Advertisement
০২ মে ২০২৪

নগদে টান, ভিড় নেই তারকেশ্বর মন্দিরে

সকাল ন’টা। তারকেশ্বর মন্দির খোলা থাকলেও দেখা নেই ভক্তদের। ডালা সাজিয়ে মাছি তাড়াচ্ছে মন্দির সংলগ্ন দোকানগুলি। খদ্দেরের অপেক্ষায় বসে রয়েছে মন্দির সংলগ্ন হোটেল থেকে খেলনার দোকানি।

খালি পড়ে পুজোর উপকরণ বিক্রির দোকানে। ছবি: দীপঙ্কর দে।

খালি পড়ে পুজোর উপকরণ বিক্রির দোকানে। ছবি: দীপঙ্কর দে।

প্রকাশ পাল
তারকেশ্বর শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৬ ০০:৫৪
Share: Save:

সকাল ন’টা।

তারকেশ্বর মন্দির খোলা থাকলেও দেখা নেই ভক্তদের। ডালা সাজিয়ে মাছি তাড়াচ্ছে মন্দির সংলগ্ন দোকানগুলি। খদ্দেরের অপেক্ষায় বসে রয়েছে মন্দির সংলগ্ন হোটেল থেকে খেলনার দোকানি। বেলা বাড়তেও ছবিটা বিশেষ বদলাল না।

নোট বাতিলের চোটে গত কয়েক দিন ধরেই ভিড় নেই শৈবতীর্থে।

মন্দিরের প্রবেশপথে পার্কিং অফিসের ‌উল্টো দিকে বসেছিলেন বৃদ্ধ হারাধন চক্রবর্তী। ভদ্রলোক প্রায় ৪০ বছর ধরে তারকেশ্বর মন্দির চত্বরে পান্ডার কাজ করছেন। বৃহস্পতিবার ভোর ৬টায় মন্দির চত্বরে এসেছেন। বললেন, ‘‘আমার অভিজ্ঞতায় তারকেশ্বর মন্দিরে এত কম ভিড় দেখিনি। ৫০০, ১০০০ টাকার নোটের সমস্যার জন্যই এই অবস্থা। সবাই তো এখন ব্যাঙ্কের লাইনে!’’

মন্দির সংলগ্ন একটি মিষ্টির দোকানে উনুনের সামনে পুরনো ৫০০ টাকার নোট গুনছিলেন দোকানি। ‘‘পুরনো ৫০০ টাকা নিচ্ছেন না কি?’’ প্রশ্ন শুনে মুখ না ঘুরিয়েই প্রৌঢ়ের জবাব, ‘‘না না, এগু‌লো ব্যাঙ্কে জমা দেব বলে গুনছি।’’

বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১০টা পর্যন্ত মাত্র শ’দেড়েক টাকার বেচাকেনা হয়েছে তারকনাথ মোদকের পুজোর উপকরণ বিক্রির দোকানে। তাঁর কথায়, ‘‘রবিবার এবং সোমবার লোক একটু বেশি হয় বটে কিন্তু সপ্তাহের অন্য দিনগুলিতে দৈনিক ৫০ জন কমবেশি কেনাকাটা করেন। কিন্তু নোট বাতিলের ঘোষণার পরে ক’দিন ধরে সব ফাঁকা।’’ পুজো উপকরণ বিক্রেতাদের অনেকেই জানালেন, যাঁরা আসছেন তাঁরা মূলত

২১ টাকা কিংবা ৩১ টাকার ডালা কিনছেন। বেশি দামের ডালার বিক্রি প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। দু’একজন বিক্রেতা জানালেন, বছরের এই সময় অন্যান্য বছরেও ভিড় কম হয়। তবে এই বছর সেই সংখ্যা অস্বাভাবিক ভাবে কম।

গত কয়েক দিনে শৈবতীর্থে দর্শনাথী কমে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে মন্দির সংলগ্ন অতিথিশালাগুলিতে। সেগুলিতেও ভিড় নেই বললেই চলে।

একটি অতিথিশালার মালিক অসিত সরকার জানালেন, তাঁর অতিথিশালার ১৭টি ঘরের মধ্যে বৃহস্পতিবার মাত্র একটি ঘর ‘বুক’ হয়েছিল।

স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে এ দিন তারকেশ্বর মন্দিরে পুজো দিতে এসেছিলেন হাওড়ার বেলানগরের বাসিন্দা সোমনাথ গোস্বামী। জানালেন, প্রতি বছর এই সময়ে সপরিবারে গাড়ি ভাড়া করে আসেন তিনি। কিন্তু এ বার এসেছেন ট্রেনে করে। কেন? সোমনাথবাবু বলেন, ‘‘এটিএমে দীর্ঘ লাইন দিয়ে আমার এবং আমার স্ত্রীর অ্যাকাউন্ট থেকে মোট চার হাজার টাকা তুলতে পেরেছি। এটাই সম্বল। গাড়ি ভাড়া করব কী করে?’’ হাওড়ার ডোমজুড়ের বাসিন্দা নিমাই পাই জানান, তাঁর কাছে কয়েকটি ১০০ টাকার নোট এবং একটি ৫০০ টাকার নোট রয়েছে। কিন্তু ৫০০ টাকার নোটটি কেউ নিচ্ছেন না।

তবে বাতিল নোটের ধাক্কায় মন্দিরে লোক কম আসার বিষয়টি অবশ্য মানতে চা‌ননি তারকেশ্বর মন্দিরের পুরোহিত তথা তারকেশ্বর পুরসভার কাউন্সিলর সন্দীপ চক্রবর্তী। তাঁর দাবি, রাসের পরে এমনিতেই লোক কম আসে। নোট বাতিলের প্রভাব পড়লেও সেটি সামান্য।

তারকেশ্বর এসেস্টের ম্যানেজার নেপাল ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে দর্শনাথীদের থেকে ৫০০ অথবা ১০০০ টাকার নোট নেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু প্রণামী বাক্সে কেউ যদি এই নোট দিয়ে যান তাহলে আমাদের কিছু করার নেই। গত কয়েক দিনে কয়েকটি ৫০০ টাকার নোট প্রণামী বাক্সে পড়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Currency note
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE