Advertisement
১৯ মে ২০২৪

৩০০ বছরেও অমলিন ঘোষবাড়ির পুজো

প্রায় তিনশো বছর আগের কথা। প্রতি বছরের মতো সে বারও প্রস্তুতি চলছিল দুর্গাপুজোর। আয়োজন তখন শেষের মুখে। হঠাৎই আগুন ধরে পুড়ে যায় পুজো মণ্ডপে। জনশ্রুতি, পরিবারের কর্তা লক্ষ্মীনারায়ণ ঘোষ স্বপ্নাদেশ পান দুর্গাপুজোর বদলে জগদ্ধাত্রী আরাধনার। সেই শুরু।

চলছে পুজোর প্রস্তুতি। ছবি: সুব্রত জানা

চলছে পুজোর প্রস্তুতি। ছবি: সুব্রত জানা

মনিরুল ইসলাম
ডোমজুড় শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৬ ০১:০৬
Share: Save:

প্রায় তিনশো বছর আগের কথা। প্রতি বছরের মতো সে বারও প্রস্তুতি চলছিল দুর্গাপুজোর। আয়োজন তখন শেষের মুখে। হঠাৎই আগুন ধরে পুড়ে যায় পুজো মণ্ডপে। জনশ্রুতি, পরিবারের কর্তা লক্ষ্মীনারায়ণ ঘোষ স্বপ্নাদেশ পান দুর্গাপুজোর বদলে জগদ্ধাত্রী আরাধনার। সেই শুরু।

আজও একই রকম ভাবে ডোমজুড়ের বেগড়ির ঘোষ বাড়িতে ধুমধাম করে আরাধনা হয় জগদ্ধাত্রীর। একই রীতি, আচার অনুষ্ঠান মেনে। তাই ঘোষ বাড়িতে জগদ্ধাত্রী পুজোর আবহ দুর্গাপুজোর থেকে এক ফোঁটাও কম নয়, বরং কিছুটা বেশিই।

পরিবারের সদস্যরা জানান, আগে বাড়িতে বিশাল আয়োজন করে আরাধনা হত জগদ্ধাত্রীর। জাঁক ছিল চোখে পড়ার মতো। বাজি ফাটানো থেকে শুরু করে বসত তরজা গানের আসরও। সম্মান জানানো হত সেরাকে। ভোগ রান্না হত কয়েক হাজার মানুষের জন্য। দিন বদলেছে, জাঁক হয়তো কমে গিয়েছে অনেকটাই। কিন্তু আবেগ আজও অটুট। আজও নিষ্ঠার সঙ্গে পুরনো রীতি মেনেই হয় মাতৃবন্দনা। অষ্টমীর রাতে ঘট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেবীর বোধন হয়। আজ মঙ্গলবার, দেবীর বোধন। দশ থেকে পনেরো রকম পদ দিয়ে দু’দিন ধরে ভোগের আয়োজন করা হয়। আর হয়তো হাজার পাত পড়ে না। তবে পাঁচশো জনের জন্য ভোগের আয়োজন চলে দু’দিন ধরেই।

পরিবারের অন্যতম প্রবীণ ব্যক্তি সঞ্জিত ঘোষ ঠাকুরদালানে বসে বলে চলেন নানা রীতির কথা, যা একান্তই এই বাড়ির পুজোর বৈশিষ্ট্য। জানা গেল, ঘোষ বাড়ির পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল বিজয়ার দিন দুপুরে পরিবারের লোকেরা কাদা মাটি মেখে ঠাকুর দালানের সামনে নাচেন। আদতে, প্রতিমা গড়ার সময় যখন মাটি আনা হয় সেই সময় কিছুটা মাটি তুলে রেখে দেওয়া হয়। বিসর্জনের দিন দুপুরে সেই মাটি জলে গুলে ঠাকুর দালানের সামনে ঢেলে দেওয়া হয়। সেই কাদা গায়ে মেখে চলে সমবেত নৃত্য। পুরুষ-মহিলা-খুদে সদস্য বাদ যান না কেউই। পাড়ার লোকেরাও অনায়াসে সামিল হল এই নাচের আসরে। দু’তিন ঘণ্টা নাচের পর সকলে স্নান-খাওয়া সেরে যান প্রতিমা নিরঞ্জনে। সঞ্জিৎবাবুর কথায়, ‘‘আসলে গায়ে মাটি মাখাটা প্রতীকি। এক কাদা-মাটি মেখে বর্ণ, গোত্র, ধনী, দরিদ্র সব বাধা পেরিয়ে যাওয়াটাই লক্ষ্য। মানুষ তো আসলে এক।’’

তিনশো বছর আগে আমতার বাসিন্দা হীরা কুণ্ডু প্রতিমা গড়েছিলেন। সেই রীতি মেনে কুণ্ডু পরিবারের বর্তমান প্রজন্মের অশোক কুণ্ডুই প্রতিমা গড়েন। প্রতিমার ডান দিকে থাকে জয়া ও ঋষি আর বাম দিকে থাকে বিজয়া ও মুনি। হাতির উপরে বাঘ তার উপরে দেবী প্রতিমা অধিষ্ঠিত থাকেন। প্রতিমার রূপ রয়েছে অবিকল এক। সময়ের বিবর্তন দেবীর রূপে কোনও বদল আনতে পারেনি। এমন কথাই জানাচ্ছিলেন পরিবারের এক সদস্য অমিতকুমার ঘোষ। যিনি ব্যবসা সূত্রে এখন হাওড়ার আন্দুলের বাসিন্দা।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেড়েছে। ভিন্ন হয়েছে পরিবার। কর্মসূত্রে অনেকেই ডোমজুড়ের ভিটে ছেড়ে থাকেন বিভিন্ন জেলায়, রাজ্যে। কিন্তু পুজোর কয়েকটা দিন ঘোষ পরিবার কার্যত সকলেরই মিলনক্ষেত্র। পুজোর দু’দিন খুশিতে মেতে ওঠে বাড়ির খুদেরাও। এই বাড়িরই বছর আটেকের স্বস্তিকা নতুন ফ্রক কিনেছে পুজোতে পরার জন্য। স্বস্তিকা, সুমন, পূজা, মৌমীরা বলে, ‘‘এই কটা দিন শুধুই আনন্দ। ঠিক দুগ্গাপুজোর মতোই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jagadhatri Puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE