Advertisement
০৫ মে ২০২৪

আনাজের দামে হাত পুড়ছে গৃহস্থের

পেঁয়াজের দাম গত এক সপ্তাহে বেড়ে গিয়েছে কিলোগ্রাম প্রতি ২০-৩০ টাকা করে। এক সপ্তাহ আগে যে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকায়। বর্তমানে তা বিকোচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়। দাম বেড়েছে পটলের। ৪০ টাকা থেকে কয়েকদিনের মধ্যে বেড়ে হয়েছে ৫০ টাকা।

বিকিকিনি: পসরা সাজিয়ে ব্যবসায়ীরা। নিমদিঘি বাজারে। ছবি: সুব্রত জানা

বিকিকিনি: পসরা সাজিয়ে ব্যবসায়ীরা। নিমদিঘি বাজারে। ছবি: সুব্রত জানা

নিজস্ব প্রতিবেদন
উলুবেড়িয়া ও চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৯ ০১:৫৪
Share: Save:

সকালে হালকা শীতের আমেজ পড়েছে। তবে আনাজের বাজারে পা দিয়ে মাথা ঠাণ্ডা রাখতে পারছেন না কেউই। আনাজের দাম পুজোর পর থেকে সেই যে চড়তে শুরু করেছে তা আর নামার লক্ষণ নেই।

দামে সবাইকে ছাড়িয়ে গিয়েছে সজনে ডাঁটা। শুক্রবার এই ডাঁটা বিকিয়েছে সাতশো টাকা প্রতি কিলোগ্রাম দরে। বাগনান, আমতা, উলুবেড়িয়া, ডোমজুড়, মুন্সিরহাট, উদয়নারায়ণপুর সর্বত্র একই ছবি। বিক্রেতারা জানান, এই ডাঁটা আসে আমদাবাদ থেকে। সেখান থেকে কলকাতার কোলে মার্কেট হয়ে চলে আসে হাওড়ায়। গত কয়েকদিন ধরে ডাঁটার যোগান কম। তাই এই অবস্থা।

আলুর দাম গত এক সপ্তাহ ধরে ধারাবাহিকভাবে বেড়ে চলেছে। এক সপ্তাহ আগে যেখানে জ্যোতি আলুর দাম ছিল ১৪ টাকা কিলোগ্রাম, তা শুক্রবারে ঠেকেছে ২২ টাকায়। পেঁয়াজের দাম গত এক সপ্তাহে বেড়ে গিয়েছে কিলোগ্রাম প্রতি ২০-৩০ টাকা করে। এক সপ্তাহ আগে যে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকায়। বর্তমানে তা বিকোচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়। দাম বেড়েছে পটলের। ৪০ টাকা থেকে কয়েকদিনের মধ্যে বেড়ে হয়েছে ৫০ টাকা। অবশ্য টোমাটোর দাম কিছুটা কমেছে। তার দাম ঘোরাফেরা করছে ৫০-৬০ টাকার মধ্যে। গত তিনদিনে পেঁপের দাম বেড়েছে কিলোগ্রাম প্রতি অন্তত ১০ টাকা। ১৫ টাকা থেকে বেড়ে পেঁপে এখন ২৫ টাকা।

উদয়নারায়ণপুরের বাসিন্দা তারক মেটে বলেন, ‘‘বাজারের জন্য যে টাকা বরাদ্দ তাতে থলি অর্ধেকও ভরছে না। আনাজের থেকে মাছের দাম কম। সজনে ডাঁটার কিলো ৭০০ টাকা? ইলিশের দামও যে এর থেকে কম।’’

বাগনান রথতলায় আনাজের পাইকারি বাজার। এখান থেকে খুচরো ব্যবসায়ীরা আনাজ কিনে বিক্রি করেন। সোমনাথ বেজ নামে এক পাইকারি বিক্রেতা বললেন, ‘‘আমাদের কিছু করার নেই। আমরা নিজেরাই তো বেশি দামে আনাজ কিনছি। দাম আকাশছোঁয়া হওয়ায় আমাদের ব্যবসাও মার খাচ্ছে।’’

হুগলির বিভিন্ন বাজারে বৃহস্পতিবার প্রতি কিলোগ্রাম চন্দ্রমুখী আলুর দাম ছিল ২৫-২৬ টাকা। জ্যোতি আলু ২০ টাকা। একটি ফুলকপির দামও ছিল একই। ব্যবসায়ীদের অনেকেরই বক্তব্য, এই সময় আনাজের দাম অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকে। কিন্তু এ বার পরিস্থিতি উল্টো। কিন্তু কেন বাজারের এই পরিস্থিতি, তা তাঁরা বুঝতে পারছেন না। বৈদ্যবাটীর মাটিপাড়ার বাসিন্দা অশোক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আনাজের দাম যে জায়গায় পৌঁছেছে, তাতে সংসার চালানো দুঃসাধ্য হয়ে যাচ্ছে। গরিব মানুষ খাবে কী? এই সময় এতটা দাম তো থাকে না! দাম একটু নাগালের মধ্যে না এলে তো মুশকিল।’’

কেন‌ বাড়ছে আনাজের দাম? আনাজ বিক্রেতারা জানালেন, হাওড়া জেলায় ঢেঁড়শ, ঝিঙে, পালং, পটল সবই মূলত হয় উদয়নারায়ণপুর এবং আমতায় দামোদরের চরে। অক্টোবরের প্রথমে আচমকা বন্যার ফলে প্রচুর আনাজ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ফলে জোগান কমে গিয়েছে।

অন্যদিকে আলুর দাম বৃদ্ধির প্রসঙ্গে আড়তদাররা জানান, বিহারের বন্যায় সেখানে আলুর টান পড়েছে। চাষিরা সরাসরি সেখানে আলু পাঠাচ্ছেন। তাই এখানে জোগানে টান পড়েছে। তারই ফলে রোজ দাম বাড়ছে আলুর। আবহাওয়া দফতর ফের নিম্নচাপের আভাস দিয়েছে। কার্তিক নন্দী নামে বাগনানের আলুর এক পাইকারি ব্যবসায়ী বললেন, ‘‘নিম্নচাপ হলে আলুর দাম আরও বাড়বে। কারণ চলতি মরশুমে আলুর জন্য চাষিরা যে জমি তৈরি করেছেন নিম্নচাপের ফলে তাতে বীজ রোপন পিছিয়ে যাবে। ফলনও পিছিয়ে যাবে অন্তত এক মাস। সেই সময়টুকুর জন্য চাষিরা তাঁদের কাছে বর্তমানে যে আলু মজুত আছে তা ধরে রাখবেন। ফলে বাজারে আলুর জোগান কমবে আরও।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

price of vegetables
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE