Advertisement
০১ অক্টোবর ২০২৩

শান্ত পাড়াটা বদলাল কবে!

পিছনে হর্ন দেওয়ার পাশাপাশি আলোও ফেলে সে। আমি রাস্তা থেকে কিছুটা সরে দাঁড়াই। দেখি, লাল মোটরবাইকে লাল রঙের হেলমেট পরা একটি ছেলে।

মোনালিসা ঘোষ
শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:৩৫
Share: Save:

গত সাত বছর ধরে চাকরি সূত্রে একটু রাতে বাড়ি ফিরতেই অভ্যস্ত আমি। আন্দুলের মধ্য ঝোড়হাটের যে পাড়ায় আমার বাড়ি, সেটা পুরনো বনেদি পাড়া। আমরাও এই এলাকার প্রায় ৯০ বছরের বাসিন্দা। আমাদের পাড়া বরাবরই শান্ত। কারও কোনও আপদে-বিপদে সকলেই এগিয়ে আসেন। কিন্তু বুধবার রাতে সেই পাড়াতেই একটি অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হল আমাকে।

রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে অফিসের গাড়ি থেকে নেমেছিলাম আমি। সেখান থেকে হাঁটা পথে আমার বাড়ি মিনিট দুয়েকের। প্রায় প্রতিদিনই বাবা আনতে আসেন। কিন্তু শরীর ভাল না থাকায়, গতকাল তাঁকে আসতে বারণ করেছিলাম আমি। যে জায়গায় নেমেছিলাম, তার পাশেই একটা ফাঁকা বড় জমি রয়েছে। গাড়ি থেকে নেমে ওই জমিতে দুটো ছেলেকে আনাগোনা করতে দেখে সন্দেহ হয়েছিল। কিন্তু আমল দিইনি। আমি হেঁটেই বাড়ির দিকে এগোচ্ছিলাম।

গলির কাছে আমার পিছনে একটি বাইক এসে দাঁড়ায়। পিছনে হর্ন দেওয়ার পাশাপাশি আলোও ফেলে সে। আমি রাস্তা থেকে কিছুটা সরে দাঁড়াই। দেখি, লাল মোটরবাইকে লাল রঙের হেলমেট পরা একটি ছেলে। সে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বাইক নিয়ে বেরিয়ে যায়। আমিও ফের হাঁটতে থাকি। বাড়ি ঢোকার মুখে দেখি, বাইকটা আবার উল্টো পথে ফিরছে। এ বার খানিকটা সতর্ক হয়ে যাই। এরপরই বাইকটাকে আমার সামনে নিয়ে এসে ব্যাগটা টেনে নেওয়ার চেষ্টা করে ছেলেটা। আমি বাধা দিতেই হাতে মেরে বাইক নিয়ে পালায় সে। আমি বাইকের পিছনে ছুটি। মোড়ের মাথায় গিয়ে সে আমাকে দেখে নেওয়ারও হুমকি দেয়।

বাড়ি ফিরে মা-বাবাকে আর অফিসের সহকর্মীদের বিষয়টি জানাই। পুলিশের সঙ্গেও কথা বলি। কিন্তু ঘটনার এখানেই শেষ নয়।

ফোনে কথা বলতে বলতেই হঠাৎ আমার নজরে আসে, কাচের জানলায় কান-মুখ রেখে কেউ আমাদের কথা শোনার চেষ্টা করছে। আমি চিৎকার করে জানলা খুলতেই দৌড়ে পালায় সে। আমার অনুমান, যে বাইক নিয়ে ওই কাজ করেছিল, সে বা তার কোনও অনুচর আড়ি পেতে আমাদের আলোচনা শোনার চেষ্টা করছিল।

সম্প্রতি পাড়ায় চুরি-ছিনতাইয়ের কথা শুনছি। মাস খানেক আগেই এক পড়শির বাড়িতে চুরি হয়ে গিয়েছে। দিনদুপুরে রাস্তায় এক যুবতীর শ্লীলতাহানির অভিযোগও শুনেছি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ধরা পড়েনি কেউ।

আমি আমার এলাকা নিয়ে গর্বিত। সেই এলাকায় এ ভাবে কালি ছেটানোর চেষ্টার বিষয়টা ভয়ের নয়, ভাবনার। রাত দশটায় নিজের এলাকায় একা চলাফেরা করতে গেলেও যদি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হয়, তাহলে সেটা

পুলিশ-প্রশাসনের কাছে সুখকর বিষয় নয়। রাজনৈতিক নেতারাও এই ঘটনার দায় এড়াতে পারেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE