হাঁটু সমান জল টপকে আনা হচ্ছে পানীয় জল।
হাওড়ার বেশির ভাগ জায়গায় বন্যা পরিস্থিতির যখন সামগ্রিক উন্নতি হচ্ছে, তখন নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে উলুবেড়িয়া-২ এবং পাঁচলা ব্লকের বেশ কিছু পঞ্চায়েত।
ভৌগোলিক ভাবে আমতা ও জগৎবল্লভপুর তুলনায় উঁচু হওয়ায় সেখানকার জমা জলই নিচু এলাকা হিসেবে পরিচিত উলুবেড়িয়া-২ এবং পাঁচলা এলাকায় বাঁধ ছাপিয়ে ঢুকছে কয়েক দিন ধরেই। ইতিমধ্যেই উলুবেড়িয়া-২ ব্লকের জোয়ারগড়ি, তুলসীবেড়িয়া, তেহট্ট, কাঁটাবেড়িয়া-১ ও ২ পঞ্চায়েত এলাকা জলমগ্ন হয়েছে। তেমনই জগৎবল্লভপুর এলাকার জল পাঁচলার দিকে সরে আসায় সেখানকার জলাবিশ্বনাথপুর, জুজারসাহা, শুভয়াড়া এবং বনহরিশপুর পঞ্চায়েত এলাকায় জল ক্রমশ বাড়ছে। বাড়ছে দুর্গতদের সংখ্যাও। ইতিমধ্যেই বহু মানুষকে ত্রাণ শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
উলুবেড়িয়া-২ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি মদন মণ্ডল বলেন, ‘‘আমাদের এলাকায় ১৯টি ত্রাণ শিবিরে এক হাজারের বেশি মানুষ রয়েছেন। নতুন করে জলমগ্ন এলাকার লোকেদের সরিয়ে আনা হচ্ছে।’’ একই ভাবে পাঁচলার বিডিও জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘৩৪টি ত্রাণ শিবিরে সাড়ে ৩ হাজার মানুষকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। দুর্গতের সংখ্যা আরও বাড়ছে। সমস্যা মোকাবিলায় প্রশাসন তৎপর রয়েছে।’’
ব্যাগ বাঁচানোর চেষ্টা পড়ুয়াদের।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ডাকাতিয়া খালের বাঁধ ভেঙে জগৎবল্লভপুরের কয়েকটি পঞ্চায়েত এবং আমতা-১ ব্লকের রসপুর, ঘোষালপুর, চন্দ্রপুরের মতো এলাকাগুলি আগেই প্লাবিত হয়েছিল। এ বারে সেই জল ক্রমশ দক্ষিণ দিকে, অর্থাৎ উলুবেড়িয়া-২ এবং পাঁচলা ব্লকের দিকে সরছে। আমতা-১ ব্লকের চন্দ্রপুরে মধ্যকুলের বাঁধ ছাপিয়ে এবং কুমারচকের রাস্তা ভেঙে জল ঢুকছে। পাশাপাশি, হাউলিবাগান, সাত ভাইয়ের বাঁধ উপচে জল ঢুকছে পাঁচলায়। উলুবেড়িয়ার জমা জল বনস্পতি খাল হয়ে গঙ্গায় পড়ে। আর পাঁচলা এলাকার জমা জল রাজাপুর খাল হয়ে গঙ্গায় মেশে। কিন্তু নদী ও খালের জলস্তর এখনও খুব বেশি না-কমায় ওই সব জল বেরোতে পারছে না। ফলে, এখনও বেশ কয়েক দিন যে তাঁদের দুর্ভোগ পোহাতে হবে, তা এক রকম মেনেই নিয়েছেন দুর্গতেরা।
কারও বাড়ির উঠোনে জল জমেছে। তো কারও বাড়ির ভিতরে হাঁটুজল। উঠছে ত্রাণ নিয়ে অভিযোগও। পাঁচলার জলাবিশ্বনাথপুরের বাসিন্দা নিরাপদ মালিকের বাড়িতে জল ঢুকেছে। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘টালি নামিয়ে বাড়িতে যে ত্রিপল দেব, সেই উপায় নেই। ত্রিপল পাচ্ছি না।’’ একই সুরে ওই পঞ্চায়েতের মেলোপাড়ার বাসিন্দা গীতা বর বলেন, ‘‘উনুনে জল ঢুকে গিয়েছে। ফলে, স্টোভে রান্না করছি। কিন্তু কেরোসিনের অভাব। গ্যাসও মিলছে না। খুবই সমস্যায় পড়েছি।’’ পাঁচলার কংগ্রেস নেতা দেবাশিস পালুই ত্রাণ বিলিতে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেছেন শাসকদলের বিরুদ্ধে। তৃণমূল অভিযোগ মানেনি। পাঁচলার নবঘরা অটো ইউনিয়নের তরফে শনিবার ঝিখিরা এলাকায় ত্রাণ বিলি করা হয়।
ছবি: সুব্রত জানা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy