Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

রাতপাহারার টাকা চেয়ে বিজ্ঞপ্তি, বিপাকে কাউন্সিলর

‘আপনারা ৫০ টাকা দিন, বদলে আমরা নিরাপত্তা দেব’। কার্যত এই মর্মেই দিন কুড়ি আগে বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে বেলুড়ের কয়েকটি অঞ্চলে। আর সেই বিজ্ঞপ্তিতে সই রয়েছে খোদ এলাকার তৃণমূল কাউন্সিলর ও বেলুড় থানার শিক্ষানবীশ এক সাব-ইনস্পেক্টর।আর সেই বিজ্ঞপ্তিকে ঘিরেই তৈরি হয়েছে বিতর্ক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বেলুড় শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৬ ০০:৫০
Share: Save:

‘আপনারা ৫০ টাকা দিন, বদলে আমরা নিরাপত্তা দেব’। কার্যত এই মর্মেই দিন কুড়ি আগে বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে বেলুড়ের কয়েকটি অঞ্চলে। আর সেই বিজ্ঞপ্তিতে সই রয়েছে খোদ এলাকার তৃণমূল কাউন্সিলর ও বেলুড় থানার শিক্ষানবীশ এক সাব-ইনস্পেক্টর।আর সেই বিজ্ঞপ্তিকে ঘিরেই তৈরি হয়েছে বিতর্ক।

শনিবার সকালে ওই বিজ্ঞপ্তি সামনে আসার পরে হাওড়ার পুর-কর্তারাও বলছেন, পুরসভার নাম লেখা কাগজে এই বিজ্ঞপ্তি জারি করার কোনও অধিকার নেই কাউন্সিলরের। হাওড়া পুরসভার মেয়র রথীন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কোনও কাউন্সিলরই এটা করতে পারেন না। আমি অন্তত এ রকম কোনও বিজ্ঞপ্তি জারি করিনি। বেলুড়ে ঠিক কী হয়েছে, তা খোঁজ নিয়ে দেখব।’’ তিনি আরও জানান, কোনও ক্ষেত্রে তাঁর নির্দেশে একমাত্র পুর কমিশনার কোনও বিজ্ঞপ্তি জারি করতে পারেন। কিন্তু বেলুড়ের এই বিজ্ঞপ্তির ক্ষেত্রে পুর-কর্তৃপক্ষ পুরোপুরি অন্ধকারেই রয়েছেন।

সাধারণত কোনও এলাকায় রাত পাহারার দরকার হলে নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ করেন বাসিন্দারা নিজেরাই। তার জন্য নির্দিষ্ট চাঁদা বাসিন্দারাই স্থির করেন ও সংগ্রহ করেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা হয়নি।

স্থানীয় সূত্রের খবর, হাওড়া পুর নিগমের বালি শাখা অফিসের নাম লেখা একটি কাগজে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে, ৫৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিধান পল্লি, ঠাকুর রামকৃষ্ণ লেন, বঙ্কুবিহারী ঘোষ লেন, ধর্মতলা রোডে রাত পাহারা দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর জন্য প্রতি মাসে বাড়ি প্রতি ৫০ টাকা করে দিতে হবে। আবার কেউ বাড়িতে না থাকলে, ওই কাগজে উল্লেখ করা তিন নিরাপত্তারক্ষীকে জানিয়ে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এই বিজ্ঞপ্তির নীচেই গত ২৫ জুন তারিখে স্থানীয় কাউন্সিলর প্রাণকৃষ্ণ মজুমদারের সই ও শিলমোহর রয়েছে।

যদিও প্রাণকৃষ্ণবাবু বলেন, ‘‘বিজ্ঞপ্তি জারির কোনও অধিকার আমার নেই। রাতপাহারার কাগজটা নেপালি নিরাপত্তারক্ষীরা আমাকে দিতে এসেছিলেন। আমি শুধুমাত্র কাগজটি রিসিভ করে সই করেছিলাম। সেটাই এখন বিকৃত করে বলা হচ্ছে।’’ কিন্তু যে কাগজটিতে ওই বিজ্ঞপ্তি ছাপা হয়েছে, তার উপরে তো ‘বেলুড়/হাওড়া এবং হাওড়া কর্পোরেশন (বালি পৌরসভা অফিস)’ লেখা রয়েছে। তা হলে স্বভাবতই ধরে নিতে হয়, ওই বিজ্ঞপ্তি পুরসভার জারি করা। আর যদি তা না হয়, তা হলে সেটি নকল। তবে ওই নেপালি নিরাপত্তারক্ষীদের দেওয়া কাগজ রিসিভ করলেন কী ভাবে? প্রাণকৃষ্ণবাবু বলেন, ‘‘অতটা খতিয়ে দেখা হয়নি। রাতপাহারা দিতে চেয়ে নিরাপত্তারক্ষীরা আবেদন জানাতে এসেছিলেন, আমিও বাসিন্দাদের স্বার্থে আপত্তি করিনি। এর বেশি কিছুই জানি না।’’

ওই বিজ্ঞপ্তিতে নেপালের বাসিন্দা তিন ব্যক্তির নাম ও ছবি সাঁটা রয়েছে। সেই ছবির উপরে বেলুড় থানার এর শিক্ষানবীশ সাব-ইনস্পেক্টরের সইও রয়েছে। তবে ওই অফিসার সইটি করেছেন কাউন্সিলর সই করার ১০ দিন আগে, অর্থাৎ ১৫ জুন। পুলিশ সূত্রের খবর, কোনও এলাকায় নিরাপত্তারক্ষী রাখা হলে তাঁদের সম্পর্কে স্থানীয়েরা পুলিশের কাছে তথ্য জমা দিয়ে রাখেন, এটাই নিয়ম। কিন্তু টাকা চাওয়া হয়েছে এমন বিজ্ঞপ্তিতে পুলিশের সই ও শিলমোহর কেন? হাওড়া সিটি পুলিশের কমিশনার দেবেন্দ্রপ্রকাশ সিংহ বলেন, ‘‘এটা পুলিশের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে না। তা-ও কেন এটা হল, খতিয়ে দেখছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Councillor TMC conflict
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE