Advertisement
০৫ মে ২০২৪

যাত্রী আছে কি, দেখতে বাসের ছাদে উঠবে পুলিশ

আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই অবাধে বাসের ছাদে চলছে যাত্রী পরিবহণ। এ ভাবে বিপজ্জনক ভাবে যাতায়াতে ধরা পড়লে সর্বোচ্চ তিন হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে সংশ্লিষ্ট বাসের। হাওড়া গ্রামীণ জেলা ট্রাফিক পুলিশের এক কর্তা জানান, পরিস্থিতির বিচারে বাসের ভিতরে হয়তো আসনের সংখ্যার চেয়ে বাড়তি যাত্রী নেওয়া যায়। কিন্তু ছাদে যাত্রী তোলা একেবারেই বেআইনি।

এভাবেই চলে আইন ফাঁকি দেওয়া। উলুবেড়িয়ার বানিতলায় সুব্রত জানার তোলা ছবি।

এভাবেই চলে আইন ফাঁকি দেওয়া। উলুবেড়িয়ার বানিতলায় সুব্রত জানার তোলা ছবি।

নুরুল আবসার
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:১০
Share: Save:

আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই অবাধে বাসের ছাদে চলছে যাত্রী পরিবহণ। এ ভাবে বিপজ্জনক ভাবে যাতায়াতে ধরা পড়লে সর্বোচ্চ তিন হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে সংশ্লিষ্ট বাসের। হাওড়া গ্রামীণ জেলা ট্রাফিক পুলিশের এক কর্তা জানান, পরিস্থিতির বিচারে বাসের ভিতরে হয়তো আসনের সংখ্যার চেয়ে বাড়তি যাত্রী নেওয়া যায়। কিন্তু ছাদে যাত্রী তোলা একেবারেই বেআইনি।

তবে আইন থাকলেও তা নিয়ে কড়াকড়ি এতদিন প্রায় দেখাই যেত না। কিন্তু সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ কমর্সূচীর প্রেক্ষিতে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে রাজ্যের সবর্ত্র পুলিশ কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে। যার ফলে বেকায়দায় বাসচালক, কন্ডাক্টররা। কয়েকটি ক্ষেত্রে পুলিশ ব্যবস্থা নেওয়ায় পুলিশের নজর এড়াতে এখন অন্য কৌশল নিয়েছেন তাঁরা। যা নজরে পড়ল মুম্বই রোডে। কোলাঘাট থেকে হাওড়া শহর পর্যন্ত জাতীয় সড়কের গুরুত্বপূর্ণ যে সব মোড়ে পুলিশ আছে, তার কিছুটা আগেই বাসের ছাদে আসা যাত্রীরা শুয়ে পড়ছেন। মোড় পার হলেই ফের স্বমহিমায় তাঁরা। ফের ছাদে বসে হাওয়া খেতে খেতে গন্তব্যে পৌঁছে যাচ্ছেন তাঁরা। পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে হাওড়া ও কলকাতাগামী দূরপাল্লার বাসগুলিতেই এখন এই ছবি হামেশাই চোখে পড়ছে।

প্রতিদিন দুই মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েকশো বাস কলকাতা ও হাওড়ায় যাতায়াত করে। সোমবার সপ্তাহের প্রথম দিন সকালে, আর আর শনিবার সপ্তাহান্তে বিকেলে বাসে বেশ ভিড় হয়। ভিতরে তিল ধারণের জায়গা থাকে না। ভিড়ের চাপে ছাদেও যাতায়াত করেন যাত্রীরা। সোম থেকে শনি, সপ্তাহের প্রতিদিনই দেখা যায় এই ছবি।

বাগনান, উলুবেড়িয়া, পাঁচলা, রানিহাটি, ধূলাগড়ি প্রভৃতি মুম্বই রোডের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলিতে ট্রাফিক পুলিশের অভিযান চলে। ছাদে যাত্রী নেওয়ার জন্য ধরা পড়লে কোনওমতে পুলিশকে কিছু টাকা জরিমানা দিয়ে বাসচালক রেহাই পেয়ে যায়। তারপরই ওই বাসের চালক ও কন্ডাক্টর সেই খবর জানিয়ে দেয় পরবর্তী বাসগুলিকে। আগাম খবর পেয়ে যে সব মোড়ে অভিযান চলছে সেখানে পৌঁছনোর আগেই অন্য বাসগুলি পুলিশের নজর এড়াতে ছাদের যাত্রীদের শুয়ে পড়তে বলে। এ ভাবেই রেহাই মেলে অভিযান থেকে।

হাওড়া সিটি পুলিশ এলাকায় নজরদারি অনেক বেশি। ফলে সিটি পুলিশ এলাকায় ঢোকার আগেই ডোমজুড়ের নিবড়ায় মুম্বই রোড এবং কোনা এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগস্থলে বাস থামিয়ে সব যাত্রীকে ছাদ থেকে নামিয়ে দেন চালক এবং কন্ডাক্টর। এ বিষয়ে কন্ডাক্টরদের একাংশ জানান, গ্রামীণ এলাকার অনেকটা অংশই ফাঁকা। রাস্তায় পুলিশ থাকে না বললেই চলে, আবার হাওড়া সিটি পুলিশ এলাকায় পুলিশের নজরদারি এতটাই বেশি যে কোনও কৌশল কাজে লাগে না। ফলে যাত্রীদের নামিয়ে দিতে হয়। কিন্তু এমন কৌশল কেন?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাস কন্ডাক্টরের কথায়, ‘‘বাস চালানোর লাভ বজায় রাখতে মালিকেরাই এ সব বন্দোবস্ত করতে বলেন।’’ আর একটি বাসের এক চালক জানান, বাস চালানোর খরচ বেড়েছে। ডেবরা ও ধূলাগড়িতে রয়েছে দুটি টোলপ্লাজা। বছরের পর বছর টোল বেড়েই চলেছে। অথচ বাসের ভাড়া সেই অনুপাতে বাড়েনি। তাই ঘাটতি মেটাতেই ছাদে যাত্রী তুলতে হয়। একইসঙ্গে অবশ্য তাঁর দাবি, অনেক সময়ে যাত্রীরাও তাঁদের বাধ্য করেন ছাদে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

গ্রামীণ জেলা ট্রাফিক পুলিশের এক কর্তা জানান, দেখা গিয়েছে, বাস উল্টে গেলে ছাদের যাত্রীরাই মারা যান বেশি সংখ্যায়। তাই নিয়মিত অভিযান চালিয়ে ছাদে যাত্রী তোলা বাসের জরিমানা করা হয়। মামলা করা হয়। এ বার ছাদে যাত্রী শুয়ে আছেন কিনা সেটাও পরীক্ষা করা হবে।

যা শুনে এক ট্রাফিক পুলিশ কর্তার কথায়, ‘‘প্রতিদিনই প্রতিটি বাসের ছাদে উঠে পরীক্ষা করা সম্ভব!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Illegal transport Passengers Bus roof
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE