আলোচনা: চায়ের ঠেকে নানা বয়সের মানুষ। নিজস্ব চিত্র
বাগনান: লাল চা তখন টগবগ করে ফুটছে। রাস্তায় একটা-দু’টো বাস, টোটো। ঠান্ডা ঠান্ডা হাওয়া। পরেশের দোকানে জনা বারোর জটলা। দু’এক জনের হাতে খবরের কাগজ। মাঝেমধ্যে খোঁজ চলছে,
‘‘কি, চা হল?’’
প্রাতর্ভ্রমণ সেরে ওই দোকানের বেঞ্চে পা ছড়িয়ে বসলেন কৃষ্ণেন্দু সাঁতরা (ব্যবসায়ী)। চায়ে প্রথম চুমুকু দিয়েই একটা দীর্ঘশ্বাস, ‘‘ধুস, কী যে হল! এখানে বাম-কংগ্রেসের জোট হলে সংখ্যালঘু ভোটের একটা বড় অংশ জোটের দিকে আসত। সেটা হল না।’’
ব্যাস, লেগে গেল ধুন্ধুমার।
পাশে বসা কমল প্রামাণিকও ব্যবসায়ী। কিন্তু তাঁর ভিন্ন মত, ‘‘এ সব বলে লাভ আছে? কংগ্রেস-সিপিএমের দিকে আর সংখ্যালঘু ভোট আছে নাকি? রাজ্যে সংখ্যালঘু ভোটের বেশির ভাগটাই তো এখন তৃণমূলের। এখন সংখ্যালঘুদের মধ্যে বিজেপি-ভীতি কমছে। আমার মনে হয়, তৃণমূলে দেওয়ার পরে বাকি যে সংখ্যালঘু ভোট পড়ে থাকবে তা বিজেপির দিকেই যাবে। বাজি রেখে বলতে পারি, কংগ্রেস-সিপিএম জোট হোক বা না হোক তা ভোটের সামগ্রিক ফলে খুব একটা প্রভাব ফেলবে না। এখানে তৃণমূল সবচেয়ে বেশি আসন পাবে।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
নিখিলেশ ভক্তা (অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক) খবরের কাগজে ডুবে ছিলেন। তবু মাথা তুলে, ‘‘জোট হলে বাম-কংগ্রেস দু’পক্ষেরই সুবিধা হত।’’
পরেশ পাত্র দোকানের ভিতর থেকে বেরিয়ে এসেছেন। চায়ের গ্লাস ধুতে হবে। তিনি নিখিলেশবাবুকে কাটলেন, ‘‘না স্যার! সিপিএম এখন ক্ষয়িষ্ণু। এমনিতেই দলটা উঠে যাবে! কংগ্রেসের সঙ্গে জোট হলেও সিপিএম নিজেকে টিকিয়ে রাখতে পারবে না।’’
অলোক জানা (ঠিকাদার) পরেশদার কথা মানতে পারলাম না। এখনও সিপিএমের ভাল সংগঠন আছে। জোট করলে বরং কংগ্রেসের লাভ হত। কারণ, কংগ্রেসের তো সংগঠন বলে কিছুই নেই।
সঙ্গে সঙ্গে কৃষ্ণেন্দু সাঁতরার প্রতিবাদ, ‘‘কে বলেছে কংগ্রেসের সংগঠন নেই? সারা দেশে ছড়িয়ে আছে কংগ্রেসের সংগঠন। সব রাজ্যে আছে। সিপিএমের সঙ্গে জোট না-করে কংগ্রেস বরং মুখের মতো জবাব দিয়েছে।’’
হাওয়া গরম হচ্ছে। আর একপ্রস্ত চা বসালেন পরেশবাবু।
তর্কে প্রবেশ করলেন মোহন দাস (অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী), দেখো ভাই, প্রশ্নটা হচ্ছে জোট হলে এ রাজ্যে রাজনৈতিক সমীকরণের কোনও পরিবর্তন হত কিনা! দিদি এখানে উন্নয়নমূলক কাজ প্রচুর করেছেন। কোনও অবস্থাতেই সিপিএম-কংগ্রেস জোট করলেও তৃণমূলের কোনও বিপদ হবে বলে আমার মনে হয় না।
মাথা ঝাঁকিয়ে মোহনবাবুকে সমর্থন রতন মাইতির (অবসরপ্রপ্ত সরকারি কর্মী) কন্যাশ্রী তো বিশ্বের সেরা পুরস্কারও পেল।
‘‘তা ঠিক’’— সুর মেলালেন অলোককুমার প্রামাণিক (শিক্ষক), নব ঘড়ুই (ব্যবসায়ী), অলোক জানারা।
আর কোনও আপত্তি উঠল না। ফের চা নিয়ে এলেন পরেশবাবু। আধ ঘণ্টা পার। গ্লাস খালি করে যে যাঁর গন্তব্যে।
বেঞ্চ ফাঁকা। পরেশবাবুর মুখে হাসি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy