ঘুরেছেন ১৩৫ কিলোমিটার। সময় নিয়েছেন ২৭ দিন। ঘোরার খরচের বিল জমা দিয়েছেন ৪ হাজার ৭৮৪ টাকা। আর এই বিল নিয়েই আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে আরামবাগ মহকুমার পুরশুড়ার স্বাস্থ্যকর্মী রণজিত্কুমার সাহার বিরুদ্ধে। যিনি আবার তৃণমূলের রাজ্য সরকারি কর্মচারী সমিতির (ফেডারেশন) হুগলি জেলার সভাপতিও। তবে এই প্রথম নয়, এর আগেও তাঁর বিরুদ্ধে একই অভিযোগ উঠেছিল। গত বছর আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে তাঁকে তাঁর পদ থেকে সরিয়েও দেওয়া হয়েছিল। ফের আর একবার তাঁর বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় অস্বস্তিতে পড়েছে দল। রণজিত্বাবুর দুর্নীতিতে অভিযুক্ত হওয়া নিয়ে পুরশুড়ার বিধায়ক তৃণমূল বিধায়ক পারভেজ রহমান বলেন, ‘‘ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং ওই কর্মীর বিরুদ্ধে আগেও দুর্নীতির অভিযোগ পেয়েছি। রাজ্যস্তরে তা জানিয়ে ওঁকে সরিয়ে দিতে অনুরোধও করেছি। ফের বিষয়টি রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের দৃষ্টিতে আনা হবে।’’ মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক (আরামবাগ) সিদ্ধার্থ বসু বলেন, ‘‘বিষয়টি জেলা স্বাস্থ্য দফতরে জানানো হয়েছে।’’ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী বলেন, ‘‘অভিযোগ হাতে পাইনি। পেলে খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’’
মহকুমা ট্রেজারি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছরের মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত জমা দেওয়া রণজিৎবাবুর ভ্রমণ ভাতায় দেখা যাচ্ছে ২৭ দিনে তিনি ১৩৫ কিলোমিটার ভ্রমণ করেছেন। কোনওদিন চুঁচুড়া, কোনওদিন স্বাস্থ্যভবন এবং কোনওদিন এজি বেঙ্গল। মোট ভ্রমণ ভাতা দাবি করেছেন ৪ হাজার ৭৮৪ টাকা। কিলোমিটার এবং টাকার অঙ্ক ছাড়াও প্রশ্ন উঠেছে একজন স্যানিটারি ইন্সপেক্টর স্তরের কর্মীর স্বাস্থ্যভবন বা জেলা স্বাস্থ্য দফতরে যাওয়ার প্রয়োজন আছে কিনা তা নিয়েও। মহকুমা ট্রেজারি অফিসার সোমনাথ দে বলেন, ‘‘বিলে অসঙ্গতি আছে, তাই সংশ্লিষ্ট ডিডিওর কাছে তা ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’ অন্যদিকে, ভুয়ো বিলটি ট্রেজারিতে পাঠানোর আগে তা অনুমোদন করে বিতর্কে জড়িয়েছেন ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক অ্যাপেলো বসুও (তিনি ড্রয়িং অ্যান্ড ডিসবারসিং অফিসার)। বিষয়টা জানাজানি হওয়ায় ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং ওই স্বাস্থ্যকর্মীর বিরুদ্ধে যৌথভাবে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তদন্তের দাবি জানিয়য়েছেন স্বাস্থ্যকর্মীদের একাংশ।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, ব্লক স্যানিটারি ইন্সপেক্টর স্তরের কোনও কর্মীর জেলা স্বাস্থ্য দফতরে যাওয়ার প্রয়োজন থাকলেও স্বাস্থ্যভবনে যাওয়ার কোনও প্রয়োজন হয় না। দলের সরকারি কর্মচারী সংগঠনের প্রধান পদে থেকে দুর্নীতিতে বার বার অভিযুক্ত হওয়া নিয়ে পুরশুড়ার ব্লক স্যানিটারি ইন্সপেক্টর রণজিত্বাবু বলেন, ‘‘আগের অভিযোগগুলি নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না। এ বারের অভিযোগ নিয়ে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকই জবাব দেবেন।’’ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক অ্যাপেলো বসু বলেন, ‘‘বিলটি খতিয়ে না দেখেই হয়তো স্বাক্ষর করেছি। প্রয়োজনে সংশোধন করা হবে। তবে ওই কর্মীর বিভিন্ন কাজ করিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা থাকায় তাঁকে স্বাস্থ্যভবনে পাঠাতে হয়।’’
পুরশুড়া ব্লক স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, এলাকার মানুষ এবং আশা কর্মীদের কাছ থেকে অন্যায়ভাবে টাকা নেওয়ার কিছু নির্দিষ্ট অভিযোগের পর তদন্ত করে ২০১৪ সালের ২৩ জুলাই হুগলির তত্কালীন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তনিমা মণ্ডল রণজিৎবাবুকে গুরুত্বপূর্ণ ওই পদ থেকে সরিয়ে দেন। কিন্তু দু’মাস যেতে না যেতেই ৪ সেপ্টেম্বর রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা (ডিরেক্টর অব হেলথ সার্ভিস) বিশ্বরঞ্জন শতপথির নির্দেশে সে পদ তাঁকে ফিরিয়ে দিতে হয়। স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীদের অভিযোগ, পদে পুনর্বহালের পর থেকে ওই প্রভাবশালী তথা সরকারি কর্মচারী সংগঠনের নেতার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিতে পারেনি জেলা স্বাস্থ্য দফতর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy