Advertisement
০৫ মে ২০২৪

জরি-শিল্পে মন্দা, জমেনি ইদের বাজার

আর তিন দিন বাদে ইদ। কিন্তু কেনাকাটার ভিড় কই! জরি-শিল্পে মন্দা আঘাত হেনেছে হাওড়ার ইদের বাজারে।

ক্রেতার অপেক্ষায়। উলুবেড়িয়ায় ছবিটি তুলেছেন সুব্রত জানা।

ক্রেতার অপেক্ষায়। উলুবেড়িয়ায় ছবিটি তুলেছেন সুব্রত জানা।

নুরুল আবসার ও মনিরুল ইসলাম
শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৬ ০১:৩০
Share: Save:

আর তিন দিন বাদে ইদ। কিন্তু কেনাকাটার ভিড় কই! জরি-শিল্পে মন্দা আঘাত হেনেছে হাওড়ার ইদের বাজারে।

প্রতি বছর রমজান মাসের মাঝামাঝি থেকেই উলুবেড়িয়া, বাগনান, আমতা-সহ সর্বত্রই ঈদের কেনাকাটার ভিড় জমে রেডিমেড পোশাকের দোকানগুলিতে। কিন্তু এ বার যেন উল্টো ছবি! দোকানগুলি প্রায় ফাঁকা। ব্যবসায়ীরা মাছি তাড়াচ্ছেন! আর এই পরিস্থিতির জন্য তাঁরা দায়ী করছেন জরি শিল্পের বাজার না-থাকাকে।

দিন দু’য়েক আগে উলুবেড়িয়ার হেমন্ত বসু মার্কেটের একটি রেডিমেড পোশাকের দোকান দেখা গেল প্রায় সুনসান। জনাচারেক কর্মচারী গল্পে মত্ত। তাঁদের মধ্যে গিরিশ দাস বলেন, ‘‘গত ১৫ বছরের মধ্যে ইদের বাজারের এত খারাপ অবস্থা দেখিনি।’’ একই কথা শুনিয়েছেন পাশের দোকানি দেবাশিস বেজও। তাঁর কথায়, ‘‘এটা আমাদের পারিবারিক ব্যবসা। ঈদের উপরে অনেকটা নির্ভর করি। কিন্তু এ বারে বাজার শোচনীয়।’’

কেন জমছে না ঈদের বাজার? জেলার ১৪টি ব্লকের প্রায় সর্বত্রই জরির কাজ হয়। লক্ষাধিক মানুষ ওই কাজে যুক্ত। কারিগর ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে সিংহভাগই মুসলিম। কিন্তু বছর দুয়েক হল জরির কাজে ভাটা পড়েছে। গত বছর ইদের বাজারে তবু ভিড় হয়েছিল। কিন্তু এ বার পরিস্থিতি অন্য রকম। ওস্তাগর এবং ব্যবসায়ীরা জানান, তাঁরা কলকাতার বড় মহাজনদের থেকে বরাত এনে কাজ করেন। কিন্তু এখন মহাজনেরা তাঁদের জানিয়েছেন, রফতানি বিধিতে কড়াকড়ির জন্য বিদেশের বাজারে জরির কাজ যাচ্ছে না। তারই প্রভাব পড়ছে বাজারে। মহাজনেরা সে ভাবে কাজ দিচ্ছেন না। দীর্ঘদিন ধরে উলুবেড়িয়ার বাণীবনে ঘরে ঘরে জরির কাজ হয়। কিন্তু বাজার না থাকায় অনেকে কারখানা বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে, বিপাকে পড়েছেন বহু কারিগর। সোহরাবুদ্দিন মোল্লা নামে এক জরির ওস্তাগর বলেন, ‘‘ছেলেমেয়েদের এখনও ঈদের পোশাক কিনতে পারিনি। সংসার চালাতে হিমসিম খাচ্ছি। তার উপরে আবার ইদের কেনাকাটা!’’ শেখ জাহাঙ্গির নামে আর এক ওস্তাগর বলেন, ‘‘কাজের বাজার নেই। কারিগরদের তো আর বসিয়ে মাইনে দিতে পারি না। তাই তাঁদের বসিয়ে দিয়েছি।’’

ইদের বাজার জমে দু’দদফায়। দুপুর থেকে সন্ধ্যার সময়ে ইফতারের আগে পর্যন্ত। ইফতার হয়ে গেলে শুরু হয় আরও এক দফা কেনাকাটা। কিন্তু দু’টি পর্বেই বিভিন্ন এলাকায় পরিদর্শন করে বাজারের খারাপ হালই বেশি চোখে পড়েছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এই জেলায় ঈদের বাজার চাকরিজীবীদের উপরে নয়, নির্ভর করে মূলত অসংগঠিত ক্ষেত্রে যে সব মুসলিম যুক্ত, তাঁদের উপরে। তার মধ্যে মূলত রয়েছেন জরি-শিল্পের সঙ্গে যুক্ত লোকজন। কিন্তু ওই শিল্পের অবস্থা এ বারে শোচনীয়। ওই কাজে বহু মহিলা যুক্ত থাকেন। ফলে, বাড়ির পুরুষেরা যখন অন্য কাজ করেন, তখন মহিলারা জরির কাজের উপার্জন দিয়ে উৎসব-অনুষ্ঠানের খরচ সামাল দেন। সেই কারণে প্রচুর মহিলা ঈদের সময় কেনাকাটা করেন। কিন্তু এ বারে সেই সব চেনা মুখ দেখা যাচ্ছে না। তা ছাড়া, নির্মাণ শিল্পের অবস্থাও ভাল নয়।

‘সারা ভারত জরিশিল্পী কল্যাণ সমিতি’র সম্পাদক মুজিবর রহমান মল্লিকও জরি-শিল্পে সঙ্কটের কথা স্বীকার করে জানিয়েছেন, জরি-শিল্পে মন্দা জেলার অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলেছে। শুধু জামাকাপড়ের দোকান নয়, ফলের বাজারও খারাপ। এই দশা কয়েক বছরের মধ্যে দেখা যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

jori industry
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE