Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

দুই শিক্ষিকার দ্বন্দ্বে বন্ধ মিড-ডে মিল

পদ একটাই। টিচার ইনচার্জ। অথচ দায়িত্ব পালন করছেন দু’জন। আর তা নিয়েই বেধেছে গোলমাল। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে দুই শিক্ষিকার বিবাদে বন্ধ হয়ে গিয়েছে স্কুলের মিড ডে মিল ও বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজ। উলুবেড়িয়া ১ ব্লকের হাটগাছা ২ পঞ্চায়েতের বাউড়িয়া গোপীনাথ মণ্ডল গালর্স হাইস্কুলে এই ঘটনায় মিড ডে মিল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পড়ুয়ারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাউড়িয়া শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৫ ০১:১৮
Share: Save:

পদ একটাই। টিচার ইনচার্জ। অথচ দায়িত্ব পালন করছেন দু’জন। আর তা নিয়েই বেধেছে গোলমাল। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে দুই শিক্ষিকার বিবাদে বন্ধ হয়ে গিয়েছে স্কুলের মিড ডে মিল ও বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজ। উলুবেড়িয়া ১ ব্লকের হাটগাছা ২ পঞ্চায়েতের বাউড়িয়া গোপীনাথ মণ্ডল গালর্স হাইস্কুলে এই ঘটনায় মিড ডে মিল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পড়ুয়ারা। উদ্বিগ্ন অভিভাবকেরা। স্কুল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জেলা স্কুল শিক্ষা দফতর ও ব্লক প্রশাসনকে জানিয়েছেন।

স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে স্কুলে ২৫৫ জন ছাত্রী রয়েছে। শিক্ষিকা ৮ জন। তাঁদের মধ্যে দু’জন শিক্ষিকা আলাদা আলাদা করে নিজেদের স্কুলের টিচার ইনচার্জ বলে দাবি করছেন। ফলে প্রশাসনিক কাজ আটকে গিয়েছে। বন্ধ হয়ে গিয়েছে মিড ডে মিল। উলুবেড়িয়া ১-এর বি়ডিও মৌলি সান্যাল বলেন, ‘‘ওই স্কুলের আসল টিচার ইনচার্জ কে সেটাই স্পষ্ট নয়। মিড ডে মিল নিয়ে কয়েক বার বৈঠক ডেকেছিলাম। সেখানে দু’জন শিক্ষিকাই নিজেদের টিচার ইনচার্জ বলে দাবি করেন। দু’জনেই জানান, তাঁরা মিড ডে মিলের দায়িত্ব নিতে চান। বিষয়টি নিয়ে স্কুলের সব শিক্ষিকাদের নিয়ে বসা হয়েছিল। কিন্তু সমাধান মেলেনি। তাই বাধ্য হয়ে স্কুলে মিড ডে মিল বন্ধ রাখা হয়েছে।’’ একই বক্তব্য, হাওড়া জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) তাপস বিশ্বাসের। স্কুল সূত্রে খবর, বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা হয়েছে। আদালত শিক্ষা দফতরকে বিষয়টি মেটানোর নির্দেশ দিয়েছে।

স্কুল ও ব্লক প্রশাসন সূত্রে খবর, প্রধান শিক্ষিকার পদ ফাঁকা থাকায় ২০১২ সালের মার্চ মাস থেকে স্কুলের টিচার ইনচার্জের দায়িত্বে ছিলেন স্মিতা কর। ২০১৪ সালের ৩ মার্চ থেকে ২২ নভেম্বর অবধি তিনি অসুস্থতার জন্য ছুটিতে ছিলেন। সেই সময় তিনি রিনা কোলে নামে এক শিক্ষিকাকে টিচার ইনচার্জের দায়িত্ব দিয়ে যান। কিন্তু শিক্ষিকাদের একাংশ রিনাদেবীকে সেই পদে মানতে চাননি। ২০১৪-র সেপ্টেম্বর মাসে তাঁরা উলুবেড়িয়ায় সহ স্কুল পরিদর্শকের (এডিআই) দফতরে নতুন টিচার ইনচার্জ নিয়োগ করার আবেদন জানান। এডিআইয়ের সম্মতিতে সেই মাসেই নতুন টিচার ইনচার্জ হন মৌসুমী জানা। ইতিমধ্যেই স্মিতা দেবী ছুটি কাটিয়ে স্কুলে যোগ দেন। তিনিও টিচার ইনচার্জ হিসেবে কাজ করতে থাকেন। এর ফলে মৌসুমীদেবীর সঙ্গে তাঁর বিরোধ শুরু হয়। মিড ডে মিল, ছাত্রীদের বিভিন্ন ফর্ম ফিল আপ-সহ বিভিন্ন বিষয়ে দু’জনেই কাজ করতে থাকেন। মৌসুমীদেবী আদালতে যান। মৌসুমীদেবীর দাবি, সহ স্কুল শিক্ষা আধিকারিক এবং স্কুলের পুরনো পরিচালন কমিটি তাঁকে টিচার ইনচার্জ হিসেবে নিয়োগ করেছিল। আদালত তাঁর পক্ষেই রায় দিয়েছে। তাই তিনি দায়িত্ব পালন করছেন। এ বিষয়ে জানতে ফোন করা হলে সহ স্কুল পরিদর্শক ফোন ধরেননি।

যদিও স্মিতাদেবীর পাল্টা দাবি, ‘‘আমিই বর্তমানে স্কুলের টিচার ইনচার্জ। কারণ বিভিন্ন সময়ে স্কুল শিক্ষা দফতর থেকে আমার কাছে স্কুলের বিভিন্ন প্রশাসনিক বিষয় জানতে চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি নিয়োগের ক্ষেত্রেও আমাকেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। আমিই সভাপতি নিয়োগ করেছি।’’

ব্লক প্রশাসনের এক কর্তা জানান, টিচার ইনচার্জ আসলে কে সেটা স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত ওই স্কুলে মিড ডে মিলের চাল-সহ অন্যান্য সামগ্রী পাঠানো সম্ভব নয়। এই অবস্থায় বঞ্চিত হচ্ছেন ছাত্রীরা।

অভিভাবকদের অভিযোগ, স্কুলের প্রশাসনিক সিদ্ধান্তহীনতার দায় ছাত্রীরা বইবে কেন?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE