আবেদন-নিবেদন: ভাবাদিঘিতে রেলপথ নির্মাণ করতে দেওয়ার জন্য হাতজোড় করে আর্জি জানাচ্ছেন তৃণমূলের শিক্ষাসেলের এক নেতা। বুধবার। ছবি: মোহন দাস
না হামলা। না শুরুতে তেমন কোনও বিক্ষোভ। তবু কাঁদছিলেন তিনি!
কান্না ভাবাদিঘিতে রেলপথ নির্মাণ করতে দেওয়ার জন্য।
তিনি তৃণমূলের শিক্ষা সেলের এক নেতা। কিন্তু চোখের জলেও চিঁড়ে ভিজল না। বুধবার গ্রামে ঢুকে ওই তৃণমূল নেতাকে কাঁদতে দেখেই ভাবাদিঘির আন্দোলনকারীরা ছুড়ে দিলেন কটাক্ষ, ‘‘এ সব ঢং করে কী লাভ!’’
বিষ্ণুপুর-তারকেশ্বর রেলপথ নির্মাণের পথে গোঘাটের ভাবাদিঘির জট কাটাতে তৎপর হয়েছে হয়েছে তৃণমূল। মঙ্গলবার তারা গণস্বাক্ষর সংগ্রহে নেমেছিল। বুধবার তৃণমূল শিক্ষা সেলের স্থানীয় জনাপঁচিশ নেতাকর্মী ভাবাদিঘি যান। গ্রামে ঢোকার মুখে প্রথমে তাঁরা স্থানীয় গির্জাতলায় সভা করেন। তার পরে তাঁরা হাতজোড় করে গ্রামে ঢুকতেই ঝাঁঝিয়ে ওঠেন গ্রামবাসীরা— ‘তৃণমূলের হয়ে দালালি করতে এসেছেন!’’
গতিক যে সুবিধের নয়, ভালই টের পাচ্ছিল তৃণমূলের ওই দলটি। অনেক গ্রামবাসী তাঁদের কথা না শুনেই যে যাঁর ঘরে ঢুকে যাচ্ছিলেন। দেখে কাতর কণ্ঠে তৃণমূলের ওই দলটির নেতা তথা নকুণ্ডা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক রামমোহন ভট্টাচার্য বলতে থাকেন, ‘‘রাজনীতির ঊর্ধ্বে আপনাদের কাছে রেল ভিক্ষা করতে এসেছি।’’ তাতেও কাজ না-হওয়ায় কাঁদতে শুরু করেন মধ্য পঞ্চাশের ওই শিক্ষক, ‘‘রেলে বাধা দেবেন না। আপনার ছেলে পরে জানতে চাইবে। পরে বলবে, বাবা তোমার জন্যই রেল হল না।”
এক যুবককে জড়িয়ে ধরে রামমোহনবাবু যখন কাঁদছেন, তখন তাঁর সঙ্গীরা সামনে ছোটবড় যাঁকেই পাচ্ছিলেন, প্রণাম করছিলেন! কিন্তু এতে গ্রামবাসীর ক্ষোভ তো কমেইনি, উল্টে বাড়ে। শুরু হয় বিক্ষোভ। দলটিকে ঘিরে শাসকদলের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করতে থাকেন মহিলারা। এক মহিলা রামমোহনবাবুকে বলেন, ‘‘সুকুমারের (দিঘি বাঁচাও কমিটির সম্পাদক সুকুমার রায়। শ্লীলতাহানির মিথ্যা অভিযোগে তাঁকে ধরা হয়েছে বলে গ্রামবাসীর দাবি। এ দিনও জামিন পাননি তিনি) জন্য কাঁদছেন না কেন?’’
ওই বিক্ষোভ থেকে রামমোহনবাবুদের সরিয়ে নিয়ে যান ‘দিঘি বাঁচাও কমিটি’র মুখপাত্র প্রসাদ রায়। তিনি বলেন, “আমরা রেলপথের বিরোধী নয়। কিন্তু ওই রেলপথ দিঘির উপর দিয়ে নিয়ে যেতে দেব না। দিঘির উত্তরপাড়ের জমি দিয়ে রেল যাক। প্রয়োজনে আমরা বিনা পয়সায় সেই জায়গা ছেড়ে দেব।”
পরে রামমোহনবাবু বলেন, ‘‘সরকারের সঙ্গে ভাবাদিঘির মানুষের সেতুবন্ধন করার লক্ষ্যেই গিয়েছিলাম। গ্রামবাসীর সমস্যা হালকা নয়। তবে, আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস আলোচনায় বসলে সমাধান হবেই। সেই সুস্থ আলোচনায় বসাতেই আমরা গিয়েছিলাম। সুকুমারবাবুর জামিনের আর্জিও আমরা যথাস্থানে জানাব।’’
রামমোহনবাবুর কান্না নিয়ে পরে গোঘাটের বিধায়ক মানস মজুমদার বলেন, ‘‘উনি আবেগপ্রবণ মানুষ। আগামী প্রজন্মের কথা ভেবেই কেঁদে ফেলেছিলেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy