রাজপথ থেকে অলিগলি— সর্বত্র আলোর বন্যা। তাতে চমক তো রয়েছেই। চমক রয়েছে থিমেও!
কলকাতার কাছের জেলা হুগলির শহরাঞ্চলের পুজোয় এখন থিমের ছড়াছড়ি। সব মণ্ডপেই পঞ্চমীর রাত থেকে উপচে পড়ছে ভিড়। পুজোর আনন্দে মেতে উঠেছে গঙ্গাপাড়ের কোন্নগর, উত্তরপাড়া থেকে শিল্পাঞ্চলের ডানকুনি, চণ্ডীতলাও।
কোন্নগর দক্ষিণপাড়া সর্বজনীন বড় বাজেটের পুজো। এখানে মণ্ডপ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে পাহাড়ের ঘুম স্টেশনকে। পাহাড়ি পথে কু-ঝিকঝিক টয় ট্রেনের আমেজ পাচ্ছেন দর্শকেরা। ধর্মডাঙা সর্বজনীনের পুজোয় উঠে এসেছে সিমলা পাহাড়ের প্রতিচ্ছবি। থিমপুজোর কল্যাণে পাহাড়ি বাঁকের পথঘাটের দেখা মিলছে কোন্নগর শহরেই! কোন্নগর বারোয়ারিতলার প্রতিমা এসেছে কৃষ্ণনগরের ঘুর্নি থেকে। তা দেখে বাহবা দিচ্ছেন দর্শক। রাজরাজেশ্বরীতলার ঘোষাল বাড়ির পুজোয় ঐতিহ্যের টানে মানুষের মেলা বসে। তারই সাতকাহন শোনাচ্ছিলেন সুবোধ আর হেমন্ত ঘোষালেরা। অন্তত ৫৩০ বছরের এই পুজো প্রতিপদে শুরু হয়। কোন্নগর হরিসভা থেকে মাস পয়লায় নারায়ণ আসেন ঘোষাল বাড়িতে। সারা বছরই পুজো হয়।
পাশের শহর উত্তরপাড়াতেও থিমপুজোর জোয়ার। উত্তরপাড়া স্টেশন লাগোয়া মনমোহন উদ্যানে (সি এ মাঠ) নিউ কলোনি সর্বজনীনের পুজোটি আলোর মালায় সেজে উঠেছে। মন্দিরের আদলে তৈরি হয়েছে এখানকার মণ্ডপ। শিবাজি সঙ্ঘের পুজোর আকর্ষণ গামছা দিয়ে তৈরি মণ্ডপ এবং প্রতিমা। মণ্ডপের ভিতরে বসানো হয়েছে বিভিন্ন আকারের পুতুল। জিটি রোড ধরে এসে ভদ্রকালী বলাকার মণ্ডপে ঢুকলে যেন মায়াবী পরিবেশ। মণ্ডপসজ্জায় নজর কাড়ছে কোতরং বন্ধুমহল।
ভদ্রকালী ইউথ কোরের উদ্যোক্তারা এ বার পরিবেশ-বান্ধব প্রতিমা গড়েছেন প্লাস্টার অব প্যারিস দিয়ে। দেবীর এখানে নানা রূপ। গুহার ভিতর আদিম যুগের পরিবেশ। হিন্দমোটর অগ্রণী সঙ্ঘে শুধুই খমকের মনভোলানো সুর! এ বার তাদের পুজো ভাবনায় বাউলদের কাহিনি তুলে ধরা হয়েছে মডেলের মাধ্যমে। বাউলের কৃত্রিম আখড়ার ঠিকানা যেন এই পুজো প্রাঙ্গণ! উত্তরপাড়া কাঁঠালবাগান বাজারে আবাহনের চোখধাঁধানো মণ্ডপের সঙ্গে একচালার প্রতিমা আকর্ষণীয়। মহিলাদের পরিচালনায় মধ্য ভদ্রকালী সমপ্রাণের পুজোয় পারিবারিক পুজোর আমেজ।
ডানকুনির রামকৃষ্ণ স্পোর্টিংয়ে পুজোর থিম ‘পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর উত্থান’। নানা যুগে নারীশক্তির জয়গান করা হয়েছে এখানে। নানা আঙ্গিকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে অসামান্যা নারীদের কাহিনি। পুজো কমিটির কর্তা কৃষ্ণেন্দু মিত্র বলেন, ‘‘নারী কী ভাবে শক্তির উৎস হয়ে উঠেছে পুরাণ এবং ইতিহাসের নানা কাহিনিতে তা পরিস্ফূট হয়েছে। সেই সব কাহিনিই এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।’’ ডানকুনি ভ্রাতৃ সঙ্ঘের মণ্ডপ তৈরি হয়েছে কন্যাকুমারীর মন্দিরের আদলে। মিলন সঙ্ঘের মণ্ডপ তৈরি হয়েছে সাঁচির বৌদ্ধমন্দিরের অনুকরণে। মনোহরপুর পূর্বের পুজো ভাবনায় ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ সচেতনতা। বাঘাযতীন স্পোর্টিংয়ের পুজোয় প্রাকৃতিক পরিবেশ বাঁচানোর আর্তি। মণ্ডপ জুড়ে গাছপালা আর কৃত্রিম পশুপাখির অবাধ বিচরণ।
চণ্ডীতলা নবজাগরণ সঙ্ঘের মণ্ডপ তৈরি হয়েছে রাজস্থানী মন্দিরের আদলে। পুজো কমিটির কর্তা সুবীর মুখোপাধ্যায় জানান, নবমীতে সমাজের অবহেলিত লোকজনকে দেবতাজ্ঞানে পুজো করা হবে। জনাই কল্যাণ সমিতিতে নালন্দার বিশ্ববিদ্যালয়ের ধ্বংসস্তুপ উঠে এসেছে মণ্ডপ হিসেবে। চণ্ডীতলা হাটবাজার ব্যবসায়ী সমিতির পুজোর থিম ‘বিশ্ব উষ্ণায়ন’। পুজো কমিটির তরফে সুরজিৎ মণ্ডল বলেন, ‘‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইভ’ নিয়েও কর্মসূচি নিচ্ছি আমরা।’’
শুধু ওই পুজো কমিটিই নয়, উৎসবের মধ্যেও সমাজকল্যাণের কর্মসূচি নিয়েছে আরও অনেকেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy