Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

পাঁচ শিক্ষিকা, ছাত্রী-সংখ্যা পাঁচশোর বেশি

দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরের স্কুলটির একমাত্র শিক্ষিকা বদলি হয়ে অন্য স্কুলে যোগ দিতে পারছিলেন না সভাপতি ‘রিলিজ অর্ডার’ না-দেওয়ায়।

ক্লাসঘরে বসে ছাত্রীরা। নেই শিক্ষিকা। —নিজস্ব চিত্র।

ক্লাসঘরে বসে ছাত্রীরা। নেই শিক্ষিকা। —নিজস্ব চিত্র।

প্রকাশ পাল 
জাঙ্গিপাড়া শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:০৮
Share: Save:

সমস্যা মিটতে চলেছে সাগরের মৃত্যুঞ্জয়নগর বালিকা বিদ্যালয়ের। সেখানে শিক্ষিকা নিয়োগের আশ্বাস দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু তাঁদের কী হবে? ভেবে কূল পাচ্ছেন না জাঙ্গিপাড়া ব্লকের ফুরফুরার নারায়ণী বালিকা বিদ্যাল‌য় (উচ্চ মাধ্যমিক) কর্তৃপক্ষ। শিক্ষিকা মাত্র পাঁচ জন। আর পড়ুয়ার সংখ্যা পাঁচশোরও বেশি!

দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরের স্কুলটির একমাত্র শিক্ষিকা বদলি হয়ে অন্য স্কুলে যোগ দিতে পারছিলেন না সভাপতি ‘রিলিজ অর্ডার’ না-দেওয়ায়। সভাপতি মনে করেন, ওই শিক্ষিকা চলে গেলে স্কুল কার্যত অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়বে। মামলা গড়ায় আদালতে। শেষমেশ শিক্ষামন্ত্রীর ওই ঘোষণা। শিক্ষিকার অভাবে ফুরফুরার স্কুলটির পঠনপাঠনও ব্যাহত হচ্ছে।

ছাত্রীরা জানায়, ক্লাসে নির্দিষ্ট রুটিন নেই। পরিস্থিতি বুঝে ক্লাস হয়। শিক্ষিকারা একটি ক্লাসে পড়া দিয়ে অন্য ক্লাসে পড়াতে যান। কোনও শিক্ষিকা ছুটি নি‌লে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। সারাদিনে একটা ক্লাস হল না, এমনও হয়। শিক্ষিকা না-থাকায় হট্টগোল লেগেই থাকে। এই অবস্থায় ছাত্রীসংখ্যা কমছে। অঙ্ক, বিজ্ঞান, ইংরেজির শিক্ষিকা ছাড়াই এ বারে প্রায় ৮০ জন ছাত্রী মাধ্যমিকের জন্য তৈরি হচ্ছে।

প্রধান শিক্ষিকা মৃদুলা হালদার বলেন, ‘‘কয়েক বছর আগে জেলা বিদ্যা‌লয় পরিদর্শকের (ডিআই) দফতরের তরফে আটটি পদে নিয়োগের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরে জানানো হয়। কিন্তু কাজ হয়নি। তিন মাস আগে বর্তমান ডিআই সুব্রতকুমার সেন বিভিন্ন নথিপত্র চেয়ে নিয়োগের ব্যাপারে উপযুক্ত পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন।’’

ডিআই সুব্রতবাবু জানান, ওই স্কুলের সমস্যার কথা জানার পরেই স্কুল সার্ভিস কমিশন এবং শিক্ষা দফতরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। দু’টি পদে নিয়োগের অনুমতি মিলেছে। বিষয়টি অর্থ দফতরে জানানো হয়েছে। সুব্রতবাবু বলেন, ‘‘সমস্যা সমাধানে আমরা সক্রিয়।’’

ফুরফুরা পঞ্চায়েতের রামপাড়ায় স্কু‌লটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৫৮ সালে। প্রথমে পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণি, তার পরে জুনিয়র উচ্চ বিদ্যালয় হয়। ২০১১ সালে মাধ্যমিক স্তরে উন্নীত হয়। শিয়াখা‌লা থেকে জাঙ্গিপাড়া পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় এটাই একমাত্র মেয়েদের স্কুল। আর্থ-সামাজিক দিক থেকে এলাকাটি কার্যত পিছিয়ে পড়া। চল্লিশ শতাংশের বেশি ছাত্রী মুসলিম পরিবারের। তফসিলি জাতিভুক্ত পরিবারের ছাত্রীদের অনুপাতও প্রায় একই।

স্কুল সূত্রের খবর, প্রধান শিক্ষিকা নানা কাজ সামলে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ইংরেজি পড়ান। নবম-দশমের রসায়ন এবং পদার্থবিদ্যা পড়াতেও ভরসা তিনি। বাকি চার শিক্ষিকার মধ্যে এক জন কর্মশিক্ষার, এক জন বাংলার, এক জন ভূগোলের। ইতিহাসের পার্শ্বশিক্ষিকা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াতে পারেন। তাই নবম-দশম শ্রেণিতে ইতিহাস পড়ানোরও কেউ নেই। অঙ্কের একমাত্র শিক্ষিকা তিন বছর এবং জীবন-বিজ্ঞানের একমাত্র শিক্ষিকা সাড়ে চার বছর আগে অবসর নিয়েছেন। তাঁদের বদলে নিয়োগ হয়নি।

মৃদুলাদেবীর কথায়, ‘‘কোনও রকমে সামাল দিচ্ছি। নিয়মিত ক্লাস করাতে পারি না। একটি শ্রেণিতে দুই বা তিনের বেশি পিরিয়ড হয় না। শিক্ষিকার অভাবে মেয়েরা বঞ্চিত হচ্ছে। নিয়োগের জন্য সংশ্লিষ্ট সব জায়গায় দরবার করেছি। এলাকার বিধায়কও চেষ্টা করেছেন।’’

কয়েকজন অভিভাবক মনে করেন, শিক্ষিকারা যথাসাধ্য চেষ্টা করলেও খামতি ঢাকা যাচ্ছে না। এক অভিভাবকের প্রশ্ন, ‘‘অঙ্ক, বিজ্ঞান, ইংরেজির শিক্ষিকা ছাড়া স্কুল চলে? রাজ্যে কন্যাশ্রী প্রকল্প নিয়ে প্রচার চলে, সেখানে শিক্ষিকার অভাবে মেয়েদের পড়া হবে না?’’ বিদ্যালয় পরিচালন সমিতির সদস্য কাজি আফতাবউদ্দিন বলেন, ‘‘আমাদের মেয়েরা পিছিয়ে পড়ছে। সরকার বা স্কুল দফতরের কাছে আমাদের আবেদন, অবিলম্বে শিক্ষিকা নিয়োগ হোক।’’

স্থানীয় বিধায়ক স্নেহাশিস চক্রবর্তীও মানছেন, ওই স্কুলে শিক্ষিকা নিয়োগ জরুরি। তাঁর দাবি, ‘‘অনেক চেষ্টা করেছি। কেন নিয়োগ হচ্ছে না, বুঝতে পারছি না।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jangipara School জাঙ্গিপাড়া
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE