বিক্ষোভ: ঘটনার পর অভিযুক্তকে গ্রেফতারের দাবিতে রেল অবরোধ স্থানীয়দের
ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে এক প্রৌঢ়ের আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনাকে ঘিরে সোমবার সকালে সরগরম হল তারকেশ্বরের তালপুর।
মৃতের নাম অশোক ভট্টাচার্য (৫৪)। তিনি এক মহিলা সহকর্মীর শ্লীলতাহানি করেছেন, এমন অভিযোগ উঠেছিল। সেই কারণে দিনকয়েক আগে শাসকদলের এক নেতা দলীয় কার্যালয়ে সালিশি ডেকে অশোকবাবুর থেকে এক লক্ষ টাকা চান বলে অভিযোগ উঠেছে। পুরো টাকা দিতে পারেননি অশোকবাবু। সেই কারণেই তিনি এ দিন আত্মঘাতী হন বলে থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন মৃতের স্ত্রী কুন্তলিকাদেবী। মহারাজ নাগ নামে তৃণমূলের ওই যুবনেতাকে গ্রেফতারের দাবিতে প্রায় এক ঘণ্টা তালপুর স্টেশন অবরোধ করেন গ্রামবাসী। পুলিশ গিয়ে গ্রামবাসীদের বুঝিয়ে অবরোধ তোলে। মহারাজ অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেন।
অশোকবাবুর বাড়ি তালপুরেই। চাঁপাডাঙায় একটি ওষুধের দোকানে তিনি প্রায় তিন দশক ধরে কাজ করছিলেন। পয়লা বৈশাখের রাতে ঠান্ডা পানীয়ের সঙ্গে ওষুধ মিশিয়ে খাইয়ে অশোকবাবু এক মহিলা সহকর্মীর শ্লীলতাহানি করেন বলে অভিযোগ ওঠে। কিন্তু সেই অভিযোগ থানা-পুলিশ পর্যন্ত যায়নি। এর দিন দুয়েক পরেই তৃণমূল নেতা মহারাজ তালপুরে দলীয় কার্যালয়ে এ নিয়ে সালিশি ডাকেন বলে দাবি করেছে তৃণমূলেরই একটি সূত্র।
থানায় অভিযোগ জানিয়ে বেরিয়ে আসছেন অশোকবাবুর স্ত্রী ও ছেলে
কুন্তলিকাদেবীর অভিযোগ, ‘‘মহারাজবাবু আমার স্বামীর কাছ থেকে এক লক্ষ টাকা চান। তাঁকে দিয়ে জোর করে শ্লীলতাহানির কথা কবুল করিয়ে মোবাইলে রেকর্ডিং করা হয়। টাকা না দিলে সেই রেকর্ডিং হোয়াট্সঅ্যাপে ছড়িয়ে দেওয়ারও হুমকি দেওয়া হয়েছিল।’’ তাঁর দাবি, সম্মানহানির ভয়ে স্বামী ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু বাকি টাকা জোগাড় করতে পারেননি। কুন্তলিকাদেবী বলেন, ‘‘টাকা জোগাড় করতে না পেরেই তিনি আত্মঘাতী হলেন।’’ মৃতের আত্মীয় মানস ভট্টাচার্য বলেন, “সকালেই টাকার জন্য আমাকে ফোন করেছিলেন অশোকবাবু। সমস্যা থাকায় দিতে পারিনি। পরে শুনি এই কাণ্ড!’’
অশোকবাবু গ্রামে পুরোহিতেরও কাজ করেন। গ্রামবাসীদের কেউই তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা শ্লীলতাহানির অভিযোগ মানেননি। তাঁরা দুষছেন মহারাজকেই। গ্রামবাসীরা হুমকি দিয়েছেন, ওই নেতাকে পুলিশ গ্রেফতার না করলে আজ, মঙ্গলবার ফের তাঁরা ট্রেন অবরোধ করবেন। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, অভিযুক্ত ওই নেতার বিরুদ্ধে কলেজে ছাত্র নির্বাচনে বোমাবাজি-সহ নানা অভিযোগ রয়েছে। মহারাজের বিরুদ্ধে এ দিন নানা অভিযোগ তুলে সরব হন গ্রামবাসীরা। এমনকী, শ্লীলতাহানির অভিযোগ থানা-পুলিশের কাছে না গিয়ে কী ভাবে তৃণমূল নেতার কাছে গেল, সেই প্রশ্নও তুলছেন তাঁরা।
অশোকবাবু যে দোকানে কাজ করতেন, তার মালিক কাশীনাথ সামন্ত বলেন, “অশোকবাবুর বিরুদ্ধে কখনও কোনও অভিযোগ ওঠেনি। আমার ছেলে তিন বছর আগে মহারাজের জন্যই আত্মঘাতী হয়েছিল। সেদিন পুত্রশোকে না পারলেও এ বার নিজে আমি তারকেশ্বর থানার মহারাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছি।”
ওই নেতার বিরুদ্ধে গ্রামবাসীদের ক্ষোভের কথা কার্যত মেনে নিয়েছেন তারকেশ্বরের উপ-পুরপ্রধান তৃণমূলের উত্তম কুণ্ডু। তিনি বলেন, ‘‘দলের একাংশ এইসব ছেলেদের মাথায় তুলে নাচছে। সেই কারণেই দলের বদনাম হচ্ছে। ও যে অন্যায় করেছে তার শাস্তি হওয়া উচিত।”
কোনও অভিযোগই মানেননি মহারাজ। তাঁর দাবি, ‘‘ঘটনায় আমি কোনও ভাবে যুক্ত নই। ওই প্রৌঢ়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠায় দোকান-মালিক তাঁকে কাজ থেকে সরিয়ে দেন। অপমানে উনি আত্মাঘাতী হতে পারেন।” টাকা নেওয়া বা সালিশি সভার প্রশ্নে তাঁর জবাব, ‘‘বিজেপি এবং ওদের সঙ্গে থাকা কিছ দুষ্কৃতী আমার বদনামের জন্য রটাচ্ছে।”
(ছবি: দীপঙ্কর দে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy