আতঙ্ক: শুক্রবার নিজস্ব চিত্র
সে জঙ্গি নয়। পাড়ার উটকো মস্তানও নয়।
তবু তার নাম শুনেই কাঁপছে শহর শ্রীরামপুর!
সে ভোলা। গোটা শহরের মানুষ রাস্তায় বেরোলেই বারবার পিছন ফিরে তাকাচ্ছেন। ভোলা আসছে না তো!
সিনেমার ভোলা যমপুরীতে ঢুকে যমরাজ এবং চিত্রগুপ্তকে তাড়িয়ে ছেড়েছিল (যমালয়ে জীবন্ত মানুষ)। শ্রীরামপুরের ভোলার তাড়ায় কেউ ছুটছেন, কেউ হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন, কেউ তার শিংয়ের গুঁতোয় জখম হচ্ছেন।
মিশকালো ষাঁড়টির তাণ্ডবে মাস তিনেক আগেও একই দশা হয়েছিল শহরের। দমকলের লোকজন ষাঁড়টিকে ধরে দিল্লি রোডের ধারে ছেড়ে এসেছিলেন। হাঁফ ছেড়েছিলেন শহরবাসী। কিন্তু সেই স্বস্তি বেশিদিন রইল না। সপ্তাহ দুয়েক আগে ফিরে এসে ভোলা ফের স্বমূর্তি ধারণ করেছে! ইতিমধ্যে অন্তত ২০ জন তার আক্রমণে জখম হয়েছেন বলে দবি করেছেন অনেকে।
দু’দিন আগে সকালে সাইকেলে চক্কর মারতে বেরিয়ে ভোলার সামনে পড়ে যান ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর মিলন মুখোপাধ্যায়। সোই আতঙ্ক এখনও রয়েছে তাঁর। মিলনবাবুর কথায়, ‘‘আমি সাইকেল ঘুরিয়ে পালাই। কিন্তু সবাই তো রেহাই পাচ্ছেন না। লক্ষ্মীনারায়ণ আদক নামে এক বৃদ্ধ তো ষাঁড়ের হানায় জখম হয়ে কয়েক দিন হাসপাতালে ভর্তি থাকার পরে মারা গেলেন। ষাঁড়টা তাঁর উরুতে শিং ঢুকিয়ে দিয়েছিল।’’
উপয়ান্তর না দেখে মিলনবাবু এবং পাশের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর ঝুম মুখোপাধ্যায় মহকুমাশাসককে চিঠি লিখে ষাঁড়টিকে নিরাপদ জায়গায় পাঠানোর আবেদন জানিয়েছেন। ঝুমদেবী বলেন, ‘‘মানুষ আতঙ্কে ভুগছেন। প্রশাসন বন দফতরের মাধ্যমে কিছু একটা ব্যবস্থা করুক।’’ শ্রীরামপুরের মহকুমাশাসক রজত নন্দা বলেন, ‘‘পুরসভাই তো পশুপ্রেমী কোনও সংস্থার মাধ্যমে ষাঁড়টির ব্যবস্থা করতে পারে! দেখছি, কী করা যায়।’’ পুরপ্রধান অমিয় মুখোপাধ্যায় অবশ্য নিজেদের অক্ষমতার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘ষাঁড় ধরার মতো পরিকাঠামো (ঘুমপাড়ানি গুলি বা প্রশিক্ষিত কর্মী) আমাদের নেই। তাই প্রশাসনের মুখাপেক্ষী হয়ে রয়েছি। বন দফতরের সঙ্গেও কথা বলব।’’
ষাঁড়টি ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে গঙ্গার ধারে জলকল মাঠে থাকে বলে এলাকার লোকজন জানিয়েছেন। কিন্তু তার বিচরণ ক্ষেত্র বিরাট। জলকলের মোড়, ঠাকুরবাটি স্ট্রিট, ভাগীরথী লেন, শশীভূষণ ঘোষ লেন, মাহেশ— সর্বত্র। এবং সর্বত্রই কেউ না কেউ তাঁর আক্রমণে জখম হয়েছেন।
গৌতম ঘোষ নামে বল্লভপুরের এক বাসিন্দা জানান, মাস তিনেক আগে ষাঁড়টির গুঁতোয় পড়ে গিয়ে তাঁর মা গুরুতর জখম হন। গৌতমবাবু বলেন, ‘‘এখনকার অবস্থাও সাংঘাতিক। ষাঁড়টিকে দেখলেই রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে।’’ আর এক যুবক বলেন, ‘‘যখন তখন ভোলার মতিভ্রম হচ্ছে। তখনই বিপদ।’’
ভোলা অকুতোভয়। দাপুটে চালচলন। ফের ঘরছাড়া হওয়ার কোনও আশঙ্কাই যেন নেই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy