নোট সমস্যার জেরে কৃষিঋণ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারল না রাজ্য সমবায় দফতর।
বিভিন্ন চাষের মরসুমে কৃষিঋণ দেয় রাজ্য সমবায় দফতর। কিন্তু গত বছর ৮ নভেম্বর নোট কাণ্ডের পর থেকে চাষিদের ঋণ দেওয়ার প্রক্রিয়া কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে। অথচ এই সময়ে বোরো ধান এবং সব্জি চাষের জন্য বীজ ও সার কিনতে চাষিদের ঋণের বেশ প্রয়োজন হয়।
সমবায় মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, ‘‘নাবার্ড চাষিদের ঋণ দেয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে টাকা নিয়ে। কিন্তু রিজার্ভ ব্যাঙ্কই তো টাকা দিতে পারছে না। খুব অল্প করে টাকা আসছে। যখন যেমন টাকা আসছে তা চাষিদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু টাকার পরিমাণ এত কম যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়া মুশকিল।’’ এর ফলে চাষ মার খাবে এবং খাদ্য সঙ্কট দেখা দিতে পারে বলে মন্ত্রীর আশঙ্কা।
ঋণ দেওয়ার পদ্ধতি হল, গ্রামে যে সব প্রাথমিক কৃষি সমবায় সমিতি আছে তাদের সদস্য হন চাষিরা। চাষের মরসুমে তাঁরা ঋণের জন্য সমিতিগুলিতে আবেদন করেন। সমিতিগুলি তাদের কাছে জমা পড়া আমানত থেকে চাষিদের ঋণ দেয়। পরে তারা হিসাব পাঠিয়ে দেয় জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কে। তারা আবার সমবায় দফতর মারফত ওই হিসাব নাবার্ড-এ পাঠায়। প্রাথমিক কৃষি সমবায় সমিতিগুলি যে টাকা নিজেদের আমানত থেকে চাষিদের ঋণ হিসাবে দিয়েছিল সেই টাকা নাবার্ড তাদের কাছে সমবায় দফতর মারফত ফিরিয়ে দেয়।
কিন্তু নোট কাণ্ডের পর পুরো প্রক্রিয়াটিই টাকার অভাবে কার্যত ভেস্তে গিয়েছে বলে সমবায় দফতর সূত্রে খবর। নিজেদের আমানত থেকে যে টাকা গত ৮ নভেম্বেরের আগে প্রাথমিক কৃষি সমবায় সমিতিগুলি ঋণ দিয়েছিল সেই টাকা এখনও পুরোপুরি তাদের ফিরিয়ে দিতে পারেনি নাবার্ড। ফলে প্রাথমিক কৃষি সমবায় সমিতিগুলির হাতে আর আমানতের টাকা নেই বললেই চলে। যতটুকু টাকা আছে তা আবার ফেরত চাইছেন আমানতকারীরা। ফলে বিপাকে পড়েছে প্রাথমিক কৃষি সমবায় সমিতিগুলি। এর ফলে যেমন নতুন করে কৃষি ঋণ দেওয়া যাচ্ছে না, তেমনই আমানতের টাকা ঋণের খাতে চলে যাওয়ায় আমানতকারীদের টাকাও ফেরত দেওয়া যাচ্ছে না। সপ্তাহে মাত্র ৪০০ টাকা করে আমানতকারীদের ফেরত দিয়ে কোনওমতে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।
পরিস্থিতি কতটা যে শোচনীয় তা দেখা গেল শ্যামপুরের খাড়ুবেড়িয়া প্রাথমিক কৃষি সমবায় সমিতিতে এসে। এই সমিতি থেকে ৮ নভেম্বরের আগে পর্যন্ত বোরো মরসুমের জন্য ১৯ জন চাষিকে মোট ৩ লক্ষ ৭৪ হাজার টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছিল। সমিতির ম্যানেজার স্বপনকুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘৩ লক্ষ ৭৪ হাজার টাকার হিসাব আমরা জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কে দিয়েছি। কিন্তু ফেরত পেয়েছি মাত্র ১ লক্ষ ৪ হাজার টাকা। কোন ভরসায় ফের নিজেদের আমানত ভেঙে চাষিদের ঋণ দেব?’’ ফলে ৮ নভেম্বর থেকে ঋণ দেওয়া বন্ধ রয়েছে বলে স্বপনবাবু জানান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy