Advertisement
E-Paper

টয়লেট তৈরির লড়াইয়ে ৪২ বছরেও বিয়ে করেননি ইনি

স্ত্রী জয়ার প্রতিবাদের সমর্থনেই লড়াইয়ে নেমেছিলেন কেশব। সনৎ একাই। পক্ষে আদালতের রায় থাকা সত্ত্বেও!    

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:৩২
নিরুপায়: মাঠের পথে। ছবি: দীপঙ্কর দে

নিরুপায়: মাঠের পথে। ছবি: দীপঙ্কর দে

কেশব পেরেছিলেন। সনৎ এখনও লড়ছেন!

স্ত্রী জয়ার প্রতিবাদের সমর্থনেই লড়াইয়ে নেমেছিলেন কেশব। সনৎ একাই। পক্ষে আদালতের রায় থাকা সত্ত্বেও!

‘‘প্রেমিকরা তো তাঁদের প্রেমিকার জন্য তাজমহলও তৈরি করেছেন, আর আমরা একটা শৌচালয় বানাতে পারব না?’’— ‘টয়লেট: এক প্রেমকথা’ ছবিতে এ কথা শোনা গিয়েছিল নায়ক অক্ষয় কুমার ওরফে কেশব শর্মার মুখে। বাস্তবের সনৎ মাইতি বাড়িতে ‘টয়লেট’ আর ‘প্রেমকথা’ এখনও মেলাতে পারলেন না। এই ৪২ বছর বয়সেও তিনি বিয়ে করতে পারছেন না। শৌচালয় না-থাকায় তাঁর বৃদ্ধা মাকে আজও প্রবল শীতের রাতে মাঠে যেতে হয়।

বাড়ির পিছনের পৈতৃক জমিতে শৌচালয়-সহ স্নানাগার তৈরির জন্য সেই ২০০৭ সাল থেকে চেষ্টা করে চলেছেন ‘নির্মল জেলা’ হুগলির তারকেশ্বরের গৌরীবাটী গ্রামের সনৎ। দিল্লিতে সোনা-রুপোর কাজ করা যুবকটি চেয়েছিলেন বাড়িতে শৌচালয় বানিয়ে বিয়ে করতে। তাঁর মা জয়ন্তীদেবীর কথায়, ‘‘চেয়েছিলাম শৌচাগার করে ছেলের বিয়ে দেব। তাতে আমার আর নতুন বৌমার ভাল হবে। আজকের দিনে বাড়িতে পায়খানা না-থাকলে কেউ মেয়ে দেবে?’’

কোথায় বাধা?

ওই পরিবারের অভিযোগ, তাঁদের পরিকল্পনার কথা জানার পরেও রাস্তা তৈরির জন্য স্থানীয় পঞ্চায়েত জমি নিয়ে নেয়। প্রশাসনের নানা মহলে আবেদনেও কাজ না-হওয়ায় তাঁরা ২০১১ সালে আদালতের দ্বারস্থ হন। ২০১৩ সালে কলকাতা হাইকোর্ট জেলা প্রশাসনকে যত দ্রুত সম্ভব সনৎদের বাড়িতে শৌচালয় নির্মাণে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়। কিন্তু তার পরেও পাঁচ বছর পার। সনৎ এখন চন্দননগরের ‘আইনি সহায়তা কেন্দ্র’-এর শরণাপন্ন হয়েছেন।

সনতের ক্ষোভ, ‘‘গ্রামে রাস্তা হবে, ভাল কথা। কিন্তু জোর করে আমার জমিতে কেন? আশা করেছিলাম, হাইকোর্টের কথা প্রশাসন শুনবে। কিন্তু আইনের শাসন রইল কোথায়? আমি বিয়ে করতে পারলাম না। মায়ের কষ্ট তো আরও বেশি।’’ ‘আইনি সহায়তা কেন্দ্র’-এর কর্ণধার বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় গোটা ঘটনায় অবাক। তিনি বলেন, ‘‘নির্মল জেলায় এটা একটা কালো দাগ। সভ্য সমাজে এ সব হয়? যেখানে হাইকোর্ট সনৎবাবুর পক্ষে রায় দিচ্ছে! পঞ্চায়েত, প্রশাসন একবার দেখল না। তাজ্জব কথা!’’

পড়শিদের একাংশের অবশ্য দাবি, সনৎরা নিয়মমতো জায়গা ছেড়ে বাড়ি না-করাতেই সমস্যা। যদিও সনৎ অভিযোগ মানেননি। ভাই সঞ্জয়কে নিয়ে কর্মসূত্রে তিনি বছরের বেশির ভাগ সময়ে দিল্লিতেই থাকেন। গত মাসে ফিরেছেন। তিনি বলেন, ‘‘ডিসেম্বরেও পঞ্চায়েতে গিয়ে অনুরোধ করলাম। তবু রাস্তা ঢালাই হয়ে গেল। শৌচালয় কোথায় করব?’’

কী বলছে প্রশাসন?

সংশ্লিষ্ট সন্তোষপুর পঞ্চায়েতের প্রধান স্বরূপ ঘোষ বলেন, ‘‘দায়িত্বে নতুন এসেছি। আগে কী হয়েছে জানি না। দ্রুত সমস্যা মেটাব।’’ তারকেশ্বরের বিডিও জয়গোপাল দাস বলেন, ‘‘আমি নিজেও চাইছি ওঁদের সমস্যা মিটুক। ওঁরা কাগজপত্র নিয়ে এলে প্রধানকে ডেকে আমি সমস্যা মিটিয়ে দেব।’’ সনৎদের সমস্য়া মেটানোর আশ্বাস দিয়েছেন জেলা সভাধিপতি মেহবুব রহমানও।

সিনেমাতে নড়ে বসেছিল সরকার। বাস্তবেও সে ইঙ্গিত মিলছে। এখন সময়ের অপেক্ষা।

Open Defication Toile Land Panchayat
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy