Advertisement
০৮ মে ২০২৪

উন্নয়ন নিয়ে শাসক-বিরোধী তরজায় জমে উঠেছে লড়াই

গত পাঁচ বছরে খাতায়-কলমে উন্নয়ন কম হয়নি প্রাচীন এই শহরে। রাস্তাঘাট সংস্কার, পানীয় জলের বন্দোবস্ত থেকে মুখ্যমন্ত্রীর সাধের ত্রিফলা আলো— আধুনিকতার দিকে কয়েক কদম এগিয়েছে শ্রীরামপুর। ইতিহাসের নানা স্মৃতিমাখা এই শহর এখন ভোটের উত্তাপে গা সেঁকছে। উন্নয়নের ধ্বজা উড়িয়ে ভোটের ময়দানে উপস্থিত শাসক দল তৃণমূল।

সময় শেষ হয়ে আসছে। এ বার গুছিয়ে রাখার পালা।—নিজস্ব চিত্র।

সময় শেষ হয়ে আসছে। এ বার গুছিয়ে রাখার পালা।—নিজস্ব চিত্র।

প্রকাশ পাল
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৫ ০১:৩২
Share: Save:

গত পাঁচ বছরে খাতায়-কলমে উন্নয়ন কম হয়নি প্রাচীন এই শহরে।

রাস্তাঘাট সংস্কার, পানীয় জলের বন্দোবস্ত থেকে মুখ্যমন্ত্রীর সাধের ত্রিফলা আলো— আধুনিকতার দিকে কয়েক কদম এগিয়েছে শ্রীরামপুর। ইতিহাসের নানা স্মৃতিমাখা এই শহর এখন ভোটের উত্তাপে গা সেঁকছে। উন্নয়নের ধ্বজা উড়িয়ে ভোটের ময়দানে উপস্থিত শাসক দল তৃণমূল।

তা বলে হাত গুটিয়ে বসে আছেন বিরোধীরা? মোটেই নয়। তাঁদের অভিযোগ, বেছে বেছে নিজেদের জেতা ওয়ার্ডেই কাজ করেছে তৃণমূল শাসিত পুরবোর্ড। আর বিরোধীদের ওয়ার্ড ‘দুয়োরানি’ হিসেবে থেকে গিয়েছে। শাসক দলের ‘অনাচার’ নিয়েও প্রশ্ন তুলতে ছাড়ছে না তারা।

বিরোধীদের অভিযোগ, গত পাঁচ বছরে সর্বত্র সমান কাজ হয়নি। তৃণমূলের চার কাউন্সিলর উত্তম রায়, গৌরমোহন দে, পিন্টু নাগ এবং প্রতিভা দেবী সিংহের ওয়ার্ডেই কাজ হয়েছে সবচেয়ে বেশি। প্রথম তিন জন দাপুটে কাউন্সিলর হলেও প্রতিভা অবশ্য আনকোরা। ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী, বিদায়ী কাউন্সিলর মিত্রানী অগ্রবালের অভিযোগ, ‘‘আমাদের কোনও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। বার বার আবেদন করেও কাজ পেতে হিমশিম খেতে হয়েছে।’’ ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর তথা দলীয় প্রার্থী পম্পা ভট্টাচার্যের ওয়ার্ডও একই ভাবে পরিষেবার ক্ষেত্রে বঞ্চিত হয়েছে বলে কংগ্রেসের অভিযোগ।

বিদায়ী পুরপ্রধান অমিয় মুখোপাধ্যায় অভিযোগ মানেননি। তাঁর কথায়, ‘‘কাজ নিয়ে কোনও ভেদাভেদ করা হয়নি। এটা বিরোধীদের অপপ্রচার।’’ আর উত্তম, পিন্টু বা নতুন প্রার্থী অসীম পণ্ডিতরা বলছেন, বিরোধীদের কাজ করার মানসিকতাই ছিল না!

উন্নয়ন নিয়ে যতই শাসক-বিরোধী আকচা-আকচি থাক, সাধারণ মানুষ কিন্তু বেশ কিছু বিষয়ে তিতিবিরক্ত। তাঁদের বক্তব্য, শহরের কয়েকটি জায়গায় টাইলস বসানো ফুটপাথ হলেও স্টেশনে ঢোকার মুখে এনএস অ্যাভিনিউ বা রাজেন্দ্রবাগ রোড জুড়ে ফুটপাথ স্রেফ চুরি গিয়েছে। ব্যবসায়ীদের বাড়িয়ে দেওয়া ডালায় সেখানে হাঁটার পথ নেই। সাইকেল, রিকশা বা অন্য গাড়ির গুঁতো খেতে খেতে পথচলতি মানুষকে এগোতে হয়। ভোটের বাধ্যবাধকতা মেনে পুর-কর্তৃপক্ষ সে দিকে তাকিয়ে দেখেন না। একই কারণে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও প্রতিবাদের ধারকাছ দিয়ে যায় না। প্রশ্ন রয়েছে ত্রিফলা আলো নিয়েও। কয়েকটি ওয়ার্ডে রাস্তার ধারে ওই আলো বসেছে। কিন্তু সেখানে ভেপার বা হ্যালোজেনও সমানতালে জ্বলতে থাকে। পুরবাসীর অভিযোগ, আধুনিক বাতি লাগানো সত্ত্বেও চড়া আলো জ্বালানোয় বিদ্যুত্‌ বেশি খরচ হচ্ছে। ত্রিফলার উদ্দেশ্যও মার খাচ্ছে।

প্রবীণ নাগরিকদের অনেকেরই আক্ষেপ, ‘‘প্রোমোটাররাই শহরটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করেছে। পুরসভার ভ্রূক্ষেপ নেই।’’

বিরোধীদের একাংশের বক্তব্য, রথের চাকা উল্টো দিকে গড়াতে শুরু করেছে। শাসক দলের কাজকর্মে বীতশ্রদ্ধ মানুষ এ বার মুখ ফেরাবেন তৃণমূলের দিক থেকে। গত লোকসভা ভোটে ফলাফলের নিরিখে কয়েকটি ওয়ার্ডে বিজেপির তুলনায় পিছিয়ে থাকাকে তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে ধরছেন তাঁরা। ভোট কাটাকাটির অঙ্ক এবং নির্দলদের উপস্থিতি কয়েকটি ওয়ার্ডে তৃণমূলকে ভোগাতে পারে বলে তাদের অভিমত। তার উপর কিছু জায়গায় দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও তৃণমূলকে ভাবাচ্ছে। সিপিএম সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলছে শাসক দলের বিরুদ্ধে। দলের জেলা সম্পাদক সুদর্শন রায়চৌধুরীর দাবি, ‘‘শ্রীরামপুর সংস্কৃতির জায়গা। যে ধরনের সন্ত্রাস চলছে, তা এ শহরে ভাবা যায় না।’’

অভিযোগ মানেনি তৃণমূল। জয়ের ব্যাপারে তারা আশাবাদী। জয়ের রাস্তা মসৃণ করতে পোড়খাওয়া কাউন্সিলর গিরিধারী সাহা, রাজেশ শা-সহ কয়েক জনকে কংগ্রেস থেকে দলে টেনেছে তারা। আর শাসক দলের একাংশই বলছে, বিরোধীরা দুর্নীতি-দুর্নীতি করে চেঁচালে কি হবে, গত পাঁচ বছরে তারা কার্যত আন্দোলনই করেননি। দলীয় প্রার্থীদের জেতাতে অবশ্য চেষ্টার ত্রুটি রাখছেন না তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলছেন, ‘‘আমরা আশাবাদী। মানুষ আমাদের পাশেই থাকবেন। সেই সাড়াই পাচ্ছি মানুষের কাছে।’’

মানুষ কী ভাবছেন, প্রশ্ন সেটাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE