তাঁরা কেউই কাজ করেননি বলে অভিযোগ। তবুও মজুরি তুলেছেন একশো দিনের প্রকল্পে।
পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী থেকে শুরু করে পঞ্চায়েত সদস্য, এমনকী লণ্ড্রীর মালিকের নামও রয়েছে প্রাপকের তালিকায়। অভিযোগটি উঠেছে হাওড়ার সাঁকরাইলের নলপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে। প্রকল্পের জেলা নোডাল অফিসারের কাছে ইতিমধ্যেই তদন্ত চেয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন একদল গ্রামবাসী। অভিযোগের ভিত্তিতে সাঁকরাইলের বিডিও-কে তদন্ত করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে প্রকল্পের জেলা সেল সূত্রে জানা গিয়েছে।
নলপুর পঞ্চায়েতের প্রধান ফুলেশ্বরী ধঁকের স্বামী বিশ্বনাথ ধঁকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি প্রকল্পে কাজ না করেও টাকা পেয়েছেন। যদিও খাতায় কলমে তিনি যে কাজ করেছেন তা দেখানো হয়েছে। পঞ্চায়েতের তরফে যে হিসাব দেখানো হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, তিনি ২০১৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৬ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দফায় দফায় মোট ২৭ দিন কাজ করেছেন। এর জন্য তাঁকে মজুরিও দেওয়া হয়েছে।
একই অভিযোগ পঞ্চায়েতের এক সদস্য শান্তনু সরদারের বিরুদ্ধেও। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পেশায় জরির ওস্তাগর শান্তুনুবাবুও কাজ করেননি। অথচ টাকা পেয়েছেন। পঞ্চায়েতের হিসাবেও দেখানো হয়েছে ২০১৫ সালের ২৬ ডিসেম্বর থেকে ২০১৬ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি দফায় দফায় ৫১ দিন কাজ করেছেন। রাজেশ মল্লিক নামে এক লণ্ড্রীর মালিককেও খাতায় কলমে প্রকল্পে হাজির বলে দেখানো হয়েছে। তাঁর নামে টাকাও এসে গিয়েছে।
উল্লেখ্য, এক সময় পঞ্চায়েতটি ছিল সিপিএমের। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর গত জুন মাসে সিপিএমের কয়েকজন সদস্য তৃণমূলে চলে এলে পঞ্চায়েতটিও তৃণমূলের দখলে চলে আসে। নতুন প্রধান হিসাবে দায়িত্ব নেন ফুলেশ্বরীদেবী। তাঁর কথায়, ‘‘আমি নতুন প্রধান হয়েছি। যখন প্রধান ছিলাম না তখন আমার স্বামী এই প্রকল্পে কাজ করেছেন।’’ ফুলেশ্বরীদেবী এ কথা বললেও পঞ্চায়েতের রেকর্ড ঘেঁটে দেখা গিয়েছে, বিশ্বনাথবাবু তাঁর স্ত্রী প্রধান হওয়ার পরেও চলতি বছরের সেপ্টেম্বর, অক্টোবর মাসে কাজ করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে শান্তনুবাবু বলেন, ‘‘আমি এখন বিহারে আছি। তাই কথা বলতে পারব না।’’ রাজেশবাবু বলেন, ‘‘আমি অসুস্থ। তাই কোনও কথা বলতে পারব না।’’
অভিযোগের তদন্ত নিয়ে সাঁকরাইলের বিডিও মহম্মদ আলিমুদ্দিন বলেন, ‘‘জেলা প্রশাসন থেকে এখনও আমার কাছে তদন্তের কোনও নির্দেশ আসেনি। নির্দেশ এলে অবশ্যই তদন্ত করা হবে।’’
গ্রামবাসীদের অবশ্য অভিযোগ, শুধু এই তিনজনই নন, এমন অনেকেই আছেন যাঁরা ১০০ দিনের প্রকল্পে কাজ না করেও টাকা পেয়েছেন। অভিযোগকারীদের একজন শঙ্কর সিপাই বলেন, ‘‘প্রধানের স্বামী বা পঞ্চায়েত সদস্য কাজ করতেই পারেন। কিন্তু আমরা দেখেছি, বাকি দু’জন কাজই করেননি। এমন উদাহরণ আরও আছে।’’
প্রকল্পের সুপারভাইজার হিরালাল মণ্ডল নলপুর পঞ্চায়েতের অস্থায়ী কর্মীও। তিনি কী ভাবে দুটি কাজ করছেন?
হিরালালবাবুর যুক্তি, ‘‘এক সময়ে আমি বেকার ছিলাম। তখন ১০০ দিনের প্রকল্পে সুপারভাইজারের কাজ পাই। পরে পঞ্চায়েতেও কাজ পাই।’’
পঞ্চায়েতের বিরোধী নেত্রী সিপিএমের সুলতা নস্কর বলেন, ‘‘১০০ দিনের কাজের নামে পুকুর চুরি হচ্ছে। উপযুক্ত তদন্ত হলে সব জানা যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy