আত্মীয়তায় বাঁধা পড়লেন এই দু’জনই। ছবি: সুব্রত জানা।
২৬ দিন উলুবেড়িয়া হাসপাতালই ছিল তাঁর অস্থায়ী বাড়ি। কার্যত অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে দিন কাটাচ্ছিলেন যমুনা অধিকারী নামে ৭২ বছরের ওই বৃদ্ধা। এক ব্যক্তির সহায়তায় শুধু তাঁর পরিচয়ই জানা গেল না তাই নয়, বুধবার বাড়িও ফিরলেন তিনি।
যমুনাদেবীর বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তী থানার আমঝোরা গ্রামে। কী ভাবে উলুবেড়িয়া হাসপাতালে এলেন তিনি?
পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া নাতির সঙ্গে যমুনাদেবী গত ১৩ জুলাই সোনারপুরে এসেছিলেন ডাক্তারের কাছে। ডাক্তার দেখিয়ে দুপুরে ট্রেন ধরার জন্য নাতি ও ঠাকুমা স্টেশনে আসেন। তারপরে কোনও ভাবে দু’জনে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। নাতি বাড়ি ফিরে গেলেও যমুনাদেবী ফিরতে পারেননি। গত ১৫ জুলাই তাঁকে অসুস্থ ও অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায় বাউড়িয়া স্টেশনে। ওই অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে স্থানীয় কিছু যুবক উলুবেড়িয়া হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেন। ফিমেল মেডিসিন ওয়ার্ডে তাঁর চিকিৎসা চলে।
সপ্তাহ খানেক আগে উলুবেড়িয়ার ধুলাসিমলা থেকে ওই ওয়ার্ডে ভর্তি হন এক মহিলা। ওই মহিলাকে দেখতে আসতেন তাঁর দেওর শেখ সেলিম। সেই সূত্রে সেলিমের সঙ্গে যমুনাদেবীর আলাপ হয়। বাড়ি যাওয়ার কথা বলে কান্নাকাটিও করতে থাকেন বৃদ্ধা। কথা বলতে বলতে বাড়ির ঠিকানাও তিনি সেলিমকে জানান।
সেলিম সেই ঠিকানা ধরে মঙ্গলবার সকালে চলে যান যমুনাদেবীর গ্রামে। তাঁর পরিবারের সঙ্গে দেখা করে তিনি সব কথা জানান। ওই রাতেই যমুনাদেবীর বাড়ি থেকে ছেলেরা এসে হাসপাতালে হাজির হন। তাঁরা নিজেদের পরিচয় দিয়ে বুধবার মাকে বাড়ি নিয়ে যান। পেশায় ইলেকট্রিক মিস্ত্রি পঞ্চান্ন বছরের সেলিম বলেন, ‘‘বৌদিকে হাসপাতালে দেখতে এসে যমুনাদেবীর সঙ্গে আলাপ হয়। তিনি বাড়ির ঠিকানা আমাকে বলেন। গ্রামে গিয়ে যমুনাদেবীর ছেলেদের কাছে বিষয়টা বললাম। তখন পরিবারের মধ্যে যেন উৎসব শুরু হয়ে গেল। ওই মুহূর্তটা ভুলতে পারব না। হারিয়ে যাওয়া একজনকে ঘরে ফিরিয়ে দিতে পেরে খুব আনন্দ হচ্ছে।’’
যমুনাদেবীর তিন ছেলে। সকলেই হাসপাতালে এসেছিলেন মাকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য। ওই দিন নাতি বুবাইয়ের সঙ্গে তিনি সোনারপুরে এসেছিলেন। সকলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ট্রেন এসে যাওয়ায় বুবাই দ্রুত ট্রেনে উঠে পড়ে। সে ভেবেছিল ঠাকুমাও উঠে পড়েছেন। কিন্তু পিছন ফিরে তাকাতেই সে আর ঠাকুমাকে দেখতে পায়নি। বৃদ্ধার বড় ছেলে পেশায় চাষি যুধিষ্ঠির বললেন, ‘‘মা হারিয়ে যাওয়ার পরে থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করি। অনেক জায়গায় খোঁজ খবরও করা হয়। কোথাও মায়ের সন্ধান মেলেনি।’’ শেখ সেলিমকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘নাম ঠিকানা বলতে পারা সত্ত্বেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কেন মায়ের খবর দিতে পারল না বুঝতে পারছি না।’’
হাসপাতালের সুপার সুদীপরঞ্জন কাঁড়ার বলেন, ‘‘প্রথম দিকে ওই বৃদ্ধা কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না। ধীরে ধীরে তিনি সুস্থ হন। ঘটনাচক্রে যখন তিনি নাম ঠিকানা বলার মতো জায়গায় পৌঁছলেন তখন সেলিমের সঙ্গে তাঁর ভালই পরিচয় হয়ে যায়। ফলে তাঁর কাছে ওই বৃদ্ধা গ্রামের নাম, ঠিকানা বলেছেন।’’ সুদীপবাবুর সংযোজন, ‘‘চিকিৎসার কোনও ত্রুটি রাখা হয়নি।’’
বাড়ি ফেরার সময় বৃদ্ধা বলেন, ‘‘নাতি জল খেতে গিয়েছিল। সেই মুহূর্তে ট্রেনও এসে যায়। পরে নাতিকে আর দেখতে পাইনি। সেলিমের সহায়তায় বাড়ি ফিরতে পারছি। এর থেকে আনন্দের আর কী আছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy