Advertisement
E-Paper

বছর পেরিয়েও বাজার জতুগৃহই

কয়েক মাস আগে কলকাতার বাগড়ি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ড থেকে ‘শিক্ষা নিয়ে’ বিভিন্ন পুরসভার তরফে বাজারে বাজারে উপযুক্ত অগ্নি সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে তা কি হয়েছে? শনিবার রাতে গড়িয়াহাটের বহুতলে ফের আগুন লাগার পরে হুগলি এবং হাওড়ার বিভিন্ন বাজার ঘুরে সেই উত্তরই খুঁজল আনন্দবাজার।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:১৮
আরামবাগ পুরসভা মার্কেটে মাথার উপরে ঝুলছে বৈদ্যুতিক তার।

আরামবাগ পুরসভা মার্কেটে মাথার উপরে ঝুলছে বৈদ্যুতিক তার।

কয়েক মাস আগে কলকাতার বাগড়ি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ড থেকে ‘শিক্ষা নিয়ে’ বিভিন্ন পুরসভার তরফে বাজারে বাজারে উপযুক্ত অগ্নি সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে তা কি হয়েছে? শনিবার রাতে গড়িয়াহাটের বহুতলে ফের আগুন লাগার পরে হুগলি এবং হাওড়ার বিভিন্ন বাজার ঘুরে সেই উত্তরই খুঁজল আনন্দবাজার।

ডানকুনি স্টেশন বাজার

এখানে আগুন লাগলে ভগবানই ভরসা! এমনটা বলে থাকেন ব্যবসায়ীরাই। রেলের জমিতে গড়ে ওঠা এই বাজারে কয়েকশো দোকান রয়েছে। অধিকাংশ দোকানেই প্লাস্টিকের ছাউনি। বিপজ্জনক ভাবে বিদ্যুতের তার ঝুলছে। অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের বালাই নেই। জলের জোগানও নেই বললেই চলে। এক বছর আগে দু’টি আনাজের দোকানে আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল। ডানকুনি ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সঞ্জয় গুপ্ত জানান, কয়েক বছর আগে একটি গভীর নলকূপ বসানোর চেষ্টা করা হয়েছিল, যাতে আগুন লাগলে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। রেলের তরফে তা করতে দেওয়া হয়নি।

পান্ডুয়ার কল্যাণী বাজার

পান্ডুয়া স্টেশনের কাছে ঘিঞ্জি জায়গায় এই বাজার পাঁচ দশকের পুরনো। বাজারে ঢোকার মুখে বিদ্যুতের খুঁটিতে তারের জঙ্গ‌ল! এর ফলে যে কোনও সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে ব্যবসায়ীদের একাংশের অভিযোগ। বিভিন্ন দোকানে বিদ্যুতের নিজস্ব মিটার থাকলেও আগুন নেভানোর কোনও ব্যবস্থাই নেই। অনেক দোকানেই প্লাস্টিকের ছাউনি রয়েছে। ফলে আগুন লাগলে কী পরিণতি হবে, তা ভেবে আতঙ্কে থাকেন ব্যবসায়ীরা। ব্যক্তিগত জমিতে গড়ে ওঠা এই বাজারের মালিক জানান, বিদ্যুৎস্তম্ভের তারের বিষয়টি নিয়ে বিদ্যুৎ দফতরে কথা বলা হয়েছে।

আরামবাগ পুরসভা মার্কেট

আরামবাগ পুরসভা পরিচালিত দোতলা মার্কেটটি কয়েক দশকের পুরনো। পঞ্চাশের বেশি দোকান রয়েছে এখানে। অভিযোগ, বিভিন্ন দোকানে দাহ্য বস্তু মজুত রয়েছে। অথচ অগ্নি সুরক্ষা বিধি মানা হয় না। মিটার ঘরের অবস্থা ভয়াবহ। ওই ঘরে এবং নানা জায়গায় বিপজ্জনক ভাবে বিদ্যুতের তার ঝুলছে। কোনও দোকানে নেই অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা। পর্যাপ্ত জলের ব্যবস্থাও নেই। দমকলের ভয়, আগুন‌ লাগলে বাহিনীর জ‌লের পাইপ সব জায়গায় পৌঁছবে না। আগুন লাগলে কী ভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা হবে, এই প্রশ্নের উত্তর নেই কারও কাছে।

হেমন্ত বসু মার্কেট

উলুবেড়িয়ায় রবীন্দ্রভবনের সামনে ১৯৮৬ সাল থেকে চলছে এই বাজার। প্রায় ৮০টি দোকান আছে এই বাজারে। ভিতরে নেই কোনও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা। বাজারে ঢোকার মুখেই বিক্রি হচ্ছে প্লাস্টিকের জিনিসপত্র। উনুন জ্বালিয়ে চলছে খাবারের দোকান। পুরসভার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, বাজারের ভিতরে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা করা হবে। তা আজও হয়নি। পুরপ্রধান অর্জুন সরকার বলেন, ‘‘বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

উদয়নারায়ণপুর বাজার

শতবর্ষেরও পুরনো এই বাজার যেন আস্ত জতুগৃহ। দিনের বেলাতেও বিদ্যুতের আলো জ্বেলে বেচাকেনা হয়। আগুন লাগলে ভরসা উলুবেড়িয়ার দমকল যা অন্তত ৬০ কিলোমিটার দূরে। কাছেই একটি পুকুর আছে। কিন্ত বাজারের বর্জ্য ফেলে সেটিও বুজিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে আগুন লাগলে পুকুরের জল ব্যবহার করারও উপায় নেই। ব্লক প্রশাসনের বক্তব্য, বাগড়ি মার্কেটের ঘটনার পরে ব্লক প্রশাসনের কর্তারা জানিয়েছিলেন পুকুরটি সংস্কারের ব্যাপারে চিন্তাভাবনা হচ্ছে। গড়িয়াহাটে অগ্নিকাণ্ডের পরও একই কথা জানান ব্লক প্রশাসনের কর্তারা। কিন্তু কাজ কিছুই হয়নি। ফলে ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরাও।

ধূলাগড়ি বাজার

ধুলাগড়িতে গড়ে উঠেছে জেলার বৃহত্তম পাইকারি আনাজ বাজার। দিনের বেলা ঝুলন্ত তারে বাল্ব লাগিয়ে এখানে ব্যবসা হয়। শর্ট শার্কিট হলে কী হবে? উত্তর মেলেনি। এখানে নেই কোনও নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাও। ঘিঞ্জি রাস্তা ধরে দমকলেরও ঢুকতে অসুবিধা হবে। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনও নির্বিকার। বাজারটি তৈরি করেছে যে বেসরকারি সংস্থা তাদের বক্তব্য, বাজারের পিছনে জলাশয় করা আছে। জলের অসুবিধা হবে না। যদিও কাছাকাছি কোনও জলাশয়ের দেখা মিলল না।

Market Fire Extinguisher
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy