Advertisement
E-Paper

জ্বরে আক্রান্তের মৃত্যু, শ্রীরামপুরে ফের প্রশ্নের মুখে স্বাস্থ্য দফতর

জেলা প্রশাসনের দাবি ছিল, ডেঙ্গি প্রতিরোধে পদক্ষেপ করা হয়েছে। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দাবি করেছিলেন, জেলায় ডেঙ্গির প্রকোপ কমছে। কারণ হাসপাতালগুলিতে জ্বর নিয়ে রোগী ভর্তির সংখ্যা কমেছে। ভিড় কমছে ফিভার ক্লিনিকেও।

প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৬ ০১:২১

জেলা প্রশাসনের দাবি ছিল, ডেঙ্গি প্রতিরোধে পদক্ষেপ করা হয়েছে। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দাবি করেছিলেন, জেলায় ডেঙ্গির প্রকোপ কমছে। কারণ হাসপাতালগুলিতে জ্বর নিয়ে রোগী ভর্তির সংখ্যা কমেছে। ভিড় কমছে ফিভার ক্লিনিকেও।

কিন্তু প্রশাসনের দাবি আর বাস্তব পরিস্থিতির মধ্যে যে ফারাক রয়েছে তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে শ্রীরামপুরের বাসিন্দা রূপা ভট্টাচার্যের মৃত্যুতে। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের চার্চ স্ট্রিটে একটি আবাসনে ভাড়া থাকতেন তিনি। প্রসঙ্গত ৩, ৭, ৮, ৯, ১১ ওয়ার্ডেই জ্বরের প্রকোপ বেশি। যাঁদের অনেকেই ডেঙ্গির উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।

রূপাদেবীর পরিবার সূত্রে খবর, শনিবার রূপাদেবীর জ্বর আসে। ওই দিনই তাঁকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি প্যারাসিটামল দেন। পর দিন জ্বর কমে যায়। তবে পেটে এবং কোমরে যন্ত্রণা ছিল। চিকিৎসক ওষুধ দেন ও রক্ত পরীক্ষা করাতে বলেন। রূপাদেবীর স্বামী সুবীরবাবু বলেন, ‘‘মঙ্গলবার দুপুর একটা নাগাদ স্ত্রী বলে, শরীরটা খারাপ লাগছে। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। অ্যাম্বুল্যান্স ডেকে নার্সিংহোমে পৌঁছনোর আগেই মারা যায়।’’ এ দিন সন্ধ্যায় রূপাদেবীর রক্তের রিপোর্টে দেখা যায়, প্লেটলেট ৪৫ হাজারে নেমে গিয়েছিল। মৃতার এক আত্মীয়া বলেন, ‘‘রিপোর্টে প্লেটলেটের সংখ্যা দেখে মনে হচ্ছে, হয়তো ওর ডেঙ্গি হয়েছিল।’’

যদিও রূপাদেবীর চিকিৎসক শুভাশিস চক্রবর্তী রায়চৌধুরীর দাবি, ‘‘রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টে পরিষ্কার ওঁর ডেঙ্গি ছিল না। জ্বরও সেরে গিয়েছিল। হঠাৎই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান।’’ প্লেটলেট এতটা নেমে যাওয়ার কারণ নিয়ে শুভাশিসবাবুর বক্তব্য, ‘‘সেটা নানা কারণে হতে পারে। তবে রূপাদেবীর যে ডেঙ্গি ছিল না, এটা নিশ্চিত।’’ তবে শহরেরই আর এক চিকিৎসকের মন্তব্য, ‘‘প্রথম বার রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গি ধরা না-ই পড়তে পারে। কিন্তু জ্বর হল এবং প্লেটলেট কমে গেল মানে ডেঙ্গির সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তা ছাড়া ডেঙ্গিতে হার্ট অ্যাটাক হতেই পারে। মুশকিল হল, এ ক্ষেত্রে সেটা জানার উপায় থাকল না।’’

জুলাই মাসের গোড়া থেকেই ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মুসলমানপাড়া, টিকিয়াপাড়া, নেতাজি সুভাষ অ্যাভেনিউ, রায়ঘাট-সহ নানা এলাকায় ঘরে ঘরে জ্বরের প্রকোপ বাড়ছিল। মঙ্গলবার রূপাদেবীর মৃত্যুতে বাসিন্দারা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। ডেঙ্গি রোধে পুরপ্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতরের গাফিলতিতেই যে এমন অবস্থা সেই অভিযোগ করেছেন তাঁরা।

বস্তুত, মাস দুয়েক আগে থেকেই হাসপাতালে জ্বর নিয়ে রোগী ভর্তি বাড়তে থাকায় চিকিৎসকেরা ডেঙ্গির আশঙ্কা করেছিলেন। তাঁদের আশঙ্কা যে অমূলক ছিল না দেরিতে হলেও ডেঙ্গি প্রতিরোধে স্বাস্থ্য দফতরের কোমর বেঁধে নামাই তা প্রমাণ করে। ডেঙ্গি রোধে মূলত এডিস ইজিপ্টাই মশার লার্ভা মারার উপরে জোর দেয় প্রশাসন। তাদের যুক্তি ছিল, লার্ভা মেরে ফেলতে পারলে ডেঙ্গির প্রকোপ কমবে। বাসিন্দারা মশা মারতে কামানের ধোঁওয়া বা অন্য কিছু ব্যবহারের দাবি জানালেও স্বাস্থ্য দফতরের যুক্তি ছিল ডেঙ্গির মশা জামাকাপড়ের মধ্যে, জুতোর মধ্যে লুকিয়ে থাকে। তাই ওই সব ব্যবস্থা খুব কাজ দেবে না। স্বাস্থ্য দফতরের এমন বক্তব্যেই ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা। তাঁরা জানান, মশার লার্ভা মারা নিঃসন্দেহে ভাল উদ্যোগ। কিন্তু ডেঙ্গির যে সব মশা ইতিমধ্যেই কামড়েছে বা ঘুরে বেড়াচ্ছে তাদের যদি না মারা যায় তাহলে লাভ কী?

পুর কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, ওই ওয়ার্ডেই অভিযানে সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। পুরপ্রধান অমিয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই মহিলার মৃত্যু দুর্ভাগ্যজনক। ডেঙ্গি মোকাবিলায় পুরসভা কোনও খামতি রাখেনি। বিভিন্ন ওয়ার্ডে মশার লার্ভা মারতে তেল ছড়ানো অব্যাহত রয়েছে।’’

সুবীরবাবুদের আবাসনের পাশেই শ্রীরামপুর আদালত। এ দিন সেখানে গিয়ে দেখা গেল মাঠের মাঝে জল জমে রয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের (শিল্পাঞ্চল) দফতরের সামনেও একাধিক জায়গায় জল জমে। ওই জায়গায় ডেঙ্গির জীবাণু বহনকারী মশা জন্মাতে পারে বলে বাসিন্দারা আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন। পুরসভা সূত্রের দাবি, ওই জায়গাতেও তেল ছড়ানো হয়েছে। প্রয়োজনে ফের তা করা হবে।

Health department
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy