Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

অশান্তিতে রাশ, নজর চোলাইয়ে

আবগারি দফতরের আরামবাগ রেঞ্জের ডেপুটি কালেক্টর শান্তনু রায় বলেন, “এমনিতে সারা বছরই আমাদের অভিযান চলে। তবে ভোটের আগে বিশৃঙ্খলা এড়াতে অভিযানের গতি বাড়ানো হচ্ছে।”

পীযূষ নন্দী
আরামবাগ শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৮ ০১:৪০
Share: Save:

ভোটের আগে ও পরে গোলমালে রাশ টানতে চোলাই ও গাঁজায় নজর দিতে চাইছে প্রশাসন। গত সোমবার রাত থেকে আরামবাগ মহকুমা জুড়ে শুরু হয়েছে বিশেষ অভিযানও। সে অভিযান চলবে আগামী এক মাস। প্রশাসন সূত্রে খবর, কোথাও পুলিশ এবং আবগারি দফতর যৌথভাবে অভিযান চালাবে। কোথাও দুই দফতর পৃথক ভাবে। আবার দুই দফতরকে নিয়ে মহকুমা প্রশাসন এবং ব্লক প্রশাসনের তত্ত্বাবধানেও অভিযান চলবে।

আবগারি দফতরের আরামবাগ রেঞ্জের ডেপুটি কালেক্টর শান্তনু রায় বলেন, “এমনিতে সারা বছরই আমাদের অভিযান চলে। তবে ভোটের আগে বিশৃঙ্খলা এড়াতে অভিযানের গতি বাড়ানো হচ্ছে।”

ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার পর থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে সংঘর্ষ। কোথাও শাসক বনাম বিরোধী তো কোথাও শাসকের ভিতরের কোন্দলে উত্তপ্ত গোটা রাজ্য। সে ছবিতে কোনও হেরফের নেই হুগলি জেলায়। আর পুরনো অভিজ্ঞতা থেকে পুলিশ মনে করছে এই সব সংঘর্ষের পিছনে একটা বড় ভূমিকা পালন করে মাদক। পুলিশ ও প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা মনে করছেন রাজনৈতিক অপরাধ-সহ নানা ধরনের হিংসাত্মক ঘটনার আগে মাদক সেবনের প্রবণতা থাকেই। সবচেয়ে সহজলভ্য মাদক চোলাই মদ এবং গাঁজা। প্রায় সব গ্রামেই একাধিক চোলাইয়ের ঠেক রয়েছে। কোথাও তো ঘরে ঘরে তৈরি হয় চোলাই। আর গাঁজাও মেলে হাত বাড়ালেই—শহর এবং গ্রামের বিভিন্ন দোকানে।

আবগারি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার থেকে শুরু হওয়া সাঁড়াশি অভিযানে আরামবাগ-গোঘাট-খানাকুল এবং পুড়শুড়া ব্লক এলাকার বিভিন্ন গ্রামে অন্তত ১০ হাজার লিটার চোলাই নষ্ট করা হয়েছে। বেশ কিছু ভাটিখানা ভাঙা হয়েছে। সে সব জায়গায় যাতে নতুন করে আবার ভাটিখানা গজিয়ে না-ওঠে তা নিয়ে নজরদারিও চলছে।

পুলিশ এবং আবগারি দফতরের হিসাবে মহকুমার চারটি থানা এলাকা গোঘাট-আরামবাগ-পুড়শুড়া এবং খানাকুলের বিভিন্ন গ্রামে চোলাই মদ তৈরির ভাটি আছে প্রায় ৩০০। কোথায়ও কোথায়ও আবার তা কুটির শিল্পের মাত্রা পেয়েছে। যেমন শুধু পুরশুড়ার রাউতাড়া গ্রাম সংলগ্ন আকবরি খালের দু’পাড় জুড়ে ৪৫টি চোলাইয়ের ভাটি চলে। গোঘাটের মথুরাতে একটি পুকুর পাড় জুড়েও রয়েছে প্রায় খান পঞ্চাশ ভাটিখানা। এ ছাড়া পুড়শুড়ার ফুলপুকুর, নিমডাঙ্গি, খানাকুলের নতিবপুর, মাড়োখানা, রাজহাটি, বন্দর, আরামবাগের নৈসরাই, তিরোল, গৌরহাটি বারোয়ারি তলা, গোঘাটের দামোদরপুর, কানাইপুর, পশ্চিমপাড়া ইত্যাদি বহু গ্রামে রয়েছে ভাটি।

গাঁজা পাওয়া আরও সোজা, বলছেন বাসিন্দারাই। শুধু আরামবাগ পুর এলাকাতেই প্রায় ৪০টি ঠেক। গৌরহাটি মোড়, বাঁধপাড়া, বাসস্ট্যান্ড, আন্দিমহল্লা প্রভৃতি এলাকার রমরমিয়ে চলে গাঁজা বিক্রি। তার বাইরে ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতাও রয়েছে প্রচুর। তারা ঘুরে ঘুরে গাঁজা বিক্রি করে, আবার ডেকে পাঠালে এসে মাদক সরবরাহ করেও যায়। খানাকুল, গোঘাট, পুড়শুড়ার বিভিন্ন গ্রামের বাজারেও চালু রয়েছে এই ব্যবস্থা।

স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করছেন পুলিশ বা প্রশাসন যদি সক্রিয়তা দেখায় তবে কারবার বন্ধ করা সম্ভব। ভোটের আগে রাজনৈতিক দলগুলিও বিশেষ ভাবে মাদকাসক্তদের কাজে লাগানোর চেষ্টা করে। আর সে সবের ফল ভুগতে হয় সাধারণ মানুষকে। মাদকাসক্তদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ তাঁরা— জানালেন পুরশুড়ার এক বাসিন্দা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Panchayat Elections 2018 Hooch চোলাই
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE