Advertisement
১৬ মে ২০২৪

বৈধ অনুমতি ছাড়াই চলছিল ব্যবসা, বন্ধ গুপ্তিপাড়া-শান্তিপুর গাড়ি পারাপার

দুর্ঘট‌নার পর টনক নড়ল প্রশাসনের। ফেরি পারাপার ফের চালু হলেও গুপ্তিপাড়া ফেরিঘাটে ভেসেলে গাড়ি পারাপার বন্ধ হয়ে গেল। গত ৬ সেপ্টেম্বর রাতে গাড়ি পারাপার করতে গিয়ে গঙ্গায় গাড়ি পড়ে গিয়ে নিখোঁজ হন শান্তিপুরের ব্যবসায়ী তোতন রায়।

বন্ধ হয়ে গেল ভেসেলে গাড়ি পারাপার। গুপ্তিপাড়া ঘাটে সুশান্ত সরকারের তোলা ছবি।

বন্ধ হয়ে গেল ভেসেলে গাড়ি পারাপার। গুপ্তিপাড়া ঘাটে সুশান্ত সরকারের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গুপ্তিপাড়া শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:১৬
Share: Save:

দুর্ঘট‌নার পর টনক নড়ল প্রশাসনের।

ফেরি পারাপার ফের চালু হলেও গুপ্তিপাড়া ফেরিঘাটে ভেসেলে গাড়ি পারাপার বন্ধ হয়ে গেল। গত ৬ সেপ্টেম্বর রাতে গাড়ি পারাপার করতে গিয়ে গঙ্গায় গাড়ি পড়ে গিয়ে নিখোঁজ হন শান্তিপুরের ব্যবসায়ী তোতন রায়। গত বৃহস্পতিবার শান্তিপুরের ঘাটে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। দুর্ঘটনার তদন্তে নেমে প্রশাসন জানতে পারে, বৈধ অনুমতিই ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে ভেসেলে গাড়ি পারাপার চলছিল গুপ্তিপাড়া ও শান্তিপুরের মধ্যে।

শনিবার দুপুরে চুঁচুড়ার মহকুমাশাসক সুদীপ সরকার সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক ডাকে‌ন। বলাগড় বিডিও অফিসে বৈঠকে ছিলেন হুগলির সাংসদ রত্ন‌া দে নাগ, বিধায়ক অসীম মাঝি, শান্তিপুরের উপ-পুরপ্রধা‌ন আব্দুল সাল্লাম কারিগর ও দুই জেলার পুলিশ-প্রশাসনের আধিকারিকরা। সেখানেই ভেসেলে গাড়ি পারাপার বন্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়।

বৈঠকে শান্তিপুরের উপ-পুরপ্রধান জানান, তাঁরা ভুটভুটিতে মানুষ পারাপারের জন্য ঘাটের ইজারা দিয়েছিলেন। তবে গাড়ি পারাপারের কোনও অনুমতি দেওয়া হয়নি।’’ অনুমতি ছাড়াই কী করে এত দিন গঙ্গায় গাড়ি পারাপার করেছে, তার কোনও সদুত্তর অবশ্য মেলেনি।

চুঁচুড়ার মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘ঘাটের ইজারাদার ভেসেলে গাড়ি পারাপারের অনুমতির কোনও বৈধ কাগজ দেখাতে পারেননি। সংশ্লিষ্ট পুরসভার লোকজন‌ও জানান, ওই অনুমতি দেওয়া হয়নি। সেই কারণেই ওখানে গাড়ি পারাপার বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘এ পারে কোনও গাড়ি ভেসেল থেকে নামলে অথবা ভেসেলে উঠলে সঙ্গে সঙ্গে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ দু’পারেই ঘাটে পুলিশ নজরদারি চা‌লাবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। প্রসঙ্গত, দুর্ঘটনার পর ফেরিঘাটের লোকজন দাবি করেছিলেন, সকাল ছ’টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ভেসেলে গাড়ি পারাপারের অনুমতি তাঁদের আছে।

এই অবস্থায় যাত্রীদের অনেকেই ভেসেলে বেআইনি ভাবে গাড়ি পারাপার নিয়ে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, প্রতিদিন গাড়ি পারাপার বাবদ হাজার হাজার টাকা আয় হলেও তা যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যে কাজে লাগানো হয়নি। সরকারি ভাঁড়ারেও জমা পড়েনি। ওই টাকা নয়ছয় করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, ঘাটে টাঙানো থাকত না ভাড়ার তালিকা, মিলত না টিকিট।

দু’পারেই জেটি থাকলেও যাত্রীদের ভুটভুটিতে ওঠানামা করতে হয় বাঁশের সাঁকোয় চড়ে। গুপ্তিপাড়ার দিকে জেটিতে ওঠার সেতুটি জীর্ণ। শান্তিপুরের দিকে পর্যাপ্ত আলো থাকলেও গুপ্তিপাড়া ঘাট এবং আশপাশ কার্যত অন্ধকারে ডুবে থাকে। ঘাটে যাওয়ার রাস্তা এখনও কাঁচা। সন্ধ্যার পর অন্ধকারে যাতায়াত করতে হয় যাত্রীদের। পানীয় জ‌ল বা শৌচাগারের বালাই নেই। বৈঠকে ঠিক হয়েছে, যে পুরসভা, পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতি ঘাট ইজারা দেবে তাদেরই আলো বা সংলগ্ন‌ রাস্তা তৈরি করতে হবে। এর মধ্যে সিসিটিভি লাগানোর বিষয়ও রয়েছে। সাত দিন পরে প্রশাসনের তরফে সরেজমিনে গোটা ব্যবস্থা পরীক্ষা করা হবে। এখন থেকে প্রশাসন সব ফেরিঘাটেই নিয়মিত ভাবে নজর রাখবে। পরিকাঠামোয় ঘাটতি দেখলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ দিকে গাড়ি পারাপার বন্ধ হওয়ায় দু’পারের বহু ব্যবসায়ী চিন্তায় পড়েছেন। তাঁদের অনেকটা পথ ঘুরে কল্যাণী সেতু দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। তাঁদের বক্তব্য, প্রয়োজনে জলপথ নিগম সরাসরি ভেসেলে গাড়ি পারাপারের ব্যবস্থা করুক। তাতে তাঁদের সুবিধার পাশপাশি সরকারেরও আয় হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Illegal water transport Stopped
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE