শেষ পর্যন্ত চন্দননগর পুরসভা চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হল সেখানকার পুর কমিশনার স্বপন কুণ্ডুকে। শনিবার রাতেই পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর থেকে স্বপনবাবুর কাছে ওই নির্দেশ পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আগামী ছ’মাসের জন্য তাঁকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। স্বপনবাবু কাল, সোমবার দায়িত্ব নেবেন বলে পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে।
তবে, সরকারি ওই নির্দেশে ‘প্রশাসক’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়নি। তাতে বলা হয়েছে, ২০০৬ সালের কর্পোরেশন আইন অনুযায়ী নির্বাচিত পুর-প্রতিনিধিদের কাউন্সিলর হিসেবে আর কোনও ক্ষমতা রইল না। ওই পুরসভার মেয়র, চেয়ারম্যান, মেয়র-পারিষদেরা আর কোনও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। কোন অবস্থায় সরকার পুরবোর্ড ভেঙে দেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিল, তা-ও বলা হয়েছে ওই নির্দেশিকায়। তাতে জানানো হয়েছে, এক বছরের বেশি সময় ধরে এই পুরসভায় কার্যত অচলাবস্থা চলছিল। পুরসভার প্রাথমিক কর্তব্য নাগরিক পরিষেবা দেওয়া। বিভিন্ন কারণে বর্তমান পুরবোর্ড নাগরিকদের সেই পরিষেবা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
শনিবার রাতে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর আরও একটি নির্দেশ জারি করে। তাতে বলা হয়েছে, পুরবোর্ড ভেঙে দেওয়ার ফলে পুরসভার কাজ বিঘ্নিত হতে পারে। প্রশাসনিক কাজে যাতে শূন্যতা তৈরি না হয়, সেই জন্য কমিশনার স্বপন কুণ্ডুকে পুরসভা চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হল। আগামী ছ’মাস (এই সময়ের মধ্যে পুরভোট না-হলে) অথবা নতুন নির্দেশ জারি না হওয়া পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্বে থাকবেন। বিষয়টি নিয়ে স্বপনবাবু কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
চন্দননগর পুরসভায় শাসকদলের কাউন্সিলরদের খেয়োখেয়ি নিয়ে একাধিকবার হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে তৃণমূল শীর্ঘ নেতৃত্বকে। তাতেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব পুরোপুরি মেটেনি। এর মধ্যে সম্প্রতি সেখানকার পুর কমিশনারকে লেখা চেয়ারম্যান জয়ন্ত দাসের একটি চিঠি নিয়ে জলঘোলা শুরু হয় বলে পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে। অভিযোগ, জয়ন্তবাবু পুর কমিশনারকে কদর্য ভাষায় একটি চিঠি লেখেন। যা শালীনতার সীমা ছাড়িয়েছিল। প্রশাসনিক বিষয়ের বাইরে গিয়ে তিনি কমিশনারকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছিলেন বলেও অভিযোগ। বিষয়টি সরকারের উপর মহলে তো বটেই, ডব্লিউবিসিএস সংগঠনেও আলোড়ন ফেলে। কানে যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
গত বৃহস্পতিবার কলকাতায় তৃণমূলের তরফে হুগলি জেলা পর্যবেক্ষক অরূপ বিশ্বাস বিষয়টি নিয়ে কাউন্সিলরদের সঙ্গে বৈঠক করেন। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই চিঠি নিয়ে তিনি জয়ন্তবাবুকে ভর্ৎসনা করেন। জয়ন্তবাবু নিজে কোনও মন্তব্য না করলেও ওই চিঠি লেখার জন্য দুঃখপ্রকাশও করেননি। অরূপবাবু বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীকে জানান। তার পরেই বোর্ড ভাঙার সিদ্ধান্ত হয়।
জয়ন্তবাবু শনিবার বলেন, ‘‘৩ অগস্ট আমায় একটা চিঠি দিয়েছিলেন পুর কমিশনার। ওই চিঠির ভাষাও ছিল যথেষ্ট আপত্তিকর। তারপরই আমি ওই চিঠি লিখি। আমার ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আমি দুঃখিত। তবে সরকারি সিদ্ধান্ত যখন, তা মানতেই হবে।’’ পুর কমিশনার চিঠির প্রসঙ্গ নিয়েও কিছু বলতে চাননি।
পুরবোর্ড ভাঙার সরকারি সিদ্ধান্ত ঘিরে অবশ্য তৃণমূল কাউন্সিলরদের একাংশ ক্ষুব্ধ। তাঁরা মনে করছেন, চেয়ারম্যান ব্যক্তিগত ভাবে চিঠিটি দিয়েছেন। দল তাঁর বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিতে পারত। এক জনের জন্য কেন বোর্ড ভেঙে দেওয়া হবে? পুরসভা প্রশাসক চালালে দলের ভাবমূর্তির ক্ষতি হবে। সরকারের কাছে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আবেদন করার কথাও ভাবছেন তাঁরা।
তৃণমূলের হুগলি জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী তপন দাশগুপ্ত অবশ্য বলেন, ‘‘সরকার সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy