উত্তরপাড়ার এক হোটেলে নোটিস দিচ্ছেন পুরপ্রধান। ছবি: দীপঙ্কর দে।
তাঁরা হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন ঠিকই। কিন্তু সেটাই কি যথাযথ ব্যবস্থা?
কলকাতায় ভাগাড়-কাণ্ড সামনে আসার পরে জেলায় জেলায় হোটেল-রেস্তরাঁয় হানা দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট পুরসভার কর্তারা। হুগলির বিভিন্ন পুর এলাকাতেও গত ক’দিনে ওই অভিযান হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে রেস্তরাঁ থেকে পুর কর্তৃপক্ষ তৈরি খাবার বাজেয়াপ্ত করেছেন। কোথাও আবার নোটিস লটকে রেস্তরাঁ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বাসি-পচা মাংস রাখার অভিযোগে। কিন্তু এতেই কি টনক নড়বে হোটেল-রেস্তরাঁ মালিকদের? উঠছে প্রশ্ন।
হুগলিতে গঙ্গাপাড়ে ন’টি এবং গ্রামীণ এলাকায় তিনটি পুরসভা রয়েছে। বেশির ভাগ পুরসভার কর্তারাই মানছেন, রান্না করা বা কাঁচা খাবারের মান যথাযথ ভাবে যাচাইয়ের কোনও পরিকাঠামো তাঁদের নেই। কোনও পুরসভার নিজস্ব ল্যাবরেটরি নেই। নেই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোনও বিশেষজ্ঞ অফিসার। অনেক পুরসভার ‘স্যানিটরি ইনস্পেক্টর’-এর ওই কাজে প্রশিক্ষণই নেই। বহু আগে প্রতিটি পুরসভায় একজন করে ‘ফুড ইস্পেক্টর’ থাকতেন। এখন সেই পদের এখন অবলুপ্তি ঘটেছে। জেলায় এক জন ‘ফুড ইন্সপেক্টর’ রয়েছেন। কিন্তু তিনি স্বাস্থ্য দফতরের।
উত্তরপাড়ার পুরপ্রধান দিলীপ যাদব মানছেন, ‘‘পুর কর্তৃপক্ষের আসলে ভয় দেখানো ছাড়া আর কিছুই করার নেই। আমরা বড়জোর বলতে পারি ঠিকঠাক খাবার দাও, না হলে ব্যবস্থা নেব। যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকাঠামো পুরসভার হাতে কোথায়? রেস্তরাঁ ‘সিল’ করা হলেও বিষয়টি আদালতে গড়ালে আমার কিছু প্রমাণ করব কী করে?’’
আরামবাগের পুরপ্রধান স্বপন নন্দী এলাকার মাংসের দোকানগুলিতে কড়া নজরদারির কথা জানিয়েছেন বৃহস্পতিবার। তিনি বলেন, ‘‘নজরদারি ছাড়া আমাদের আর কিছু করার নেই। এলাকার খাসির মাংসের দোকানগুলিতে যথাযথ মাংস যাতে বিক্রি হয়, সে জন্য পুরসভা ‘স্ট্যাম্প’ চালু করছে। ‘স্ট্যাম্প’ থাকা খাসিই বিক্রি করা যাবে। আগে পুর এলাকায় সেই ব্যবস্থা ছিল। মাঝে উঠে গিয়েছিল। ফের তা চালু হবে।’’ শুধুমাত্র নজরদারির কথা বলেছেন আরও অনেক পুরপ্রধানও।
হোটেল-রেস্তরাঁর খাবারের মান পরীক্ষায় একদিকে পুরসভার নিজস্ব কোনও পরিকাঠামো নেই, অন্যদিকে ওই কাজে জেলার স্বাস্থ্য দফতরকেও যুক্ত করা হয়নি। ফলে, পুর এলাকাগুলির হোটেল-রেস্তরাঁয় হানাদারি শেষ বিচারে কতটা ফলপ্রসূ হবে, এ প্রশ্ন বহু সাধারণ মানুষেরই।
জেলার এক পুরসভার চেয়ারম্যান ইন-কাউন্সিল (স্বাস্থ্য) বলেন, ‘‘পুর এলাকার হোটেল-রেস্তরাঁর বড়জোর একটি করে ট্রেড লাইসেন্স আছে। এমন বহু রেস্তরাঁ-হোটেল রয়েছে, যাদের সেটুকুও নেই। কিন্তু দিব্যি ব্যবসা করছে। মানুষের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে আমাদের অভিযানে নামতে হয়েছে। কিন্তু সব জায়গায় সারা বছর নজরদারিও সম্ভব নয়।’’
মন্দির পাড়া-সহ তারকেশ্বরে অনন্ত একশো হোটেল-রেস্তরাঁ রয়েছে। প্রতিদিন হাজার হাজার পুণ্যার্থী এ শহরে আসেন। এখানে পুরসভার নজরদারি চালানোর মতো পরিকাঠামোও নেই বলে সাধারণ মানুষের অভিযোগ।
এক কাউন্সিলার বলেন, ‘‘কলকাতায় ভাগাড়ের মাংস নিয়ে এত কাণ্ড, আর আমাদের গ্রামীণ এলাকার পুরসভার একটা ভাগাড়ও নেই। মানুষ যেখানে-সেখানে মরা পশু ফেলে যাচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy