বেহাল: ব্লক অফিসের মধ্যে পড়ে রয়েছে আবর্জনা।ছবি: সুব্রত জানা
জেলা প্রশাসনের খাতায়-কলমে স্বচ্ছ ভারত মিশন-সহ বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প রূপায়ণে হুগলিতে প্রথম সারিতে রয়েছে আরামবাগ ব্লক। কিন্তু সেই ব্লক অফিস চত্বরই ভরা থাকে আবর্জনায়। কিছু শংসাপত্র পেতেও তাঁদের নাকাল হতে হচ্ছে বলে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ তুলছেন ভুক্তভোগীরা। এ ছাড়া রয়েছে বিভিন্ন ভাতা না-পাওয়া নিয়ে ক্ষোভও।
প্রতি মঙ্গল এবং বৃহস্পতিবার— দু’দিনই ওবিসি শংসাপত্রের জন্য বিরাট লাইন পড়ে ব্লক অফিসে। মঙ্গলবারই মলয়পুর থেকে আসা রাহুল কর্মকার ঠায় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে বিরক্তি প্রকাশ করছিলেন। তাঁর অভিযোগ, দেড় মাস ধরে ঘুরেও ওবিসি শংসাপত্র মিলছে না। একই সুরে বাতানল গ্রাম থেকে আসা বিনয় মোদক নামে আক এক যুবকের ক্ষোভ, ‘‘২০১১ সালে আর্থ-সামাজিক সমীক্ষার সময় প্রচার করা হল প্রতিটি পরিবারের নথি সরকারি দফতরের কম্পিউটারে নথিভুক্ত থাকবে। যে কোনও শংসাপত্র পাওয়া যাবে দু’মিনিটে। সর্বত্রই কম্পিউটারে ছয়লাপ। কিন্তু শংসাপত্র দ্রুত পাচ্ছি কই?’’
শুধু ওবিসি শংসাপত্রই নয়, পরিবারের আয় এবং ঠিকানা সংক্রান্ত শংসাপত্র পেতেও একই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হচ্ছেন বহু মানুষ। তাঁদেরই এক জনের কথায়, ‘‘আয় এবং ঠিকানা সংক্রান্ত শংসাপত্র পেতে পঞ্চায়েতে পর ব্লক অফিসে নানা টালবাহানায় প্রায় দু’মাস টপকে যাচ্ছে।” এ ছাড়াও উপভোক্তা হিসেবে উপযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও বার্ধক্য ভাতা ও বিধবা ভাতা প্রকল্পে অনেককে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে না, এমন অভিযোগও ব্লক অফিসে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে। আবার জনপ্রতিনিধিদের সুপারিশ ছাড়া দুঃস্থদের বিশেষ ‘সাধারণ ত্রাণ’ (মাসে মাথাপিছু ১২ কেজি চাল এবং ১২০ টাকা) মিলছে না বলেও অভিযোগ।
শংসাপত্র নেওয়ার জন্য এভাবেই লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ছবি: সুব্রত জানা
এই সব অভিযোগ আরামবাগ ব্লক প্রশাসনের ক্ষেত্রে কী ভাবে উঠছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন জেলা প্রশাসনের কর্তাদেরই একাংশ। কারণ, জেলা প্রশাসনই জানিয়েছে, ১০০ দিন কাজ প্রকল্প, জাতীয় সামাজিক সহায়তা প্রকল্প, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, গীতাঞ্জলি, স্বচ্ছ ভারত মিশন ইত্যাদি জনপ্রিয় প্রকল্পগুলি রূপায়ণের ক্ষেত্রে আরামবাগ ব্লক দীর্ঘদিন ধরে প্রথম সারিতে থাকে। অন্যান্য ব্লকে যখন গুরুত্বপূর্ণ পদগুলি ৮-১০টি করে ফাঁকা রয়েছে, তখন আরামবাগ ব্লকে মাত্র ৩টি পদ শূন্য। ব্লকের আধিকারিক ও কর্মীদের মধ্যে ভাল বোঝাপড়াতেই সরকারি প্রকল্পগুলি যথাসময়ে রূপায়িত হয়। বৈদ্যুতিন ব্যবস্থাকেও যথাযথ কাজে লাগিয়ে উৎকৃষ্ট পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা চালায় ব্লক প্রশাসন।
কী বলছেন বিডিও?
বিডিও বিশাখ ভট্টাচার্য বলেন, “ওবিসি শংসাপত্রের আবেদনের প্রক্রিয়া আমাদের তরফে দিন দশের মধ্যে সম্পন্ন করে মহকুমাশাসকের অফিসে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সাধারণত এক মাসের মধ্যেই উপভোক্তা শংসাপত্র পেয়ে যান। কিছু ক্ষেত্রে তদন্তের প্রয়োজনে আয় ও ঠিকানা সংক্রান্ত শংসাপত্র দিতে দেরি হয়।’’ একই সঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘বিশেষ ত্রাণ উপভোক্তাদের হাতে হাতে দেওয়া হয়। জনপ্রতিনিধিদের সুপারিশ লাগে না। নতুন বার্ধক্য এবং বিধবা ভাতা দেওয়ার ক্ষেত্রে পঞ্চায়েতগুলিকে দ্রুত তালিকা পাঠাতে বলা হয়েছে।’’ ব্লক অফিস চত্বর যাতে নিয়মিত পরিষ্কার রাখা যায়, সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন বিডিও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy