। কারণ, যে সব প্রার্থী প্রতীক পাবেন না, তাঁরা বা তাঁদের অনুগামীরা কতটা প্রচারে নামবেন, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে অনেকেরই।

সিপিএমের হুগলি জেলা সম্পাদক দেবব্রত ঘোষের অভিযোগ, ‘‘জাঙ্গিপাড়া, ধনেখালি, আরামবাগে আমরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারিনি।’’ বিজেপি নেতৃত্বও বাধা দানের অভিযোগ তুলেছেন। কিন্তু বিরোধীরা নয়, তৃণমূলের মাথা ব্যথা অন্তর্দ্বন্দ্বই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Panchayat Election 2018 TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE