Advertisement
E-Paper

কে ঠেকাবে দুষ্কৃতীদের দাপট, প্রশ্ন

চার বছরে হুগলিতে পুলিশ সুপার বদলেছেন চার জন। তন্ময় রায়চৌধুরী থেকে সুনীল সিংহ, তার পরে প্রবীণ ত্রিপাঠী হয়ে এখন সুকেশ জৈন। কিন্তু জেলায় দুষ্কৃতী-তাণ্ডবে লাগাম পরল কই?

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৭ ০১:৪৯
আতঙ্ক: চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গুলিতে জখম বিশাল দাস (খালি গায়ে) এবং দিগ্বিজয় সিংহ(নীচে), জখম অংশুমান মাল। নিজস্ব চিত্র

আতঙ্ক: চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গুলিতে জখম বিশাল দাস (খালি গায়ে) এবং দিগ্বিজয় সিংহ(নীচে), জখম অংশুমান মাল। নিজস্ব চিত্র

চার বছরে হুগলিতে পুলিশ সুপার বদলেছেন চার জন। তন্ময় রায়চৌধুরী থেকে সুনীল সিংহ, তার পরে প্রবীণ ত্রিপাঠী হয়ে এখন সুকেশ জৈন। কিন্তু জেলায় দুষ্কৃতী-তাণ্ডবে লাগাম পরল কই?

কখনও শ্রীরামপুর, কখনও চন্দননগর, কখনও ব্যান্ডেল বা চুঁচুড়া— লেগেই রয়েছে খুন-জখম, তোলাবাজি, চুরি-ছিনতাই। মঙ্গলবার রাতে গুপ্তিপাড়ার ফতেপুরে যে ভাবে সিনেমার কায়দায় ‘গ্যাং-ওয়ার’ হল, তাতে ফের পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন উঠে গেল। অনেকেই বলছেন, জেলায় এখন পুলিশের থেকে দুষ্কৃতীদের হাতে অস্ত্র বেশি! তাই সেই অস্ত্রের ঝনঝনানিও বাড়ছে। পুলিশ সুপারেরা দায়িত্বের মেয়াদ পার করে ভাল ‘পোস্টিং’ নিয়ে চলে যাচ্ছেন। কিন্তু দুষ্কৃতী-তাণ্ডবে লাগাম পড়ছে না।

ফতেপুর থেকে ১২টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৩০ রাউন্ড গুলি এবং চারটি তাজা বোমা উদ্ধার করেছে পুলিশ। আগ্নেয়াস্ত্রগুলির মধ্যে দু’টি নাইন এমএম এবং বাকিগুলি মুঙ্গেরি ওয়ান শটার বলে পুলিশ জানিয়েছে। পুলিশের দাবি, জেরায় দুই ধৃত কবুল করেছে, চুঁচুড়ায় দুষ্কৃতী বিশাল দাসকে খুনের জন্য এক লক্ষ টাকার ‘সুপারি’ পেয়েছিল তারা। বস্তুত, চুঁচুড়া এবং সংলগ্ন এলাকায় তোলাবাজির দখল কার হাতে থাকবে তা নিয়ে বিশালের সঙ্গে আর এক দুষ্কৃতী টোটন বিশ্বাসের দলবলের লড়াই দীর্ঘদিনের। এত দিন তা মূলত চুঁচুড়া এবং আশপাশের এলাকাতেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু মঙ্গলবার সেই ‘লড়াই’ যে ভাবে বলাগড় পর্যন্ত পৌঁছে গেল তা নিয়েই শঙ্কিত সাধারণ মানুষ।

কী ভাবে এতটা বেপরোয়া হয়ে উঠছে দুষ্কৃতীরা?

জেলা পুলিশেরই একটি সূত্রের আক্ষেপ, কার বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে? সর্বত্র শাসকদলের নেতাদের দাপট। কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলেই নেতাদের ফোন চলে আসে। শুধু চুঁচুড়াতেই কিছুদিন আগেই প্রকাশ্যে মদ খাওয়ার জন্য কিছু তরুণকে ধরা হলে তাঁদের ছাড়ানোর জন্য এক নেতা থানায় ফোন করেছিলেন। মিছিলও হয়েছিল। এই সব ক্ষেত্রে পুলিশ কী করবে?

দুষ্কৃতীদের ফেলে যাওয়া গাড়ি। নিজস্ব চিত্র

জেলা পুলিশের এক প্রবীণ অফিসারের কথায়, ‘‘চুঁচুড়া এবং সংলগ্ন এলাকায় দুষ্কৃতীরা মূলত দুই তৃণমূল নেতার ছত্রছায়ায় রয়েছে। তাই তাদের পোয়াবারো।’’ স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ওই নেতাদের এক জন জেলার এক মন্ত্রী, অন্য জন বিধায়ক। দুই দুষ্কৃতীর দলবল আবার মাঝেমধ্যেই এলাকা ও দল বদলাচ্ছে। সেই সব দলবলকে আবার নিয়ন্ত্রণ করছেন মন্ত্রী-বিধায়কের ঘনিষ্ঠেরা।

বিধায়ক বা মন্ত্রী— কেউই দুষ্কৃতীদের নিজেদের আশ্রয়ে রাখার কথা মানেননি। তাঁদের দাবি, দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে পুলিশকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনও ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ হয় না।

কিন্তু সংবাদমাধ্যমে নেতারা এই অভয়-বাণী দিলেও বাস্তব যে অন্য কথা বলে, তা ঠারঠোরে মানছেন পুলিশ কর্তাদের একাংশ। তাঁদের মতে, কাঁচা টাকার বখরার জন্যই দুষ্কৃতীরা রাস্তায় নামছে। মদত দিচ্ছেন নেতারা। ‘ধীরে চলো’ নীতি নিতে হচ্ছে পুলিশকে।

আবহ যেখানে এই, সেখানে দুষ্কৃতী-তাণ্ডবে লাগাম পরাবে কে?

Miscreant rampage Hooghly
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy