Advertisement
১৭ মে ২০২৪
আরামবাগ মহকুমা হাসপাতাল

আগুন, প্রশ্ন উঠল নির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে

নিজস্ব অগ্নি সুরক্ষার ব্যবস্থা নামমাত্র। বিপদ এলেই সামান্য হলেও তা কোনও কাজে লাগে না। সোমবারের একটি আগুন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।

আতঙ্কে হাসপাতাল চত্বরে রোগীর পরিজনদের হুড়োহুড়ি। ছবি: মোহন দাস।

আতঙ্কে হাসপাতাল চত্বরে রোগীর পরিজনদের হুড়োহুড়ি। ছবি: মোহন দাস।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আরামবাগ শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৬ ০২:৪২
Share: Save:

নিজস্ব অগ্নি সুরক্ষার ব্যবস্থা নামমাত্র। বিপদ এলেই সামান্য হলেও তা কোনও কাজে লাগে না। সোমবারের একটি আগুন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। স্থানীয় মানুষ এবং দমকল বাহিনীর তৎপরতায় বড়সড় বিপদের হাত থেকে পাঁচল আরামবাগ মহকুমা হাসপাতাল।

হাসপাতালের নীচের তলায় মূল ফটকের কাছে ওয়ার্ড মাস্টারের ঘর। দমকল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ ওয়ার্ড মাস্টারের ঘরের পাশেই মিটার ঘরে আগুন লাগে। ওই মিটার ঘরের গায়েই অক্সিজেন সিলিন্ডার রাখার ঘর রয়েছে। সেখানে সব সময় ছোট-বড় মিলিয়ে শত খানেকের উপর অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুত থাকে। সেই কারণে মিটারগুলি বাক্সগুলি ফাটার শব্দে আতঙ্ক দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে পুরো হাসপাতলে। রোগীর আত্মীয়-পরিজনদের মধ্যে কান্নাকাটি ও হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। একতলা থেকে তিনতলা— সমস্ত ওয়ার্ড থেকে রোগীদের নামিয়ে হাসপাতালে বাইরে আনা হয়। হাসপাতাল কর্মীদের সঙ্গে ওই কাজে হাত লাগান অ্যাম্বুল্যান্স চালক, স্থানীয় মানুষজনও। ১১টা ১৫ মিনিট নাগাদ খবর পেয়ে দমকলের একটি ইঞ্জিন আসে। সাড়ে ১১ টা নাগাদ হাসপাতালকে আগুন থেকে বিপদমুক্ত করা হয় বলে জানায় দমকল কর্মীরা। বিপদ কাটতেই ফের রোগীদের স্ট্রেচারে করে নিজের নিজের ওয়ার্ডে পৌঁছে দেওয়া হয়। শর্ট সার্কিট থেকে এই আগুন লেগেছে বলে প্রাথমিক তদন্তের পরে দমকলের কর্মীরা জানিয়েছেন। একই বক্তব্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেরও।

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে। হাসপাতালের কর্মীদের অভিযোগ, এখানে এমনিতে প্রয়োজনের তুলনায় অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র কম। তার উপর যন্ত্রগুলির অধিকাংশ পুরনো। সর্বোপরি সেগুলি চালানোর মতো উপযুক্ত কর্মী নেই। শুধু হাসপাতালের কর্মীরা নন। অভ্যন্তরীণ অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষর একটি অংশও। তাঁরা বলেন, ‘‘ছেঁড়া-কাটা তার এবং নিম্নমানের সরঞ্জাম দিয়ে বিদ্যুতের কাজ কাজ করা হয়েছে। যা এই বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ। বিদ্যুৎবন্টন কোম্পানি তদারকিও করে না।’’ অভিযোগ অস্বীকার করে বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানির আরামবাগ ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার সঞ্জয় শিকারি বলেন, ‘‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিদ্যুৎ সংক্রান্ত সমস্যার কথা জানালেই আমরা সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে বিষয়টি দেখি। আমাদের মনে হয়েছে অতিরিক্ত লোডের কারণেই মিটারে আগুন লেগে থাকতে পারে। পুরো বিষয়টা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

প্রসঙ্গত, আমরি-কাণ্ডের পর রাজ্যের বিভিন্ন এলাকার মতোই আরামবাগ মহকুমা জুড়ে অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখার কাজ শুরু করে প্রশাসন ও দমকল কর্তৃপক্ষ। সে সময় আগুন লাগলে কী ভাবে তা নেভানো হবে, তার প্রাথমিক উপায়গুলি দেখান দমকল কর্মীরা। শেখানো হয় অগ্নি নির্বাপক সিলিন্ডারগুলির ব্যবহারের প্রক্রিয়া। আগুন নেভাতে কি উপাদান ব্যবহার করতে হবে সে সম্পর্কেও হাতেকলমে দেখানো হয়েছিল। কিন্তু সে সব প্রশিক্ষণের কিছুই কাজে লাগাতে পারলেন না হাসপাতাল কর্মীরা। হাসপাতাল সুপার শান্তনু নন্দী বলেন, ‘‘অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থাপনা বাড়ানো হচ্ছে। সেগুলি ব্যবহারের প্রক্রিয়া এবং আগুন নেভাতে কী উপাদান ব্যবহার করতে হবে সে সম্পর্কেও হাতেকলমে প্রশিক্ষণের জন্য দমকল বাহিনীর সহয়তা নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fire in Hospital Accident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE